ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বন্যায় প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র খুললেও দুর্গত মানুষ সেখানে যেতে আগ্রহী নয়। ফলে অধিকাংশ কেন্দ্র ফাঁকা পড়ে আছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ফুলগাজীতে ৯৯টি এবং পরশুরামে ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যা এখনও আশানুরূপ নয়। একইসঙ্গে ত্রাণ বিতরণে ধীরগতি ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে।
মুন্সিরহাটের বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, ‘ঘর ডুবলেও আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে খেতে পাবো না– এমন ভয়ে যাইনি।’
অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে নেই পর্যাপ্ত টয়লেট, স্যানিটেশন, নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। গবাদিপশু রাখার ব্যবস্থাও নেই। জানা গেছে, বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬০টি গরু ও ৪৫টি ছাগলসহ মোট ২০৫টি প্রাণী রাখা হয়েছে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, বন্যার কারণে ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্থায়ীভাবে কিছু চিকিৎসা ক্যাম্প চালু করা হলেও রোগীর তুলনায় তা পর্যাপ্ত নয়।
স্বাস্থ্য সহকারী সমর নাথ বলেন, ‘জ্বর, ডায়রিয়া ও চর্মরোগের রোগী বাড়ছে। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না থাকলে অবস্থা আরও খারাপ হবে।’
প্রশাসনের বক্তব্য
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছি। ত্রাণ সরবরাহও চলছে। তবে মানুষ অনেক সময় ভয় বা সন্দেহের কারণে কেন্দ্রে যেতে চায় না।’
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো ও রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় এনজিওদের সমন্বয়ে কাজ করছি।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা ঢলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ২০ পয়েন্টে নদী রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। ফলে জঙ্গলঘোনা, গদানগর, দেড়পাড়া ও সাহেবনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও কাঁচা রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক পরিবার রাতের আঁধারে ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বাধ্য হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, ত্রাণ ও আশ্রয় ব্যবস্থার ঘোষিত উদ্যোগ থাকলেও সমন্বয়হীনতা, অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও ভেতরের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে বাস্তব চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। স্থানীয়রা বলছেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় শুধু কাগুজে প্রস্তুতি নয়, দরকার কার্যকর, মানবিক ও দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ।