X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

খামারে পোলট্রি মুরগির কেজি ১৮৫, বাজারে ২৫০ টাকা

খুলনা প্রতিনিধি
২৫ মার্চ ২০২৩, ১৯:২৮আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৫:৩৩

খুলনায় পোলট্রি মুরগির খামারে দাম কমলেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে কমেনি। ফলে সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা। আগের দামেই অর্থাৎ ২৪৫-২৫০ টাকায় মুরগি কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। শনিবার (২৫ মার্চ) খামারিরা মুরগি বিক্রি করেছেন ১৮৫-১৯০ টাকায়। এই দামে মুরগি কিনে ১৯৫-২০০ টাকায় বিক্রি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। অথচ একই দামে মুরগি কিনে ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। খামার পর্যায়ে দাম কমলেও এর প্রভাব পড়ছে না খুচরা বাজারে। 

এর আগে গত সপ্তাহে একই দামে মুরগি বিক্রি করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার মুরগির দাম খামার পর্যায়ে ছিল ২১৮-২২২ টাকা। পাইকারি বাজারে ছিল ২২৮-২৩০ টাকা এবং খুচরায় ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। 

নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০, সোনালি মুরগি ৩৩০ ও পোলট্রি ২৪৫-২৫০ টাকা। তবে কয়েকজন খামারি জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের চেয়ে শনিবার কেজিতে ৩০ টাকা কমে মুরগি বিক্রি করেছেন। 

পাইকারি বিক্রেতা মো. সোহেল বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী মুরগির বাচ্চা সরবরাহ নেই। উৎপাদন কমে বাজারে সরবরাহ কমেছে। ফলে দাম বেড়েছে। শুক্রবার ২২৮-২৩০ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি করেছি। খুচরায় ২৪৫-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। শনিবার পাইকারি দর ১৯৫-২০০ টাকা হয়েছে। কিন্তু আগের মুরগি খুচরা দোকানে থাকায় আগের দামেই বিক্রি করেছেন বিক্রেতারা। পাইকারি দাম কমলেও খুচরা বাজারে দাম কমছে না।’

মহানগরীর বাইতিপাড়ার নয়ন পোলট্রি দোকানের বিক্রেতা মো. নয়ন বলেন, ‘দাম বেশি হওয়ায় মুরগি বিক্রি দুই তৃতীয়াংশ কমেছে। নতুন মুরগি আনা হয়নি। শনিবারও পোলট্রি ২৪৫-২৫০, সোনালি ৩৩০ ও কক ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।’

রূপসা বাজারের মুরগি বিক্রেতা বাদল বলেন, ‘গত এক মাসের বেশি সময় ধরে মুরগির দাম বাড়ছে। বাজারে মুরগির সংকট থাকায় দাম বেড়েছে।’

খালিশপুর পৌর সুপার মার্কেটে মুরগি কিনতে আসা ক্রেতা মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘মুরগির দাম গরিবের নাগালের বাইরে। কিনতে গেলে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।’

খালিশপুর প্লাটিনাম গেট এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৩০-১৪০ টাকা কেজি ছিল। তখন কিনতে পারতাম। এখন ২৪০ টাকা হয়েছে, যা আমাদের নাগালের বাইরে।’ 

খামার পর্যায়ে দাম কমলেও এর প্রভাব পড়ছে না খুচরা বাজারে। রূপসার খামারি শামসুজ্জামান শাহিন বলেন, ‘মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। দুই মাস আগে যে খাবার ৩১ টাকায় কেনা যেতো এখন ৪৩ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া মুরগির বাচ্চার দামও বেড়েছে। বাচ্চা পালনে খরচ বাড়ায় মুরগির দাম কিছুটা বাড়তি।’ 

বটিয়াঘাটা গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের খলিশাবুনিয়া গ্রামের খামারি বিশ্বজিৎ তরফদার বলেন, ‘আমার এক হাজার মুরগির খামার ছিল। আমি প্রায় চার বছর পালন করার পর ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। খাবারের দাম বাড়তি। কিন্তু সেই তুলনায় ডিমের দাম কম। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি। ধীরে ধীরে আমার খামারটি বন্ধ করতে হয়। এখন আমি ডিম সংগ্রহ করে বিক্রি করি।’

লবণচরা রিয়া বাজারের পোলট্রি খাবার বিক্রেতা মনির মোল্লা বলেন, ‘পোলট্রি খাবারের দাম বেড়েছে। দুই দফায় এক বস্তা খাবারের দাম বেড়েছে ২০০ টাকা। আগে এক বস্তা খাবারের দাম ছিল ৩ হাজার টাকা। বর্তমানে সেই খাবারের দাম ৩ হাজার ২০০ টাকা।’ 

খুলনা পোলট্রি ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব এস এম সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আগে যেখানে একটি মুরগির বাচ্চা ৮-১০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেই বাচ্চার দাম ৫৫-৫৮ টাকা। এ ছাড়া মুরগির খাবারের দাম আগে ছিল প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকা। সেই খাবারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০-৭৫ টাকায়। মুরগি উৎপাদনে যে টাকা ব্যয় হচ্ছে, সেই টাকা উঠছে না। ফলে অনেকে ধারদেনা করে এখন ব্যবসা গুটিয়ে পথে বসেছে। অনেকে ধারদেনার দায় মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের নামে মামলা হচ্ছে। খামারিরা খুব দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আগে খামারিদের কোনও কর দিতে হতো না। গত অর্থবছর থেকে খামারিদের ওপর কর চাপানো হয়েছে। এর প্রভাব উৎপাদন খরচে পড়েছে। খাবারের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে, তাতে ফার্মের মালিকরা সঠিক বাজারদর পাচ্ছেন না।’

খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অরুণ কান্তি মণ্ডল বলেন, ‘মুরগির খাবারের জন্য ভুট্টা প্রয়োজন। এই ভুট্টা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ১৮ টাকার ভুট্টা এখন বেড়ে ৩৮-৪২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া সয়াবিনের খৈলও আমদানি করা হয়। ১০০ কেজির মধ্যে ৭৫ কেজি ভুট্টা ও সয়াবিনের খৈল দিয়ে খাবার তৈরি হয়। এসবের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। প্রতিটি খাবারের মূল্য বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। এখন লেয়ার মুরগির এক কেজি খাবারের দাম ৭২-৭৫ টাকা। সঙ্গত কারণে খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে ডিম ও মুরগির মাংসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে যখন খাবার ও বাচ্চার দাম কমতে থাকবে, তখন মুরগি ও ডিমের দামও কমতে থাকবে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, খুলনায় ২ হাজার ৪৯২টি পোলট্রি খামার রয়েছে। তবে মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, জেলার প্রান্তিক পর্যায়ে ৪ হাজার ৯৫২টি পোলট্রি খামার রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

/এসএন/
সম্পর্কিত
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
বাজারে ক্রেতা নেই: তবু ব্রয়লারের কেজি ২৩৫, গরু ৮০০
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
আজও উদঘাটন হয়নি ৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা বাবু হত্যার রহস্য
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছরআজও উদঘাটন হয়নি ৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা বাবু হত্যার রহস্য
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ