ত্রাণ বিতরণে ধীরগতি ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করেছেন ফেনীর বন্যা দুর্গতরা। দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার, পানি ও রান্না করা খাবারের জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। তবে অনেক এলাকায় এখনও ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বাঁধ ভেঙেছে কমপক্ষে ২০টি স্থানে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে হাজারো মানুষ পানিবন্দি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও কৃষিজমি পানিতে নিমজ্জিত।
মুন্সিরহাটের গাইনবাড়ি থেকে আসমা আক্তার নামে একজন বলেন, ‘রাত থেকেই পানি উঠছে ঘরে। কিছু জিনিসপত্র বাঁচালেও খাবার ও পানির অভাবে পরিবার নিয়ে ভোগান্তিতে আছি। এখনও কাউকে দেখতে পাইনি প্রশাসনের।’
উত্তর শ্রীপুর থেকে জাহানারা বেগম নামে আরেকজন বলেন, ‘বাঁধ বাঁচাতে স্থানীয়রা চেষ্টা করেছিল, কিন্তু হয়নি। পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি, কিন্তু খাবার-পানির কষ্টটা সবচেয়ে বেশি।’
পরশুরামের দৌলতপুর থেকে সাহেদ আলম বলেন, ‘ত্রাণ আসে, কিন্তু নাম না থাকলে কিছুই মেলে না। তালিকায় না থাকার জন্য আমাদের মতো দুর্গত মানুষও বাদ পড়ে।’
ফুলগাজী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ‘ত্রাণ আছে, কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সময়মতো পৌঁছানো যাচ্ছে না। অনেক দুর্গম এলাকায় এখনও কেউ যায়নি।’
জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের ফেনীর সমন্বয়ক রুবিনা আক্তার বলেন, ‘ত্রাণে এখনও সমন্বয়হীনতা আছে। আমরা সুপারিশ করছি, এককেন্দ্রিক যাচাইকৃত তালিকা অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ করা হোক।’
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, ‘কিছু এলাকায় শুকনো খাবার, স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠানো হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যারা এসেছেন, তাদের রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পরশুরাম ও ফুলগাজীতে ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। রান্না করা খাবার সরবরাহের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তবে দুর্গম এলাকায় পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগছে।’
তিনি আরও জানান, প্রতিটি উপজেলায় সমন্বিতভাবে কাজ চলছে। স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ইউনিয়নভিত্তিক বিতরণ জোরদার করা হচ্ছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে, তবে বৃষ্টিপাত আরও একদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘মুহুরী নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে বৃষ্টি বন্ধ না হলে আরও ভাঙন হতে পারে।’
সচেতন নাগরিকেরা মনে করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি প্রশাসনিক দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতা যেন এই দুর্ভোগকে আরও গভীর করছে। মানুষের দাবি একটাই, ত্রাণ হোক সঠিক মানুষের জন্য, এবং প্রতিবারের মতো যেন একই ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়।