X
শনিবার, ১১ মে ২০২৪
২৮ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে কমেছে পানির সরবরাহ, ওয়াসার ভরসা বৃষ্টি

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
০১ মে ২০২৩, ০৮:০০আপডেট : ০১ মে ২০২৩, ০৮:০০

গত দেড় মাসে চট্টগ্রামে ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা বেড়েছে। এ কারণে ওয়াসার সরবরাহ করা পানি মুখেও নেওয়া যাচ্ছে না। একই সঙ্গে কমেছে পানি সরবরাহ। ফলে প্রচণ্ড গরমে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। পানি সংকট সমাধান ও পানি লবণমুক্ত করার দাবিতে ২৬ এপ্রিল (বুধবার) চট্টগ্রাম ওয়াসা ভবনের সামনে মানববন্ধন ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ‘চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম’। তবে পানির লবণাক্ততা সম্পর্কে ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত লবণাক্ততার সমস্যা সমাধানে অন্যকোনও উপায় নেই। বৃষ্টি হলেই কমবে পানির লবণাক্ততা’।  

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (৩০ এপ্রিল) চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সংগ্রহের উৎসস্থলে লবণের মাত্রা ছিল প্রতি লিটারে তিন হাজার মিলিগ্রামের ওপরে। এ মাত্রাকে সহনীয় করে প্রতি লিটারে ৪০০ মিলিগ্রাম লবণসম্পন্ন পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা।

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান র‌্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওয়াসার পানি সরবরাহ কমেছে। যেটুকু আসছে সেগুলো লবণাক্ততার কারণে মুখে নেওয়া যাচ্ছে না। এ পানি পান করে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়ায়। নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে অতিদ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

এ ছাড়া নগরের নিমতল গোসাইল ডাঙ্গা এলাকায় পানির দাবিতে সম্প্রতি খালি কলস নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। ওই এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানান।

এদিকে, চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে এ বিষয়ে জরুরি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার সম্মানিত গ্রাহকদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, চলমান শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের লেকে পানির লেভেল ৭৬ ফুট এ নেমে এসেছে যা স্বাভাবিক অবস্থায় ১০৯ ফুট থাকে। এমতাবস্থায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নির্গত হচ্ছে না। আর মোহরা ও শেখ রাসেল পানি শোধনাগার হালদা নদী থেকে উত্তোলিত পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় ২৪ ঘণ্টায় দুইবার পূর্ণ জোয়ারের সময় তিন ঘণ্টা করে ছয় ঘণ্টা পানি উত্তোলন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। পানি উত্তোলনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় পানির উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। সে কারণে পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে। বিভিন্ন স্থানে রেশনিং পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করার প্রয়োজন হচ্ছে। এ সময় সম্মানিত গ্রাহকগণকে প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহের মাধ্যমে পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য পুনঃরায় অনুরোধ করা হলো।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জোয়ারের সঙ্গে কর্ণফুলী হয়ে হালদা নদীতে ঢুকছে সাগরের লোনা পানি। ফলে মোহরা শোধনাগারে পানি পরিশোধনের পরেও অতিরিক্ত লবণ থেকে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুম হওয়ার কারণে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানির লেভেল কমে গেছে। এ কারণে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি ছাড়া হচ্ছে না কর্ণফুলী নদীতে। এতে নদীর উজানে মিঠা পানির প্রবাহ কমে গেছে।’

চট্টগ্রামে কমেছে পানির সরবরাহ, ওয়াসার ভরসা বৃষ্টি

তিনি আরও বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এ সমস্যা বেড়েছে। বৃষ্টি হলেই লবণাক্ততার সমস্যা থাকবে না। বলা যায়, এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।’

নগরের চান্দগাঁও থানাধীন কাপ্তাই রাস্তারমাথা এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তীব্র গরমে ওয়াসার পানি সরবরাহ কমে গেছে। পানি যখন পাওয়া যায় সেসব পানিতে অতিরিক্ত লবণ। এ কারণে মুখে নেওয়া যায় না। সে সঙ্গে পানিতে দুর্গন্ধ। বিষয়টি আমরা ওয়াসার কর্মকর্তাদের বলেছি। তারা বলেছেন, বৃষ্টি হলেই নাকি এ সমস্যার সমাধান হবে।’

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘নগরে দিনে ৪৬ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে ওয়াসা সরবরাহ করছে ৪১ কোটি লিটার পানি। প্রতিদিনই পানির ঘাটতি হচ্ছে। তাই এলাকাভিত্তিক রেশনিং করে পানি সংকট পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ম্যানেজার এ টি এম আবু জাহের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই লেকে পানির স্তর কমে গেছে। স্বাভাবিকভাবে যেখানে কাপ্তাই লেকে ৮২ দশমিক ২০ ফিট পানি থাকা প্রয়োজন সেখানে আজ আছে মাত্র ৭৫ দশমিক ১৪ ফিট। ২৪২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে রবিবার ২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি (চার নম্বর) ইউনিট চালু আছে। পানি কমে যাওয়ায় সবকটি ইউনিট চালানো যাচ্ছে না। বর্তমানে যা পানি আছে তা দিয়ে এভাবে চলে তাহলে আগামী মাসের ১০ থেকে ১২ মে পর্যন্ত একটি ইউনিট চালু রাখা যাবে। এরপর বৃষ্টি না হলে বন্ধ করে দিতে হবে চলমান ইউনিটটিও। অতিরিক্ত পানি ছাড়ার সুযোগ নেই।’

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালে মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প চালু হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো পানিতে লবণাক্ততার সমস্যা দেখা দেয়। এরপর ২০০৭, ২০০৯ ও ২০২২ সালেও হালদা নদীর পানিতে লবণাক্ততা দেখা দেয়। বিষয়টি সুরাহার জন্য ২০০৯ সালে গঠিত হয় কারিগরি কমিটি। এ কমিটি পরে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে। সেখানে শুষ্ক মৌসুমে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় নদীর পানির লবণাক্ততা রোধে কাপ্তাই হ্রদ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ কারণে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বর্ষা মৌসুম থেকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে পিডিবিকে কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা।

/এফআর/
সম্পর্কিত
দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে পানির নিচে সড়ক
সকালে ঢাকায় ঝুম বৃষ্টি, হতে পারে রাতেও
৩ দিনের সতর্কবার্তাকালবৈশাখী হতে পারে ৮ বিভাগে
সর্বশেষ খবর
হায়দার আকবর খান রনোর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
হায়দার আকবর খান রনোর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
লর্ডসে শুরু, লর্ডসেই শেষ অ্যান্ডারসনের
লর্ডসে শুরু, লর্ডসেই শেষ অ্যান্ডারসনের
আফগানিস্তানে বন্যায় মৃত্যু তিন শতাধিক
আফগানিস্তানে বন্যায় মৃত্যু তিন শতাধিক
ডিসি সাহেবের বলীখেলায় টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ
ডিসি সাহেবের বলীখেলায় টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ
সর্বাধিক পঠিত
ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি নয়, মামলা নেওয়ার নির্দেশ
ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি নয়, মামলা নেওয়ার নির্দেশ
ফলন বেশি, চরাঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন ‘জাপানি মিষ্টি আলু’ চাষে
ফলন বেশি, চরাঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন ‘জাপানি মিষ্টি আলু’ চাষে
মান ভাঙলো মিমির, এলো ‘তুফান’র দ্বৈত ঝলক
মান ভাঙলো মিমির, এলো ‘তুফান’র দ্বৈত ঝলক
‘কর্তৃপক্ষের’ আদেশের দায় কার?
‘কর্তৃপক্ষের’ আদেশের দায় কার?
নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচনা করলো আমিরাত
নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচনা করলো আমিরাত