X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়ে উন্নয়ন হলেও থামেনি সংঘাত

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:২৭আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:৩১

১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সন্তু লারমার অস্ত্র সমর্পণ (ফাইল ছবি) আজ ২ ডিসেম্বর, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২২তম বর্ষপূর্তি। ১৯৯৭ সালের এ দিন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তির পর প্রাথমিকভাবে শান্তি বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। সরকারও তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। এতে সাময়িকভাবে পাহাড়ে রক্তের খেলা, অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ হয়। সেখানকার অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে তোলার দিকে মনোযোগ দেয় সরকার। কিন্তু বছর যেতে না যেতে প্রতিষ্ঠা হয় চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
এরপর থেকে শুরু পাহাড়ে দুই আঞ্চলিক দলের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। থেমে থেমে চলে দুই সংগঠনের হত্যা-পাল্টা হত্যা ও সংঘর্ষ। ২০০১ সালে তিন বিদেশিকে অপহরণের মাধ্যমে শুরু হয় পাহাড়ে অপহরণ বাণিজ্য। পরে ২০০৭ সালে জনসংহতি সমিতি থেকে বের হয়ে ২০১০ সালে আরেক আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালে ইউপিডিএফ থেকে বের হয়ে আরেকটি সংগঠনের জন্ম হয় যা ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে পরিচিত। এরপর বিভিন্ন সময় চার পক্ষের কর্মী, সমর্থকদের হত্যার মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক হিসেবে, গত এক বছরে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে পাহাড়ে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে পাহাড়ে আপাত দৃষ্টিতে চার পক্ষের কর্মী, সমর্থকদের সংঘর্ষ ও হত্যা চললেও ১৯৯৭ সালের আগের চাইতে অনেকটা শান্তি স্থাপিত হয়। এ সময় পাহাড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পায়। বিশ্ববাসীর কাছে পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটনও সুনাম অর্জন করে। এ সময় পাহাড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বেড়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। জেলার তিনটি বেসরকারি কলেজকে সরকারিকরণ করা হয়। পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা হয়েছে। চুক্তির আগে পাহাড়ে দুর্গম অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম তেমন একটা না থাকলেও বর্তমানে পুরো জেলায় শতাধিক কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে।
সরকার এসব উন্নয়নমূলক কাজ করলেও চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য সরকারকে দোষারোপ করে জেএসএস। ধারা বাস্তবায়ন নিয়ে চলছে দুই পক্ষের তর্কযুদ্ধ। এই ২২ বছর জেএসএস চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনে রাজপথে বেশিরভাগ সময় সক্রিয় ছিল। পক্ষান্তরে ইউপিডিএফ সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ পার্বত্য অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করে গেছে। অন্যদিকে জেএসএস (সংস্কারপন্থী) পক্ষও চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করেছে। তবে চুক্তি নিয়ে তেমন কোনও কথা এখনও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর তরফ থেকে শোনা যায়নি।
জেলায় স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার জানান, বর্তমানে জেলায় ৯৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। আরও ২৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর অপেক্ষায় রয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, চুক্তির আগে জেলায় ১২ হাজার পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় থাকলেও বর্তমানে ৪৬ হাজার পরিবার বিদ্যুতের সুবিধা গ্রহণ করছে। দুর্গম বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়িতে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট বেলায়েত হোসেন বলেন, চুক্তি পরবর্তী সময়ে পাহাড়ে অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে উঠেছে। ব্যক্তির পাশাপাশি সরকারের আয়ও ১০ গুণ বেড়েছে।
এসব বিষয়ে প্রবীণ সংবাদকর্মী সুনীল কান্তি দে বলেন, চুক্তির পর পার্বত্য অঞ্চলে সকলের মাঝে আর্থিক সচ্ছলতা বিরাজ করার কথা ছিল। সেই লক্ষ্যে আমরা পুরোপুরি পৌঁছাতে পারিনি। তবে অনেক উন্নয়ন হয়েছে পাহাড়ে।
কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কতিপয় ব্যক্তির উন্নতিতে অর্থনৈতিক সচলতা এসেছে- এমনটা মানতে নারাজ চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। তিনি বলেন, চুক্তির আগে গ্রামের মানুষগুলো কেমন ছিল আর এখন সেই গ্রামের মানুষ কেমন আছে তা দেখলেই বোঝা যাবে পাহাড়ে কী পরিমাণ অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটেছে। আবার রাস্তাঘাট, বড় বড় দালানকোঠা হয়েছে বলেই বলা যাবে না অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে।
এসব বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন চাই। চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পার্বত্য এলাকায় সমস্যা সমাধান হবে না। সমাধানের লক্ষ্যেই তো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল কিন্তু ২২ বছর হতে চললেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হয়নি। সুতরাং মৌলিক বিষয়গুলো যতদিন বাস্তবায়ন না হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা বলতে পারি না পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যার সমাধান হয়েছে।

আরও পড়ুন: চুক্তির ২২ বছরেও ফেরেনি আস্থা ও বিশ্বাস

               সংঘাত থামছে না পাহাড়ে, রাঙামাটিতেই ১১ মাসে ২২ খুন

/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ