X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

চট্টগ্রামে দিনে ভাঙছে ১৪টি সংসার

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
২৫ মে ২০২২, ১৯:১০আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ১৯:১০

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দা কোহিনুর আকতার (ছদ্মনাম)। বিয়ের এক সপ্তাহ পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। গত ২৮ মার্চ তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। স্বামীর অভিযোগ, ‘কোহিনুর আকতার মোবাইল ফোনে অন্যজনের সঙ্গে কথা বলেন। বিয়ের আগে ওই ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক। এজন্য বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে।’

এই দম্পতির মতো চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন ভাঙছে ১৪টি সংসার। তথ্য অনুযায়ী, বিবাহবিচ্ছেদের প্রায় ৭৫ শতাংশ আবেদন স্ত্রীর পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। স্বামীর পক্ষ থেকে তালাক দেওয়ার হার ২৫ শতাংশ। আবেদন করার পর সমঝোতার মাধ্যমে সংসার টিকে যাওয়ার ঘটনা এক শতাংশ।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দুটি সালিশি আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন জমা পড়ে দুই হাজার ১৬২টি। এর মধ্যে আদালত-১-এ ৯১৬টি এবং আদালত ২-এ আবেদন জমা পড়ে এক হাজার ২৪৬টি। হিসাবে গত ১৪৪ দিনে দুই হাজার ১৬২টি বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে এক শতাংশ টিকেছে। বাকিদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

২০২১ সালে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছিল পাঁচ হাজার ৫৪৮টি। এর মধ্যে আদালত-১-এ দুই হাজার ২৫৫টি ও আদালত-২ তিন হাজার ২৯৩টি। ২০২০ সালে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছেন চার হাজার ৮৫৪ জন। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল চার হাজার ৫৫০। 

এর আগে ২০১৮ সালে চার হাজার ৩৩১, ২০১৭ সালে তিন হাজার ৯২৮, ২০১৬ সালে তিন হাজার ৯৬১, ২০১৫ সালে তিন হাজার ৪৮৬ ও ২০১৪ সালে তিন হাজার ২৬৮ জন বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৪১ ওয়ার্ডের ১৬টি থানা এলাকার বাসিন্দারা বিবাহবিচ্ছেদের এসব আবেদন করেন। এর মধ্যে এক শতাংশ ছাড়া বাকিদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।

বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নারীদের বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে যৌতুকের জন্য নির্যাতন, মতের অমিল, চাকরি করতে না দেওয়া, শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে দ্বন্দ্ব, স্বামী মাদকাসক্ত ও অন্য নারীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক কিংবা দ্বিতীয় বিয়ে।  

পাশাপাশি পুরুষদের আবেদনের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, ঠিকমতো সংসার না করা, স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির কথা না শোনা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটানো।

চট্টগ্রাম আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের সাতটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ঝুলছে ১৫ হাজার ২৪৪টি মামলা। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন মামলা আছে তিন হাজার ৮৬৪টি, ট্রাইব্যুনাল-২-এ তিন হাজার ৫৯টি, ট্রাইব্যুনাল-৩-এ এক হাজার ৬২৯টি, ট্রাইব্যুনাল-৪-এ দুই হাজার ৭৭১টি, ট্রাইব্যুনাল-৫-এ এক হাজার ৯৪৪টি, ট্রাইব্যুনাল-৬-এ ৮৩০টি, ট্রাইব্যুনাল-৭-এ এক হাজার ১০৩টি।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই আদালতে দায়ের হওয়া বেশিরভাগ মামলা যৌতুক সংক্রান্ত। এর মধ্যে যৌতুক সংক্রান্ত ধারায় মামলা বিচারাধীন আছে ৮০৭টি। বাকিগুলো ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিসহ নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা জজ) জাহানারা ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এলাকায় বেড়েই চলেছে বিবাহবিচ্ছেদ। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হলেই বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ শুনানিতে দেখা গেছে পারিবারিক কলহ, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, বনিবনা না হওয়া, যৌতুক দাবি ও সংসারে অশান্তিসহ নানা ছোটখাটো বিষয়ের কারণে বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটছেন নারী-পুরুষ। তবে বিবাহবিচ্ছেদের যেসব আবেদন জমা পড়ে সেখান থেকে প্রত্যাহারের সংখ্যা খুবই কম। পারিবারিকভাবে সালিশ-বিচারের পর বিচ্ছেদের আবেদন করা হয়। তবে বেশিরভাগ আবেদন নারীদের পক্ষ থেকেই করা হয়।’

মঙ্গলবার (২৪ মে) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করতে এসেছেন নাহিদা আকতার (ছদ্মনাম)। তিনি পোশাককর্মী। এক বছর আগে নোয়াখালীর পোশাককর্মী ফয়জুলকে (ছদ্মনাম) ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। 

নাহিদা আকতার বলেন, ‘আমি ও স্বামী একই কারখানায় চাকরি করতাম। তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। বিয়ের পর যৌতুকের জন্য আমার ওপর নির্যাতন শুরু করে। সে মাদকাসক্ত ছিল। আমাকে প্রায় মারধর করতো। গত চার মাস ধরে পৃথক আছি। বাধ্য হয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করেছি।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আদালত-২-এর পেশকার আবু জাফর চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিবাহবিচ্ছেদে পুরুষের চেয়ে নারীদের আবেদন বেশি। বিবাহবিচ্ছেদের জন্য প্রথমে সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর আবেদন করতে হয়। আবেদন পাওয়ার পর তা সালিশি আদালতে পাঠিয়ে দেন মেয়র। আদালতে মেয়রের পক্ষে নিযুক্ত থাকেন স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা জজ)। আদালত বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর করার আগে স্বামী-স্ত্রী দুই পক্ষকে তিন মাসে তিন বার নোটিশ দেন। দুই পক্ষের কোনও এক পক্ষ কিংবা দুই পক্ষ হাজির হলে সমঝোতার চেষ্টা করেন আদালত। সমঝোতা না হলে আইন অনুযায়ী ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর হয়।’

/এএম/
সম্পর্কিত
টিকটকে পরিচয় তারপর বিয়ে: স্বামীর খোঁজে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নববধূ
নারীর সঙ্গে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় যুবলীগ নেতা, কাজি ডেকে পড়ানো হলো বিয়ে
বিয়ের কথা বলে ফেনীতে এনে বিদেশি নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেফতার ১
সর্বশেষ খবর
কালুরঘাটে হচ্ছে নতুন সেতু, ভিত্তিপ্রস্তরে থাকছে না প্রধান উপদেষ্টার নাম
কালুরঘাটে হচ্ছে নতুন সেতু, ভিত্তিপ্রস্তরে থাকছে না প্রধান উপদেষ্টার নাম
নটর ডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
নটর ডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
নৌ পথে ঈদযাত্রা ও পশুবাহী নৌযান নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ: অতিরিক্ত আইজিপি
নৌ পথে ঈদযাত্রা ও পশুবাহী নৌযান নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ: অতিরিক্ত আইজিপি
থাইল্যান্ডে গেছেন মির্জা ফখরুল
থাইল্যান্ডে গেছেন মির্জা ফখরুল
সর্বাধিক পঠিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
আসন্ন বাজেটে নতুন কী থাকছে
আসন্ন বাজেটে নতুন কী থাকছে
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি