এবার শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন ডামুড্যা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকার। সোমবার (২২ আগস্ট) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে এই হুমকি দেন।
ভাইরাল হওয়া ওই ডিভিওতে শিক্ষককে বলতে শোনা গেছে, ‘ডিসি (শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান) আমাকে ইউএনও অফিসে অপমান করেছে। আমি তার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করবো। এমপির (নাহিম রাজ্জাক) সায় আছে এতে। ডিসি হইছে তাতে কী হইছে। এই চাকরি না করলে কী হইবো।’
জানা গেছে, সোমবার (২২ আগস্ট) ডামুড্যা উপজেলা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন জেলা প্রশাসক। ডামুড্যা উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও সাংবাদিককে গালিগালাজের বিষয়টি ওঠে। তখন প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকার কথা বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দেন জেলা প্রশাসক। এতে ক্ষুব্ধ হন তিনি। এরপর ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ডামুড্যা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিবা খানম, সরকারি আব্দুর রাজ্জাক কলেজের অধ্যক্ষ মো. জহির উল্লাহ, উপজেলার চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন মাঝি, ডামুড্যা পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম রাজা ছৈয়াল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বাবুল সিকদার, ডামুড্যা থানার এসআই সিরাজুল ইসলামসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, রাজনীতিবিদ, উপজেলার বিভিন্ন দফতরের প্রধান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা।
উল্লেখ্য, শরীয়তপুরের ডামুড্যা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রথিকান্ত মিস্ত্রির বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত ও তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে ওই শিক্ষকের বিষয় জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকার স্থানীয় দুই সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন হিরু ও আশিকুর রহমান হৃদয়কে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, মারধর ও হুমকি দেন। এমন একটি অডিও ক্লিপও যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই ঘটনায় শুক্রবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আশিকুর রহমান বাদী হয়ে ডামুড্যা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বলেন, ‘রথিকান্ত মিস্ত্রি যে কাজটি ঘটিয়েছে- সেই কাজে সাহস জুগিয়েছেন প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকার। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠেছিল।’
মামলা ও ভিডিওটির বিষয়ে জানতে ডামুড্যা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মামলার হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন ‘এই বিষয়ে কিছু বলার নেই’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র শর্মা বলেন, ‘আগের দুটি ঘটনায় (যৌন হয়রানি ও সাংবাদিককে গালিগালাজ) জেলা প্রশাসক আমাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই ঘটনায় তদন্ত করেছি। জেলা প্রশাসক স্যারকে মামলার হুমকি দিয়েছে সেটা আমার জানা নেই। আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনছি।’