চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর (৬৪) বিরুদ্ধে করা মামলাটি প্রত্যাহারের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (৩০ অক্টোবর) চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
অপরদিকে আদালতে মিথ্যা মামলার দায়ে বাদীসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশে মামলা করা হয়েছে। আদালতের করা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আদালত সূত্র জানায়, দুদক কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং তার শ্যালক মোহাম্মদ কায়সার আনোয়ারকে আসামি করে রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারী গত ২৯ আগস্ট আদালতে একটি মামলা করেন। তানিয়া নিজেকে দুদক কর্মকর্তার বাসার গৃহপরিচারিকা দাবি করে বেতন না দিয়ে মারধরের অভিযোগে মামলাটি করেন।
গত ১৬ অক্টোবর আদালতে রনি আক্তার তানিয়া (বাদী) মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। আবেদনে তানিয়া উল্লেখ করেন, এস এম আসাদুজ্জামান, মো. লিটন ও জসিমের প্ররোচনায় এ মিথ্যা মামলা করেন। এ ছাড়া মামলার বাদী এ বিষয়ে আদালতে জবানবন্দিও প্রদান করেন। সোমবার ধার্য তারিখে মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়। একইভাবে মিথ্যা মামলা করায় বাদীসহ জড়িত তিন জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত জবানবন্দিতে তানিয়া আদালতকে বলেন, ‘আমি একটি মিথ্যা মামলা করি। মামলার ঘটনা পুরোপুরি মিথ্যা। এস এম আসাদুজ্জামান, মো. জসিম ও লিটন আমাকে দিয়ে মামলাটি করায়। আসামিরা নির্দোষ। জায়গা নিয়ে ঝামেলা থাকায় ওরা আমাকে দিয়ে মামলা করায়। মিথ্যা মামলা হওয়ায় আমি প্রত্যাহার করতে চাই।’
আদালত এ সংক্রান্ত আদেশে বলেন, ‘মামলার বাদী রনি আক্তার তানিয়া তার দায় দরখাস্ত ও জবানবন্দি দিয়ে স্বীকার করে। এ মামলার সঙ্গে এস এম আসাদুজ্জামান, মো. লিটন ও জসিমের দায় কতটুকু বা কীভাবে তারা এ মিথ্যা মামলায় প্ররোচকের ভূমিকা পালন করেছেন বা করেছেন কিনা তা তদন্তপূর্বক নিরূপণ করা প্রয়োজন। তদন্তের মাধ্যমে এ তিন আসামিকে শনাক্ত করার পাশাপাশি আরও কেউ এই ঘটনায় জড়িত কিনা তাও নির্ণয় করা আবশ্যক।’
চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আদালতে মিথ্যা মামলা করায় মামলার বাদী এবং মামলার প্ররোচনায় জড়িত তিন জনসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আদালতের আদেশে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ষষ্ঠ আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওসমান গণি বাদী হয়ে রনি আক্তার তানিয়া, এস এম আসাদুজ্জামান, মো. লিটন ও জসিমের বিরুদ্ধে আমলি আদালতে মামলাটি করেন। আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ দিয়েছেন।’
গত ৩ নভেম্বর রাতে রনি আক্তার তানিয়ার করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানামূলে দুদক কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে পুলিশ গ্রেফতার করে। থানায় নেওয়ার কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। স্বজনদের দাবি, নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দুদক কর্মকর্তার স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খাইরুল ইসলামসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুননেছার আদালতে এ মামলা করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে মামলাটি থানায় রেকর্ড করারও নির্দেশ দেন আদালত।
মামলার এজাহারে শহীদুল্লাহর স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে দুদকের উপপরিচালক পদ থেকে অবসর নেন সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকায় বসবাস করতেন। সেখানে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তার জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এর জের ধরে গত ২৯ আগস্ট শহীদুল্লাহ ও তার শ্যালক মোহাম্মদ কায়সার আনোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা করেন রনি আক্তার তানিয়া নামের এক নারী। আদালত মামলার শুনানি শেষে ওই দিন তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। ওই সমন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন অর রশীদ গায়েব করে ফেলেন। ফলে আসামিরা আদালতে হাজির হওয়ার সমন পাননি। মামলার পরবর্তী তারিখে আদালত দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গত ৩ অক্টোবর রাতে শহীদুল্লাহকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। থানায় নেওয়ার পর আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে শহীদুল্লাহকে নির্যাতন করেন। নির্যাতনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার মৃত্যু হয়।