X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের বিরুদ্ধে পেটানোর অভিযোগ ছাত্র ইউনিয়ন নেতার, ম্যাজিস্ট্রেট বললেন 'হাতাহাতি'

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
১৬ মে ২০২০, ১৬:৫৫আপডেট : ১৬ মে ২০২০, ২৩:৫৩

আবদুল করিম

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসম্পাদক আবদুল করিমকে পুলিশ মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ঘটনার পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে দুইশ টাকা জরিমানা করেন ম্যাজিস্ট্রেট। বৃহস্পতিবার (১৪ মে) দুপুরে সখীপুর উপজেলার কচুয়া বাজারে এই ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে শনিবার (১৬ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সখীপুরের কচুয়া বাজারে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

আবদুল করিম বলেন, 'করোনার এই সংকটে আমার নিজের এলাকার মানুষকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও করোনা প্রতিরোধে সচেতন করে যাচ্ছি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কচুয়া বাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য সতর্কবার্তা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ঝুলানোর সময় এএসআই কবির হোসেন আমাকে বাধা দেয়। এসময় অকথ্যভাষায় গালি দিয়ে আমার মোটরসাইকেলের চাবি দিতে বলে। প্রতিবাদ করলে আমাকে মারধর করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এগিয়ে এসে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চায়। এসময় আমার বিরুদ্ধে সরকারিকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে জরিমানা হিসেবে এক লাখ টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে আমাকে দুইশ টাকা জরিমানা করা হয়।'

প্রত্যক্ষদর্শী বজলুর রহমান বিজয় বলেন, ‘আমি নিজেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সতর্কবার্তা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ঝোলানোর কাজ করছিলাম। কিছু প্ল্যাকার্ড লাগানো হয়েছে। কিছু কম পরায় ফটোকপি করার জন্য আবদুল করিম মোটরসাইকেল নিয়ে যাবেন, এমন সময় এক পুলিশ সদস্য তাকে বলে এই দাঁড়া। পরে তিনি দাঁড়ান। তখন আবদুল করিমের কাছে ওই পুলিশ সদস্য মোটরসাইকেলের চাবি চায়। তখন আবদুল করিম বলেন, ভদ্রভাষায় কথা বলেন। তখন ওই পুলিশ আবদুল করিমকে ঘুষি দেয়। আবদুল করিম বলেন, আপনি আমার গায়ে হাত তোলেন কেন। তখন তার শার্টের কলারে ধরে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যায়। তখন ম্যাজিস্ট্রেট এক্টু দূরে ছিলেন।‘
তিনি আরও বলেন, ‘আবদুল করিম বারবার বলছে যে জায়গায় বলা হয়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সে জায়গায় আমার ওপর হাত তুললেন কীভাবে। পরে ম্যাজিস্ট্রেট আসার পর আবদুল করিম বলেন, আমি দেশের একজন নাগরিক। আমি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কাজ করতেছি। সে জায়গা থেকে পুলিশ আমার শরীরে কোনও আইনের বলে হাত তুলে। তখন ম্যাজিস্ট্রেট রেগে গিয়ে বলছিলেন, তুমি আমাকে আইন শেখাও, তুমি কে? পরে আবদুল করিম তার পরিচয় দিয়ে বলে আমার প্রশ্নের উত্তর চাই। এসিল্যান্ড তখন বলেন, তোমার কাছে আমার উত্তর দিতে হবে। তখন এসিল্যান্ড বলেন তুমি নিয়ম ভঙ্গ করছো। পুলিশের বিষয়টি কাটিয়ে নিয়ে তখন আবদুল করিমকে হুমকি-ধামকি দিয়ে এসিল্যান্ড বলে তুমি তর্ক করো, তুমি কে? তোমার এক লাখ টাকা জরিমানা করবো। পরে এসিল্যান্ড আবদুল করিমকে দুইশ টাকা জরিমানা করেন।‘

সখীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমীর হোসেন বলেন, 'ঘটনাটি আমার জানা নেই। মোবাইল কোর্টের কোনও দায় পুলিশের ওপর আসবে না। দায়িত্বটা ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর থাকে।'

সখীপুরে প্রতিবাদী মানববন্ধন

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বলেন, 'নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান বাদে সব দোকান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী নির্দেশনা অমান্য করে কচুয়া বাজারে দোকান খোলা রাখে। খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। আমি গাড়িতে থাকা অবস্থায় এক পুলিশ সদস্য গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে কাপড়ের দোকানগুলোর চাবি সংগ্রহ করছিল। একপর্যায়ে আবদুল করিমের বড় ভাইয়ের কাপড়ের দোকানের চাবি চাইলে পুলিশ সদস্য ও আবদুল করিমের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।'

তিনি আরও বলেন, 'পরে আমি গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে তাদের বিরোধ বন্ধ করি। সামাজিক দূরত্ব নিয়ে কাজ করার সময় আবদুল করিমকে বাধা দেওয়া হয়নি। এসময় তার মোটরসাইকেলের কাগজ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চাওয়া হলে তিনি কাগজ দেখাতে ব্যর্থ হন। তখন তার সঙ্গে হেলমেটও ছিল না। তিনি স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কাপড়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ পরিপত্রে বলা হয়েছে- অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় তাকে ১৮৮ ধারায় দুইশ টাকা জরিমানা করা হয়।'

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, 'এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলা হবে। একজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বটা বেশি। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।' বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শাখাওয়াত ফাহাদ ও সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম এক যৌথ বিবৃতি দিয়ে ঘটনায় প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলার কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান হারেজ বলেন, তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সচেতনতামূলক কাজ করছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই। ইউনিয়নটি তো বড়, এজন্য সবাইকে চেনা যায় না। আমরা সবাই তো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দায়িত্ব পালন করছি। কে কি সেটাতো কারও চেহারায় বোঝা যায় না। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে বিষয়টি নিয়ে মাইন্ড করছে। বিষয়টি ব্যক্তিগত কিছু না। সিচুয়েশন ফেইস করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছে। শুনেছি পরে নাকি সমাধান হয়েছে। কচুয়া বাজারে মানববন্ধনের বিষয়টিও শুনেছেন বলে জানান তিনি।

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গুলিস্তানে কমিউনিটি পুলিশ সদস্যের মৃত্যু, সন্দেহ ‘হিট স্ট্রোক’  
গুলিস্তানে কমিউনিটি পুলিশ সদস্যের মৃত্যু, সন্দেহ ‘হিট স্ট্রোক’  
গরমে অসুস্থ হয়ে প্রার্থীর মৃত্যু, নিবার্চন স্থগিত
গোপালপুর উপজেলা পরিষদগরমে অসুস্থ হয়ে প্রার্থীর মৃত্যু, নিবার্চন স্থগিত
প্রেক্ষাগৃহ থেকে না নামতেই উঠলো পাঠ্যসূচিতে!
প্রেক্ষাগৃহ থেকে না নামতেই উঠলো পাঠ্যসূচিতে!
কোরবানির জন্য পশু আমদানির পরিকল্পনা নেই সরকারের
কোরবানির জন্য পশু আমদানির পরিকল্পনা নেই সরকারের
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে