X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

সুদমুক্ত জীবনের আশায় এহসানে ২০ লাখ টাকা রেখেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা

আরিফ মোস্তফা, পিরোজপুর
২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:০৯আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:০৯

শরিয়াহভিত্তিতে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মামলায় কারাগারে আছেন মাল্টিপারপাস কোম্পানি এহসান গ্রুপের এমডি রাগীব আহসান ও তার তিন ভাই। এহসান গ্রুপের প্রতারণার শিকার হয়ে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, সহকারী শিক্ষক, চাকরিজীবী, প্রবাসী এবং শ্রমজীবীদের অনেকেই আজ নিঃস্ব। এমনকি বিধবা ও গৃহিণীর জমানো টাকাও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে গ্রুপটির বিরুদ্ধে। পরকালে মুক্তির দোহাই ও সুদবিহীন উচ্চ মুনাফার কথায় ভুলে এহসানের প্রতারণার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ।    

পরকালে মুক্তির দোহাই দিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করতো এহসান গ্রুপ

এদেরই একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম আহাদ। পিরোজপুর শহরের সিআই পাড়া এলাকায় তার বাড়ি। কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরি থেকে অবসরে যান। সারাজীবন ব্যাংকে চাকরি করেও শেষ জীবনে সুদমুক্ত জীবনের আশায় এহসান গ্রুপে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। ২০১৮ সালের দিকে টাকা রাখার পর এক লাখ টাকায় মাসিক দুই হাজার টাকা করে মুনাফা পেতেন তিনি। 

সারাজীবন ব্যাংকে চাকরির পর এহসানে টাকা রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবসর বয়সে ব্যবসা করতে পারবো না, আবার সুদও খাবো না, তাই টাকা রেখেছিলাম এহসানে। 

মুনাফা পেয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কয়েকমাস পেয়েছি’। 

এহসানে জড়ানোর বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমি শেরেবাংলা পাবলিক লাইব্রেরির সঙ্গে জড়িত। এহসানের কার্যক্রম ওই লাইব্রেরির মার্কেটে চলছিল। এহসান গ্রুপের কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে সেখানে। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি ও মাওলানাদের যাতায়াত ছিল এহসানে। তখন শুনেছিলাম শরিয়াহ অনুযায়ী চলছে এহসানের কার্যক্রম। এ কথা শুনে সেখানে টাকা রেখেছিলাম। 

রাগীবের কথার যাদুতে এহসানে জড়িয়ে নিঃস্ব শিক্ষক

গোলাম আহাদ বলেন, এহসান গ্রুপ যখন আমাদের লাভ দিতে পারছিল না, তখন আমরা চাপ দিলে আমাকে, সাদেক আহমেদ শাহাদাৎ, নজরুল ইসলাম নান্নার স্ত্রী হেনা পারভীন, পিরোজপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের বড় ইমাম মোজাম্মেল হোসেন ও শাহিন আহমেদকে শেরেবাংলা পাবলিক লাইব্রেরি মার্কেটে থাকা (মার্কেটের ভাড়াটিয়া) আল্লাহর দান বস্ত্রালয়টি লিখে দেয়। কিন্তুু আমরা এর দখল বুঝে পাইনি।

ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম আহাদের মতো প্রতারণার শিকার হয়েছেন সাদেক আহমেদ শাহাদাৎ। শাহদাতের বাড়ি পিরোজপুর শহরের পৌরসভা সড়কে। পারিবারিক ঐতিহ্য আছে তাদের। বাবা আজাহার মিয়া ছিলেন একজন সফল আইনজীবী (তৎকালীন সময়ে মোক্তার)। শাহাদাৎ নিজেও একজন ক্রীড়াবিদ। পিরোজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নেতা, শেরেবাংলা পাবলিক লাইব্রেরির যুগ্ম সম্পাদকসহ পিরোজপুর টাউন ক্লাবেরও সদস্য তিনি। 

জেলা ক্রীড়া সংস্থার নেতা সাদেক আহমেদ শাহাদাৎ এহসানে জড়িয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ার কথা জানান সাদেক আহমেদ শাহাদাৎ। তিনি বলেন, আমার সংসার চলতো ঠিকাদারির আয়ের টাকায়। মাঝখানে তেমন কোনও কাজ না পাওয়ায় জমানো টাকা খরচ করতে হচ্ছিল। এক সময় তাতে টান পড়ে। ২০১৮ সালের দিকে শহরের মুসলিম পাড়া (ম্যালেরিয়া পুলের কাছে) এলাকায় ছয় শতক জমি ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি করি। পরে ২৫ লাখ টাকা জমা রাখি এহসান মাল্টিপারপাসে। 

তিনি বলেন, জমি বিক্রি করে আমি এক ঘণ্টাও টাকাটা হাতে রাখিনি। যেদিন জমি বিক্রি করেছি, সেদিনই এহসানে ২৫ লাখ টাকা জমা করি। এ থেকে প্রতি মাসে ৪৭ হাজার টাকার কিছু বেশি পেয়েছি। আট থেকে নয় মাস ধরে লাভ পেয়েছি। পরে মুনাফা পাওয়া বন্ধ হলে আসল টাকা হারানোর শঙ্কা দেখা দেয়।  

শাহাদাৎ আক্ষেপ নিয়ে বলেন, এহসানের এমডি রাগীব আহসানের শ্বশুর মাওলানা শাহ আলম পিরোজপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম (বর্তমানে মসজিদ থেকে চাকরিচ্যুত)। তার পেছনে আমি নামাজ পড়েছি। তার কথা বিশ্বাস করে আমি এহসানে বিনিযোগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছি। 

ছাত্র ধর্ষণে ইমামতি থেকে বহিষ্কার হয়ে এমএলএম শুরু রাগীবের

প্রতারণার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমি টাকা রাখার সময় এহসানের এমডি রাগীব আহসানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমি যে লাভ পাবো তার গ্যারান্টি কী? তখন সে আমাকে বলে আমি আপনাদের এখানে (শেরেবাংলা পাবলিক লাইব্রেরি মার্কেটে) ব্যবসা করি। আমাদের বিভিন্ন ব্যবসা আছে। জমি কেনা-বেচার ব্যবসা আছে আমাদের। আমি পালিয়ে যাবো কোথায়? কিন্তু পরে রাগীব যখন মুনাফা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন আমরা চাপ প্রয়োগ করতে থাকি। গেল তিন চার মাস আগে পিরোজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর শেরেবাংলা পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকীবের বাসায় বৈঠক বসে এ বিষয়ে। পরে রাগীব আহসান শেরেবাংলা পাবলিক লাইব্রেরি মার্কেটের এহসান গ্রুপের আল্লাহর দান বস্ত্রালয়টি আমিসহ কয়েকজন গ্রাহককে লিখে দেয়। 

প্রতারণার শিকার নজরুল ইসলাম নান্না গোলাম আহাদ ও শাহাদাতের মতো প্রতারণার শিকার হয়েছেন নজরুল ইসলাম নান্না। পিরোজপুরে এপেক্স ক্লাব পরিচালিত মোরশেদ স্মৃতি শিশু নিকেতনের ভাইস প্রিন্সিপাল তিনি। লাভের আশায় স্ত্রী হেনা পারভীনের নামে পাঁচ লাখ টাকা রেখেছিলেন এহসানে।

এহসান গ্রুপে ৪০ লাখ টাকা রেখেছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা

নজরুল ইসলাম বলেন, আমার ছোট ভাই ও অনেক পরিচিত জন এহসানে টাকা রেখেছিলেন। এতে আমার একটা বিশ্বাস জন্মেছিল। আমি এহসানে ৪৫ মাস মেয়াদি হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা রেখেছিলাম। আমাকে লাখে দুই হাজার টাকা দেওয়া হতো, যা দিয়ে মোটামুটি চলতো। 

এহসানের প্রতারণায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নজরুল আক্ষেপ নিয়ে বলেন, আমার তেমন কিছু নাই, এখন আসল টাকাটা ফেরত না পেলে পথে বসে যাওয়ার মতো অবস্থা।  নিজের কষ্টের টাকা ফেরত পেতে সরকার ও প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন তিনি। 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি হতে পারে
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি হতে পারে
ঐকমত্য কমিশনের সপ্তম দিনের বৈঠক: যেসব বিষয়ে হবে আলোচনা
ঐকমত্য কমিশনের সপ্তম দিনের বৈঠক: যেসব বিষয়ে হবে আলোচনা
ওয়ারীতে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পাওয়ার কারণ জানালো ফায়ার সার্ভিস
ওয়ারীতে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পাওয়ার কারণ জানালো ফায়ার সার্ভিস
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে ৮ কিলোমিটার যানবাহনের ধীরগতি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে ৮ কিলোমিটার যানবাহনের ধীরগতি
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
অবশেষে রিজার্ভে আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ হলো
অবশেষে রিজার্ভে আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ হলো
ইলিশের দাম নির্ধারণের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন
ইলিশের দাম নির্ধারণের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন
ক্যাম্পাসে নতুন সভাপতির প্রবেশ ঠেকাতে দুদিন পাঠদান বন্ধ!
ঢাকা সিটি কলেজক্যাম্পাসে নতুন সভাপতির প্রবেশ ঠেকাতে দুদিন পাঠদান বন্ধ!