X
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

র‍্যাম্প নির্মাণে কাটতে হবে অর্ধশত গাছ, নাগরিক সমাজের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
০১ এপ্রিল ২০২৪, ২২:২৬আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪০

চট্টগ্রাম মহানগরীতে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত নির্মাণাধীন ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১৫টি র‍্যাম্প (গাড়ি ওঠার পথ)। এর মধ্যে একটি র‍্যাম্প নামানো হচ্ছে টাইগারপাস এলাকায়।

টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কটিতে র‍্যাম্প নামানোর জন্য প্রায় অর্ধশত বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এতে আছে শতবর্ষী গাছও। ইতোমধ্যে গাছগুলোতে লাল ও সাদা কালি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে র‍্যাম্প নির্মাণে গাছ কাটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও ব্যক্তি। সোমবার (১ এপ্রিল) এর প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে তারা।

তবে র‍্যাম্প নির্মাণের জন্য গাছ কাটা হবে জানিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১৫টি র‍্যাম্প নির্মাণ করা হবে। টাইগারপাস অংশে র‍্যাম্প নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ অংশে র‍্যাম্প নামানোর জন্য বিকল্প কোনও জায়গা নেই। এখানে র‍্যাম্প করতে গেলে গাছ কাটতে হবে।’ তবে বড় গাছগুলো যাতে কাটা না পড়ে সে জন্য চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।

বন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নির্মাণের জন্য গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে সিডিএ সম্প্রতি বন বিভাগের কাছে আবেদন করে। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪৬টি গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, শিরীষ ও পেয়ারা প্রজাতির গাছ।

টাইগারপাস-সিআরবির শতবর্ষী গাছ ও সড়ক ধ্বংস করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার না হলে জোড়ালো আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ। সোমবার বিকালে নগরীর টাইগারপাস মোড়ে শতবর্ষী গাছের নিচে এ প্রতিবাদসভা ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে অংশ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘যদি র‍্যাম্প করতে হয়, অনেক জায়গা আছে। এখানে গাছ কেটে কেন করতে হবে? এখানে কোনও গাছ কাটা চলবে না। প্রকৃতি অক্ষুণ্ন রেখে যেকোনও কিছু করতে পারে। তারা সেটা করুক। মূল লক্ষ্য এসব শতবর্ষী গাছ ও দ্বিতল রাস্তাটি নষ্ট করে সিআরবির পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংস করা। তারপর সিআরবিতে থাবা বসানো। শতবর্ষী গাছ কেটে নতুন চারা লাগানোর কোনও প্রয়োজন নেই।’

বিশিষ্ট পরিবেশবিদ অধ্যাপক মো ইদ্রিস আলী বলেন, ‘যারা ৬ কিলোমিটার রাস্তা করতে ১৮টি গাছ কাটে তারা মানুষ নামের শকুন। জলাবদ্ধতা নিরসনে তাদের দারুণ দক্ষতা আমরা দেখেছি। যারা সিআরবি ধ্বংস করতে পারেনি তারা এখন সিআরবির প্রতিবেশ ধ্বংস করতে চায়। তারা বলছে মাত্র ৪৬টি গাছ কাটা হবে। এটা কেমন মূর্খতা। তারা শতবর্ষী গাছ কেটে চারা লাগাতে চায়। ধিক্কার জানানোর ভাষা আমাদের নেই। অপউন্নয়নের নামে বাণিজ্য থেকে সরে আসুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাগ্রত আছেন। তরুণদের নিয়ে আমরা আন্দোলন করে সিডিএকে সরে আসতে বাধ্য করবো।’

তালিকায় আছে শতবর্ষী গাছও

খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই সড়ক শুধু চট্টগ্রামের নয়। দেশের ও বিশ্বপ্রকৃতির সম্পদ। যা সৃষ্টি করতে পারবেন না তা কেন ধ্বংস করছেন। এই নান্দনিকতা দেশের সম্পদ। সিডিএ’র লোকজন যা বলছেন তা হঠকারিতা। সিআরবির মাটি কামড়ে আমরা পড়েছিলাম। এখানে এক টুকরো মাটিও কাটতে দেওয়া হবে না। নয়তো আমরা প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে এই সম্পদ রক্ষা করবো। অবিলম্বে সিডিএ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ঘোষণা দিন। নিউমার্কেট থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের অনেক বিকল্প আছে।’

সভাপতির বক্তব্যে নাট্যজন ও সাংবাদিক প্রদীপ দেওয়ানজি বলেন, ‘এত বিকল্প থাকতে কেন গাছ কেটে দ্বিতল রাস্তা ধ্বংস করে র‍্যাম্প করতে হবে, সেটা বোধগম্য নয়। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দ্রুত বিকল্প স্থানে র‍্যাম্প করার ঘোষণা না দিলে লাগাতার আন্দোলন করে আমরা টাইগারপাস সিআরবির এই সড়ক ও গাছ রক্ষা করবো।’

বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী বলেন, ‘সিডিএ এ পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব একটি প্রকল্পও করতে পারেনি। ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত ১৫টি পাহাড় কেটে সিডিএ’র স্থপতি প্রকৌশলীরা অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। সিআরবি আমরা আন্দোলন করে রক্ষা করেছি। একজন পিডি কীভাবে সব বড় প্রকল্পের পিডি হন? প্রয়োজনে আরও দীর্ঘ আন্দোলন হবে।’

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ বলেন, ‘রাস্তা করেন, র‍্যাম্প করেন; কিন্তু একটা গাছও কাটতে পারবেন না। আপনারা গাছ কাটতে হলে নাগরিকদের গলা কাটুন আগে। পাহাড় না কেটে, গাছ না কেটে আপনারা কিছু করতে পারেন না? শত বছর বয়সী গাছগুলো খুন করতে দেওয়া হবে না। যেকোনও কিছুর বিনিময়ে চট্টগ্রামবাসী এ গাছ রক্ষা করবে। আমাদের আন্দোলন চলবে।’

লেখিকা মোহছেনা ঝরনা বলেন, ‘প্রকৃতি বাঁচলে আমরা বাঁচবো। একটা গাছ রোপণ করলে ২০-২৫ বছরে বড় হয়। আর তারা শতবর্ষী গাছ কাটতে চাইছে। এটা কেমন কথা! আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এ গাছ বাঁচাতে হবে।’

খাল-নদী রক্ষা কমিটির আলীউর রহমান বলেন, ‘এখানকার ১০৭টি গাছ কাটতে টেন্ডার হয়েছিল। প্রতিবাদের মুখে বন্ধ হয়েছিল। কিছুদিন আগেও পাহাড় কেটেছেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার নামে। এখন গাছ কেটে কীসের উন্নয়ন করছেন? আপনারা আইনের ঊর্ধ্বে নন। বিকল্প অনেক জায়গা আছে। আপনার আমাদের সম্পদ নষ্ট করে কীসের ডিজাইন করছেন। গাছ ও পাহাড় নষ্ট না করে অন্য কোথাও র‍্যাম্প করুন।’

/কেএইচটি/
সম্পর্কিত
যানবাহন বন্ধ করে নগরে বিক্ষোভ, জনজীবন অতিষ্ঠ
নেতার সঙ্গে মামলা বাণিজ্যে জড়িয়েছে পুলিশ, সাংবাদিকের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে বক্তারা
দাবি মানার আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করে সেনা প্রতিনিধিদের পথ অবরোধ চাকরিচ্যুতদের
সর্বশেষ খবর
রংপুরে নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ১৬ নেতার পদত্যাগ
রংপুরে নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ১৬ নেতার পদত্যাগ
দোহায় ব্যর্থ আলোচনা, গাজায় ফের ইসরায়েলের স্থল অভিযান
দোহায় ব্যর্থ আলোচনা, গাজায় ফের ইসরায়েলের স্থল অভিযান
কুমিল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ জনের মৃত্যু
খালেদা জিয়ার সঙ্গে অলি আহমদের সাক্ষাৎ 
খালেদা জিয়ার সঙ্গে অলি আহমদের সাক্ষাৎ 
সর্বাধিক পঠিত
বিমানের চাকা খুলে পড়ার কারণ সম্পর্কে যা জানা গেলো
বিমানের চাকা খুলে পড়ার কারণ সম্পর্কে যা জানা গেলো
চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে লং মার্চ টু জাহাঙ্গীর গেট
চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে লং মার্চ টু জাহাঙ্গীর গেট
পাঁচ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে দেশ অচলের হুঁশিয়ারি শ্রমিকদের
পাঁচ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে দেশ অচলের হুঁশিয়ারি শ্রমিকদের
ঝড়বৃষ্টি দেখে স্বামীকে ফোন, এসে দেখেন পড়ে আছে স্ত্রীর মরদেহ
ঝড়বৃষ্টি দেখে স্বামীকে ফোন, এসে দেখেন পড়ে আছে স্ত্রীর মরদেহ
জামায়াতের দুই নেতাকর্মীকে মারধরের পর গলায় জুতার মালা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ
জামায়াতের দুই নেতাকর্মীকে মারধরের পর গলায় জুতার মালা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ