শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচলকারী ছোট লঞ্চগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বন্ধ হয়ে যাওয়া ৭০টি লঞ্চের প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। লঞ্চ মালিকরাও প্রতিদিন লোকসান গুনছেন। লঞ্চ চালুর বিষয়টি বিবেচনা করতে নৌ-প্রতিন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের প্রতিনিধিরা। তবে লঞ্চ চালুর বিষয়ে নৌ-প্রতিমন্ত্রী খোঁজ নিয়ে বিবেচনা করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
রবিবার (১০ এপ্রিল) নৌ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের প্রেসিডেন্ট মো. বদিউজ্জামান বাদল বলেন বলেন, ‘নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। লঞ্চ চালুর বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। এজন্য তিনি আমাদের কাছে সময় চেয়েছেন। এখন আমরা তার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি।’
তবে দাবি মানা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বদিউজ্জামান আরও বলেন, নৌ প্রতিমন্ত্রী একমাত্র আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না দিলে ও বিষয়টি বিবেচনা না করলে আমরা প্রেস কনফারেন্স করবো। সব লঞ্চ মালিকদের ডাকবো, সিদ্ধান্ত নেবো। তাদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। কারণ মন্ত্রী বিবেচনা না করলে আমাদেরতো কোনও পথ খোলা থাকবে না।
লঞ্চ মালিক শ্রমিকদের কষ্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, লঞ্চ মালিক শ্রমিকরা খুব কষ্টে আছে। তাদের অবস্থা খুবই করুন। তাদের আয় উপার্জনের অন্য কোনও ব্যবস্থা নেই। সারা দেশে প্রায় পাঁচশ’ সানকিং ডেকের লঞ্চ আছে। সবগুলো বন্ধ হয়ে গেলে আরও অনেকে বেকার হয়ে পড়বে।
এর আগে, ২০ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ রূপসী-৯ এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এম.এল আফসার উদ্দিন ডুবে ১০ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর থেকে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়াতে নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচ রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। এই ঘটনার চার দিন পরে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ নৌপথে এসটি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত নামে সি-ট্রাক চালু করা হয়। এর একদিন পরে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর নৌপথে ঢাকা থেকে আগত ‘এমভি নিউ আরিফ’ নামে দোতলা লঞ্চ চালু করা হয়। তবে নারায়ণগঞ্জের ছোট লঞ্চগুলো অনিরাপদ বলে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল থেকে সাতটি রুটে প্রতিদিন ৭০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করতো। এসব লঞ্চে প্রায় পাঁচশ’র বেশি স্টাফ (শ্রমিক) কাজ করতেন। সাতটি নৌপথ হলো নারায়ণগঞ্জ-হোমনা উত্তর থানা, নারায়ণগঞ্জ-মতলব থানা, নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ-শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-তালতলা ও নারায়ণগঞ্জ-বাঞ্ছারামপুর। তবে তালতলা ও বাঞ্ছারামপুর নৌপথে নাব্য সংকটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। এসব নৌপথে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।