বান্দরবানের সাত উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে ৩০ হাজারের বেশি পরিবার অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে বসবাস করছে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জেলার মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় মাইকিং করছে স্থানীয় প্রশাসন।
শনিবার (১৮ জুন) সকাল থেকে পাহাড়ে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। বিকালে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে পৌরসভার উদ্যোগে মাইকিং করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সদর উপজেলার কালাঘাটা, কাসেমপাড়া, লাঙ্গিপাড়া, ইসলামপুর, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশন এলাকা, স্টেডিয়াম এলাকা, নোয়াপাড়া, কসাইপাড়া, রুমা উপজেলার হোস্টেলপাড়া, রনিনপাড়া, লামা উপজেলার হরিনমারা, তেলুমিয়া পাড়া, ইসলামপুর, গজালিয়া, মুসলিম পাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হরিণঝিরি, টিঅ্যান্ডটি এলাকা, সরই, রূপসীপাড়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি, আমতলী, রেজু, তুমব্রু, হেডম্যানপাড়া, মনজয় পাড়া, দৌছড়ি, বাইশারীসহ সাত উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে ৩০ হাজারের বেশি পরিবার অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে বসবাস করছে। এসব স্থানে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় বসবাসরতদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
এর আগে সকালে বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কার কথা বলা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টানা বর্ষণের ফলে পাহাড়ধস ও জানমালের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ জন্য পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে কিংবা স্কুল ভবনে আশ্রয় নেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।
এসব পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। তিনি বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে ৩০ হাজারের বেশি পরিবার বসবাস করছে। ইতোমধ্যে অধিক ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সরিয়ে আনতে তালিকা তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন। তাদের নিরাপদে সরিয়ে আনতে প্রতিটি উপজেলার ইউএনওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের যেন কোনও সমস্যা না হয় সে জন্য সতর্ক রয়েছি আমরা।’
প্রসঙ্গত, ভারী বর্ষণে ফলে পাহাড়ধসে ২০০৬ সালে জেলা সদরে তিন, ২০০৯ সালে লামায় শিশুসহ ১০, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পাঁচ, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় দুই, ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০, ২০১৫ সালে লামায় চার, সিদ্দিকনগরে এক ও সদরের বনরূপা পাড়ায় দুই, ২০১৭ সালের ১৩ জুন সদরের কালাঘাটায় সাত ও রুমা সড়কে ২৩ জুলাই পাঁচ এবং ২০১৮ সালের ৩ জুলাই কালাঘাটায় এক ও লামায় তিন, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই লামায় এক, ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর আলীকদমের মিরিঞ্জা এলাকায় এক ও ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাইঙ্গ্যা ঝিরিতে এক পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়।