গাজীপুরে পোশাক (সোয়েটার) কারখানায় কাজ করার সময় টিঠন মিয়া শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। হিট স্ট্রোকে তার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার সহকর্মী শ্রমিকরা। রবিবার (১১ মে) মধ্যাহ্ন বিরতির পর কারখানার উৎপাদন ফ্লোরে কাজ করার সময় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর শ্রমিকরা কারখানার বাইরে বিক্ষোভ করেন।
এ বিষয়ে জেএল ফ্যাশন লিমিটেড নামে নামে ওই কারখানার কর্তৃপক্ষ বলছে, কারখানার প্যাকিং সেকশন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সেখানে গরম লেগে স্ট্রোক করার কোনও কারণ নেই।
জেএল ফ্যাশন লিমিটেড পোশাক কারখানাটি জয়দেবপুর থানাধীন বানিয়ারচালা (বাঘের বাজার) এলাকার সাফারি পার্ক সড়কে অবস্থিত। এ কারখানার বিভিন্ন সেকশনে ২ হাজার ৭৫০ জন শমিক কর্মচারী কাজ করেন।
টিঠন মিয়া নেত্রকোনা জেলা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর (দলপারামপুর) গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে। তিনি ওই কারখানার ফিনিশিং শাখার সাধারণ অপারেটর (পেকার) পদে চার বছর ধরে কর্মরত ছিলেন।
মৃত শ্রমিকের সহকর্মীরা জানান, মধ্যাহ্ন (লাঞ্চ) বিরতির পর টিঠন মিয়া সেকশনে এসে কাজে যোগ দেন। হঠাৎ তার বুকে ব্যথা অনুভব হলে সহকর্মীরা তাকে কারখানার মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত মেডিক্যাল অফিসার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাওনা চৌরাস্তা আল-হেরা হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। সেখানে নিয়ে গেলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিকাল ৫টায় মৃত ঘোষণা করেন।
শ্রমিকরা আরও জানান, অসুস্থ শ্রমিককে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অবহেলা রয়েছে। তাদের অবহেলার কারণে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাদের সহকর্মী টিঠন মিয়ার মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার পর শ্রমিকরা কারখানার বাইরে কিছুক্ষণ নিহত শ্রমিকের সব পাওনা ও ক্ষতিপূরণ পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সাঈদ শিকদার শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে শ্রম আইন অনুযায়ী সব পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দিলে তারা শান্ত হন। পরে কারখানার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিহত শ্রমিকের মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাইদা ইমরোজ জানান, অতিরিক্ত গরমে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শ্রমিক টিঠন মিয়ার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
ওই কারখানার অপারেশন সেকশনের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) দুশান্তা কুমার বলেন, ‘আমাদের ওই প্যাকিংম্যান টিঠন মিয়া লাঞ্চ করে কারখানায় প্রবেশ করে। আমি তার সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে, হঠাৎ টিঠন মিয়ার বুকে ব্যথা ওঠে এবং শরীর ঘেমে যায়। পরে সে তার সহকর্মীদের সঙ্গে কারখানার মেডিক্যাল সেন্টারে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসককে বুকে ব্যথার কথা বললে তাকে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দেওয়া হয়। চিকিৎসক বললেন, ওষুধ খাওয়ার পরে সে (টিঠন) বলল ভালো আছে। ১০ মিনিট পর আবার বুকে ব্যথার কথা জানালে কারখানার মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসক বলেন, “তুমি এখন সুস্থ আছো, স্বজনদেরকে খবর দিয়ে বলো তোমাকে বাড়ি নিয়ে যেতে।” অফিস থেকে তার বাড়িতে যোগাযোগ করার আগেই টিঠন মিয়ার স্বজনেরা কারখানায় চলে আসে। ততক্ষণে তার ব্যথা আরও বেড়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মাওনা চৌরাস্তা আল হেরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কারখানার পক্ষ থেকে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং তার পরিবারের কোনও সদস্য যদি এ কারখানায় চাকরি করতে ইচ্ছুক হন, তাকে চাকরি দেওয়া হবে। তা ছাড়া শ্রম আইন অনুযায়ী তার সব পাওনা পরিশোধ করা হবে।’
জেএল ফ্যাশন লিমিটেড পোশাক কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সাঈদ শিকদার বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অবহেলার বিষয়ে শ্রমিকরা যে অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়। প্যাকিংম্যান টিঠন মিয়া অসুস্থতা বোধ করার সঙ্গে সঙ্গেই কারখানার ব্যবস্থাপনায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণ করেন।’
গাজীপুর শিল্পপুলিশ-২-এর ইন্সপেক্টর আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘শ্রমিক মৃত্যুর খবর পেয়ে শিল্পপুলিশ ওই কারখানায় গিয়ে জানতে পারে অতিরিক্ত গরমে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওই শ্রমিক মারা যান। মৃত্যুর খবরে শ্রমিকরা উত্তেজিত হলে কারখানা কর্তৃপক্ষ নিহত শ্রমিকের সব ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলে তারা শান্ত হন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমে ওই শ্রমিক অসুস্থ হয়ে যায়। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে দ্রুত স্থানীয় মাওনা চৌরাস্তা আলহেরা হাসপাতালে পাঠায়। ওই হাসপাতাল থেকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার্ড করলে জরুরি বিভাগের চিকিসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’