সৌর বিদ্যুৎচালিত সাইকেল আবিষ্কার করেছেন ফরিদপুরের সাইফুল ইসলাম। তার আবিষ্কৃত এই সাইকেলের সবচেয়ে বড় গুণ, এটি জলে ও স্থলে দুই জায়গায় চলতে সক্ষম। এমনকি সাইকেলে চড়ে পদ্মা নদীও পাড়ি দিয়েছেন। এক কথায় উভচর প্রাণীদের মতো।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পাইকপাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সাইফুল। গুণী এ মানুষটি চাকরি করেন ওষুধ কোম্পানিতে। চাকরির পাশাপাশি নেশা হিসেবেই নতুন কিছু আবিষ্কারের কাজে লেগে থাকেন। অনেক কিছু তৈরির চেষ্টা চলছে তার।
কর্মজীবন শুরু করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সৌর শক্তি আলোর একটি উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে। পরে একটি ওষুধ কোম্পানিতে সিনিয়র মেডিক্যাল প্রমোশন অফিসার হিসেবে যোগ দেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, পঞ্চম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় সৌর বিদ্যুৎচালিত বাস তৈরি করি। ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়াকালীন রকেট ও ড্রোন বানাই। আমার তৈরি করা সাইকেলের হ্যান্ডেল ও ক্যারিয়ারে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল রয়েছে। দুই চাকার দুই পাশে চারটি গোলাকার টিউব। এর সাহায্যে সাইকেলটি পানিতে ভেসে থাকে। সাইকেল চালাতে প্যাডেল ব্যবহার করতে হয় না। কারণ, এটি সৌর বিদ্যুতে চলে। সাইকেলটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। সময় লেগেছে ছয় মাস।
বর্তমানে সৌর বিদ্যুৎচালিত ধান কাটার যন্ত্র ও রিকশা চালানোর যন্ত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন সাইফুল। পাশাপাশি ১৫ জন ধারণক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎচালিত স্পিড বোট বানানোর চেষ্টা করছেন তিনি। যা জলের পাশাপাশি ডাঙায়ও চলবে।
সাইফুল আরও বলেন, আমার এখন একটাই স্বপ্ন। একইসঙ্গে আকাশ এবং জলে চালানোর জন্য একটি প্লেন তৈরি করা। কিন্তু টাকার অভাবে আমার সবকিছু থেমে যেতে পারে।
সাইফুলের বাবা আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা বলেন, আমি তার বাবা হিসেবে গর্ববোধ করি। তার কারণে অনেকেই সম্মান করে আমাকে। আমার ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই এমন। এটা ওটা বানানো নিয়ে পড়ে থাকতো।
স্থানীয় বাগাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান খান জানান, সাইফুলকে সৌর বিদ্যুৎচালিত ড্রোনসহ অনেক নতুন নতুন জিনিসপত্র তৈরি করতে দেখেছি। এছাড়া সে সৌরচালিত সাইকেল চালিয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদী পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু ছেলেটার অনেক মেধা আছে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে আরও অনেক ভালো কিছু করতে পারবে। ওর বিষয়টা নিয়ে অনেক জায়গায় চেষ্টা করেছি, তবে তেমন কারও কোনও সাড়া না পেয়ে আর এগোয়নি।
মধুখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সাইফুল ইসলাম আমাদের উপজেলার গর্ব। তার জন্য অবশ্যই ভালো কিছু কামনা করি। সাইফুল যোগাযোগ করলে আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তফা মনোয়ার বলেন, এরকম প্রতিভাবান ছেলে এই উপজেলায় আছে, তা কেউ কখনও বলেনি। তাই আমার জানা নেই। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।