X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণে মালিকপক্ষের দোষ খুঁজে পাননি তদন্ত কর্মকর্তা

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
০৫ মে ২০২৩, ১২:০৩আপডেট : ০৫ মে ২০২৩, ১২:৪৯

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় কারও অবহেলা খুঁজে পায়নি পুলিশ। সেইসঙ্গে মামলার আট আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশও করা হয়েছে। ঘটনার ১১ মাস পর মঙ্গলবার (২ মে) চট্টগ্রাম আদালতে দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের জন্য কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছিল না। এ কারণে ডিপোর আট কর্মকর্তাকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক জাকের হোসাইন মাহমুদ বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। আগামী সোমবার (৮ মে) চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের ওপর আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।’

তবে ঘটনার পর বিভাগীয় কমিশনারের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএম ডিপোতে দুর্ঘটনার জন্য মালিকপক্ষ ও তদারকিতে নিয়োজিতরা দায় এড়াতে পারেন না।

কীভাবে কর্মকর্তা ও তদারকিতে নিয়োজিতরা জড়িত তাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

এ প্রসঙ্গে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান নুর মোহাম্মদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। নাশকতা কিংবা অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্তে পাওয়া যায়নি। এই বিস্ফোরণ একটি দুর্ঘটনা। মালিক কিংবা অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলাও এতে পাওয়া যায়নি। এ কারণে এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এর আগে রমজানের শেষের দিকে এ দুর্ঘটনায় নিহত আট জনের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় তাদের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে আদালতের নির্দেশে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে নগরীর ২২ মহল্লা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।’

গত বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণে ৫১ জন নিহত হন। আহত হন দুই শতাধিক। আহতদের চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ৭ জুন রাতে সীতাকুণ্ড থানার এসআই আশরাফ সিদ্দিকী বাদী হয়ে ডিপোর আট কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।

বিস্ফোরণের পর বিএম কনটেইনার ডিপো

মামলায় ডিপোর কর্মচারীদের আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- বিএম ডিপোর মহাব্যবস্থাপক নাজমুল আক্তার খান, উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) নুরুল আক্তার খান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) খালেদুর রহমান, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্বাস উল্লাহ, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (প্রশাসন) নাছির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল আজিজ, ডিপোর শেড ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী ডিপো ইনচার্জ নজরুল ইসলাম।

ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ডিপোতে কেমিক্যালভর্তি কনটেইনার থাকার কথা ফায়ার সার্ভিসকে জানায়নি মালিকপক্ষ। এ কারণে কেমিক্যালভর্তি কনটেইনারের আগুন পানিতে নেভানো সম্ভব হয়নি। কেমিক্যালের কারণে এক কনটেইনার থেকে আরেক কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, বিএম ডিপোতে আমদানি-রফতানি করা গার্মেন্টস পণ্য কনটেইনারে রাখার পাশাপাশি কেমিক্যালভর্তি ড্রামও রাখা হতো। কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলায় ডিপো কর্তৃপক্ষের অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষিত জনবল ছিল না। কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থের আগুন নেভানোর মতো কোনও ধরনের প্রস্তুতিও তাদের ছিল না। এ অবস্থায় ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ডিপো কর্তৃপক্ষ ড্রামভর্তি কেমিক্যাল থাকার বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসকে জানায়নি। ড্রামভর্তি কেমিক্যালের কারণে এক কনটেইনার থেকে আরেক কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এই আগুন পানিতে নেভানো সম্ভব হয়নি। উল্টো ড্রামভর্তি কেমিক্যালের ছয়-সাতটি কনটেইনার একযোগে বিস্ফোরিত হয়।

মামলার এজাহারে পুলিশ আরও উল্লেখ করে, বিস্ফোরণের ভয়াবহতায় আশপাশের দুই-তিন কিলোমিটারের মধ্যে থাকা অনেক ভবনের কাঁচ টুকরো টুকরো হয়ে মাটিতে পড়ে। বিস্ফোরিত কনটেইনারের ছড়িয়ে পড়া টুকরোর আঘাতে ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিস কর্মী, পুলিশ সদস্য এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ আহত হন। এজন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে। কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা, ডিপো পরিচালনায় দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

প্রথমে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত শুরু করে। পরে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে এ মামলার তদন্তভার পায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

বিএম ডিপো সূত্র জানায়, বিস্ফোরণের পর গত নভেম্বর মাসে বিএম কনটেইনার ডিপোর আমদানি-রফতানি পণ্য ব্যবস্থাপনা পুরোদমে শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ডিপো ব্যবহার করে আমদানি-রফতানি ও খালি কনটেইনার সংরক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ডিপো সংস্কার করার পর গত ২২ আগস্ট শুধু খালি কনটেইনার সংরক্ষণের অনুমোদন দেয় কাস্টমস। গত ২৫ অক্টোবর নয় শর্তে পোশাকপণ্য রফতানি কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার অনুমোদন দেওয়া হয়। শর্ত পরিপালন করায় গত ৭ নভেম্বর আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পুরোদমে শুরুর অনুমোদন দেওয়া হয়। 

তবে বিএম ডিপোর রাসায়নিক পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের স্মার্ট গ্রুপ ও নেদারল্যান্ডসের একটি প্রতিষ্ঠান মিলে বিএম কনটেইনার ডিপো চালু করে।

/আরআর/
সম্পর্কিত
বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ১ বছর, এখনও ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন সুলতান মাহমুদ
বিএম ডিপো বিস্ফোরণে নেই কারও দায়: ছেলের জন্য এখনও কাঁদেন স্কুলশিক্ষক বাবা
বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণমালিকপক্ষের অবহেলা পেয়েছে ৬ সংস্থা, কিছুই পায়নি ডিবি
সর্বশেষ খবর
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মেধাসম্পদ সুরক্ষা মানে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা
মেধাসম্পদ সুরক্ষা মানে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা
অভিষেকে আস্থার প্রতিদান দিলেন তানজিদ
অভিষেকে আস্থার প্রতিদান দিলেন তানজিদ
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা