তাদের অনেকেই জানে না কে তার বাবা-মা। বাবা-মায়ের হাত ধরে কখনও শপিং কিংবা ঘুরতে যাওয়া হয়নি। ঈদের আনন্দ কেমন জানা নেই। স্বজন বলতে পৃথিবীতে তাদের কেউ আছে কিনা তাও জানা নেই। আপনজন বলতে পেয়েছে সমবয়সী কয়েকজন শিশুকে। এভাবেই তাদের বেড়ে ওঠা। বলছি চট্টগ্রামের ছোটমণি নিবাসে বসবাসরত অসহায় শিশুদের কথা। বছরের পর বছর বাবা-মাকে ছাড়াই ঈদ কাটছে তাদের।
মো. রাব্বির বয়স সাত বছর। গত চার বছর ধরে চট্টগ্রাম ছোটমণি নিবাসে তার বসবাস। অন্যবারের মতো এবারও সে এখানেই ঈদ করবে। তিন বছর বয়সে রাব্বিকে থানা পুলিশের মাধ্যমে পায় প্রতিষ্ঠানটি। সে ঠিকানাবিহীন। তবে দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও কেউ তার খোঁজ নিতে আসেনি।
নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার রৌফবাদ এলাকায় সমাজসেবা অধিদফতরের প্রতিষ্ঠানটিতে রাব্বির মতো আছেন ২৯ ছেলেমেয়ে। এর মধ্যে ছেলে ১৪ এবং মেয়ে ১৫ জন। তারা সবমিলে এখন একটি পরিবার, ছোটমণি নিবাসই তাদের ঠিকানা।
বাংলা ট্রিবিউনকে রাব্বি জানায়, ‘এখানে আমার কোনও সমস্যা হচ্ছে না। এখানে খাওয়া-দাওয়া লেখাপড়া সবই হচ্ছে। তবে বাবা-মাকে ছাড়া ভালো লাগে না।’
ঈদ কী এখনও বুঝে উঠেনি রাব্বি। ঈদ কীভাবে কাটাবে জানতে চাইলে রাব্বি নিশ্চুপ। পরে বলে, ‘জানি না’।
ছোটমণিতে রাব্বির মতো তিন বছর ধরে আছে সাত বছরের ডিপজল, চার বছর ধরে আছে ছয় বছরের তাসলিমা, দুই বছর ধরে আছে চার বছরের আলিফ এবং দেড় বছর ধরে আছে পাঁচ বছর বয়সী নুসরাতসহ অন্যরা।
চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ ওয়াহিদুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের দিন ছোটমণি নিবাসের ছেলেমেয়েদের বিশেষ খাবার দেওয়া হবে। ঈদের খুশি তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নতুন পোশাক ও জুতা দেওয়া হয়েছে। ঈদের দিন তাদের চিড়িয়াখানায় বেড়াতে নিয়ে যাবে একটি সংগঠন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের দিন সকালে শিশুদের দেওয়া হবে পরোটা, সেমাই ও সুজি। বেলা ১১টার দিকে দেওয়া হবে চটপটি। দুপুরের খাবারে থাকবে মুরগির রোস্ট, পোলাও, গরু-খাসি, কোমল পানীয় এবং সালামি। এছাড়া বিকালে মিষ্টি থাকবে। সেই সঙ্গে থাকবে বিভিন্ন ধরনে ফল। রাতে পোলাও অথবা সাদা ভাত, মরগি এবং মুগ ডাল দেওয়া হবে।’
ছোটমণি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক তাসলিমা আকতার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২৯ ছেলেমেয়েকে মায়ের যত্নে এখানে বড় করা হচ্ছে। এর মধ্যে দুজনকে পাওয়া গেছে কারাগার থেকে আদালতের মাধ্যমে। তাদের মা কারাগারে বন্দি। বাকিদের পাওয়া গেছে আদালত এবং থানার জিডির মাধ্যমে। ঈদ উপলক্ষে তাদের মাঝে নতুন পোশাক বিতরণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছোটমণি নিবাস এলাকায় সমাজসেবা কার্যালয়ের যেসব স্টাফ আছেন ঈদের দিন অনেকে তাদের বাসায় নিয়ে খাওয়ান। বলা যায় এখানকার স্টাফরা নিবাসের শিশুদের সন্তানের মতোই আদর করেন।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েদের পোশাক পরিয়ে দেওয়া, খাওয়ানো, সবই করছেন এখানকার দায়িত্বরত আয়ারা।
আয়া শেফাত-ই জাহান বলেন, ‘এখানের ২৯ জনের মধ্যে ১৭ শিশু প্রতিবন্ধী। বাকিরা সুস্থ। অনেক সময় নিবাসে দু’একদিনের শিশু পর্যন্ত আনা হয়। যাদের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। ঠিকানাবিহীনদের ঠিকানা এই নিবাস। শিশুদের অনেকে লালন-পালনের জন্য আদালতের অনুমতিতে নিয়ে যান।’