দেশের শীর্ষস্থানীয় আলু উৎপাদনকারী জেলা রংপুরে পণ্যটির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্য বৃদ্ধির কারণ সরেজমিন দেখতে এসে রংপুর নগরীর উত্তম হাজিরহাট এলাকায় হিমাগারে অভিযানে নেতৃত্ব দিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান। এ সময় হিমাগারের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম লেবু এবং সিন্ডিকেট আলু ব্যবসায়ী রাসেলকে পুলিশের হাতে তুলে দেন তিনি। আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে বেঁধে দেওয়া ২৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি না হলে, সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে, ডিমের মতো আলু আমদানির জন্যও সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে বলে জানান তিনি।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে রংপুর নগরীর উত্তম হাজীরহাট এলাকায় আরমান কোল্ড স্টোরেজে বিপুল পরিমাণ আলু অবৈধভাবে গুদামজাত করে রাখায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের মহাপরিচালক।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা স্টোরেজে আলুর দাম ২৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দিয়েছি। তারপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং কোল্ড স্টোরেজের কর্মকর্তা সিন্ডিকেট করে আলুর বাজার অস্থির করে তুলেছেন। আমরা এসব সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা করছি। জনগণকে জিম্মি করে আলুর বাজার অস্থির করে মুনাফা করবেন, তা বরদাশত করা হবে না। আমরা আরও তিন-চার দিন দেখবো, তারপর আলু আমদানির জন্য সুপারিশ করবো।’
তিনি বলেন, ‘এই আরমান কোল্ড স্টোরেজে রাসেল নামে এক সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী নিজের উৎপাদিত আড়াই হাজার বস্তা এবং স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ১২ হাজার বস্তা আলু নিজের নামে রেখেছেন। এভাবে অন্যের আলু নিজের নামে রাখা আইনত অপরাধ এবং আলুর বাজার অস্থির করে রাখার একটা সুগভীর চক্রান্ত।
‘খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ ব্যাংক থেকে চার কোটিরও বেশি টাকা ঋণ নিয়ে নাকি কৃষকদের দিয়েছে। কী উদ্দেশ্যে তারা ঋণ নিয়ে কৃষকদের দিয়েছে সেটা খতিয়ে দেখতে আলু ব্যবসায়ী রাসেল ও কোল্ড স্টোরেজের জিএম রেজাউল করিম লেবুকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এই সিন্ডিকেট চক্র আলু কোল্ডস্টোরে জমা করে কী করেছে, কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাদের কী উদ্দেশ্য ছিল–বিস্তারিত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা সরেজমিন দেখেছি, আরমান কোল্ডস্টোরেজে এখনও পর্যাপ্ত আলু মজুত রয়েছে। আলু বের করার সময় আর মাত্র দেড় থেকে দুই মাস বাকি রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আলু কোল্ডস্টোরেজ থেকে বের করা না হলে পচে যাবে। তারপরও কেন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা আলু বের না করে স্টোরে মজুত রেখেছেন সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আলুর কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বেশি পাওয়ার জন্য মজুত করে রাখা হয়েছে কিনা সেটাও দেখতে হবে।’
তিনি কোল্ডস্টোরেজ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
অভিযান পরিচালনাকালে তার সঙ্গে ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামসহ ভোক্তা অধিদফতর ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।