X
রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫
২২ আষাঢ় ১৪৩২

অযত্ন অবহেলায় নীলফামারীর ২৫ বধ্যভূমি

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী
০৯ মার্চ ২০১৬, ১১:৪৬আপডেট : ০৯ মার্চ ২০১৬, ১১:৫৩

 বদ্ধভূমি,নীলফামারী ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পাকিস্তানি হানাদাররা নীলফামারী জেলা দখল করে নেয়। আর জেলা হানাদারমুক্ত হয় ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। এই সময়ের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনতা দুর্বার প্রতিরোধের মাধ্যমে মুক্ত করেন ডিমলা, ডোমার, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুরসহ নীলফামারীর বিভিন্ন এলাকা।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফজলুল হক জানান, ’৭১ সালে জেলার প্রায় দুই হাজার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। শহীদ হন ৭১ জন। তিনি আরও জানান, জেলায় গণকবরের (বদ্ধভূমি) সংখ্যা ২৫টি। বদ্ধভূমিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে যে কয়েটি বদ্ধভূমি সংস্কার করা হয়েছে তাও আবার অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল নীলফামারীর জলঢাকায় গোলনা ইউনিয়নের কালীগঞ্জ এলাকায় রাজাকার আলবদরের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা ৩০০ এরও বেশি নিরাপরাধ মানুষকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সরে যেতে থাকা মানুষগুলোকে হত্যার পর সেখানেই মাটিচাপা দেওয়া হয়। স্থানটি কালীগঞ্জ বধ্যভূমি বলে পরিচিতি পায়। কালীগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের শহীদদের স্মরণে সেখানে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিসৌধ এবং একটি শহীদ মিনার। কালের সাক্ষী হয়ে এটি আজও দাঁড়িয়ে আছে। তবে  বধ্যভূমির চারপাশের বেহাল দশা। ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকে যেখানে সেখানে। সামনেই রয়েছে দোকান। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বছরের একদিন পরিষ্কার করা হলেও বাকি দিনগুলো পড়ে থাকে চরম অবহেলায়।
নীলফামারী জেলা শহর থেকে কালীগঞ্জ বধ্যভূমির দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। জলঢাকা উপজেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কালীগঞ্জ বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হামিদুল ইসলাম বলেন, দিনটির কথা শুনলে গা শিউরে ওঠে। পাকিস্তানী বাহিনী বাঙালিদের ওপর যে বর্বরতা চালিয়েছে তা ভুলবার কথা নয়। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
জলঢাকা উপজেলার ৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের ছোট্ট একটি বাজার, যার বর্তমান নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু হাট। এখানে হত্যা করা হয়েছিল কাঠালী, বালাগ্রাম ও জলঢাকার ৩ শতাধিক তরুণ ও যুবককে।

সৈয়দপুরের মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান জোয়ারদার গোলাহাট বধ্যভুমির কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘সে সময় ডিগ্রি পাস করলাম। মাহতাব বেগ শহীদ হওয়ার পর আমরা সবাই আটকা পড়লাম সৈয়দপুর শহরে। ঘোষণা হলো এয়ারপোর্ট তৈরি করা হবে এবং আমাদেরকে সেখানে কাজ করতে হবে। সেখানে কাজে নেওয়া হলো। সারাদিন ইটের সোলিং করার পর বাড়ি ফিরে এলে আমাদের বন্দি করে নিয়ে যায়। আমাদের সহায় সম্পদ সব লুট করে নিয়ে যায় পাকিস্তানি দোসর হাশমী ও কাইয়ুমেরা। ৭ দিন পর আমাদের রেলস্টেশনে এনে ৪টি বগিতে ঠাসাঠাসি করে তোলা হয়। গোলাহাট মাঠে ট্রেনে থেকে নামিয়ে তলোয়ার দিয়ে কেটে এবং গুলি করে চারশতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৩ জুন এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

এর আগে ’৭১ সালের ১৫ ও ১৬ এপ্রিল শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয় সৈয়দপুর রেল কারখানার ভেতরে ও বাইরে। এই বধ্যভূমিটিও অবহেলায় পড়ে আছে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান,  বধ্যভূমির স্মৃতি ও শহীদদের তালিকা ৪৩ বছরেও সংরক্ষিত হয়নি যথাযথভাবে। তারা বদ্ধভূমিগুলোর সংস্কার ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান।

/এফএস/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের দাবিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বললো  ইসরায়েল
গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের দাবিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বললো  ইসরায়েল
স্ত্রীর অভিযোগে ধরা খেলেন স্বামী, ছয় মাসের কারাদণ্ড
স্ত্রীর অভিযোগে ধরা খেলেন স্বামী, ছয় মাসের কারাদণ্ড
মালয়েশিয়ায় ক্রেন দুর্ঘটনায় যশোরের যুবকের মৃত্যু
মালয়েশিয়ায় ক্রেন দুর্ঘটনায় যশোরের যুবকের মৃত্যু
ফিরে দেখা: ৬ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ৬ জুলাই ২০২৪
সর্বাধিক পঠিত
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু
সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত: চাপের মুখে প্রবীণ ও মধ্যবিত্তরা
সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত: চাপের মুখে প্রবীণ ও মধ্যবিত্তরা
সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা মারা গেছেন
সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা মারা গেছেন
কনস্টেবলকে ‘স্যার’ ডেকে ধরা পড়লেন ভুয়া এসআই
কনস্টেবলকে ‘স্যার’ ডেকে ধরা পড়লেন ভুয়া এসআই
আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতীকী কফিন মিছিল
আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতীকী কফিন মিছিল