X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাড়লেও সক্ষমতা বাড়েনি মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের

মো. রফিকুল ইসলাম, মাদারীপুর
১৫ মার্চ ২০২৩, ০৯:০০আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩, ০৯:০০

দিন দিন শিল্পকারখানা, উঁচু ভবন ও স্থাপনা বাড়লেও কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়েনি মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের। দক্ষ জনবল ও আধুনিক সরঞ্জামের সংকট দীর্ঘদিনের। ছোট ছোট অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বিপাকে পড়েন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ অবস্থায় আগুন নেভানো ও উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাদের।

জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় সূত্র জানায়, আগের চেয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে বাড়েনি দক্ষ জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম। কোনোমতে চলছে ফায়ার স্টেশনগুলোর কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার পাঁচ উপজেলায় পাঁচটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় একটি, কালকিনিতে একটি, শিবচরে একটি, রাজৈর উপজেলায় একটি ও টেকেরহাটে একটি। সদর, কালকিনি ও টেকেরহাটের ফায়ার স্টেশনটি ‘বি’ শ্রেণির। শিবচর ও রাজৈরের ফায়ার স্টেশনটি ‘সি’ শ্রেণির। তবে ডাসার উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নেই।

শিবচর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন

জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রথম শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশনগুলোতে ৩৫ জন করে জনবল থাকে। কিন্তু এই জেলায় প্রথম শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নেই। আছে দ্বিতীয় (বি) ও তৃতীয় (সি) শ্রেণির স্টেশন। জেলার পাঁচ ফায়ার স্টেশনে বিভিন্ন পদে ১২৭ জন থাকার কথা থাকলেও আছেন ১০৫ জন। দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশনগুলোতে জনবল থাকার কথা ২৭ জন করে। তৃতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশনগুলোতে জনবল থাকার কথা ১৬ জন করে। সেখানে জনবল সংকট আছে। এর মধ্যে সদর স্টেশনে ৩১ পদে কর্মরত আছেন ২৯ জন। কালকিনি স্টেশনে ২৭ পদে ২৭ জন কর্মরত আছেন। শিবচর স্টেশনে ১৬ পদে ১৩ জন কর্মরত আছেন। রাজৈর স্টেশনে ১৬ পদে ১৬ জন ও টেকেরহাট স্টেশনে ২৭ পদে ১৯ জন কর্মরত আছেন। তবে সদর, শিবচর ও টেকেরহাট স্টেশনে স্টেশন অফিসার নেই।

সদরের ফায়ার স্টেশনটি ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে কার্যক্রম। কিছুদিন আগে ভবনের দেয়ালে রং ও চুনের কাজ করলেও যেকোনো সময় ভবন ধসে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।

এসব ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগের চেয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনেক বেড়েছে। তবে জেলায় পাঁচটি ফায়ার স্টেশন থাকলেও কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়েনি। আগুন নেভানো ও উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট আছে। জনবল যা আছে, তা পর্যাপ্ত নয়। ছোট ছোট অগ্নিকাণ্ড দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও বড় দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা প্রকাশ পায়।

সদর স্টেশনে থাকা লেডার দিয়ে দুই-তিন তলার আগুন নেভানো যায়। এর চেয়ে উঁচু ভবনে আগুন লাগলে, তা দিয়ে নেভানো যায় না। অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য জরুরি ভিত্তিতে শিবচর স্টেশনে পানিবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স দরকার। দীর্ঘদিনেও তা ব্যবস্থা করা হয়নি। এ ছাড়া সবগুলো স্টেশনের গাড়ি পুরাতন। কিছু আছে অকেজো। এগুলো সংস্কার করা জরুরি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কয়েকটি স্টেশনে জাম্বু কুশন, লাইট ডিউটি রেসকিউ বোট, ড্রাইভিং অ্যাপারেটাস, এয়ার কম্প্রেসার মেশিন, রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং ইউনিট, হেভি ডিউটি লাইট ইউনিট, টোয়িং ভেহিক্যাল, পোর্টেবল পাম্প, বিদ্রিং অ্যাপারেটাস ও স্মোক ইজেক্টরসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এজন্য বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় হিমশিম খেতে হয়।

শিবচর ফায়ার স্টেশনের লিডার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে শিবচর উপজেলা। আমাদের যে গাড়িটি আছে, এটা পৌর এলাকার মধ্যে চলাচলের উপযোগী। স্টেশনের জন্য একটি পানিবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স জরুরি ভিত্তিতে দরকার।’

ফায়ার সার্ভিসের কালকিনি কার্যালয়

দক্ষ জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কথা স্বীকার করেছেন জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‌‘আমাদের যেসব স্টেশন ‘সি’ শ্রেণিতে রয়েছে সেগুলোকে ‘বি’ ও যেগুলো ‘বি’ শ্রেণিতে আছে সেগুলোতে আরও উন্নত করা প্রয়োজন। এটি হলে জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম যুক্ত হবে।’

টেকেরহাটের ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা নদী ও স্থলপথে কাজ করেন জানিয়ে সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদী ও স্থলপথে কোথাও আগুন লাগলে স্পিডবোট, জাহাজ, ডুবুরি ও গাড়ি রয়েছে তাদের। তা দিয়ে তা নেভানো যায়। তবে উঁচু ভবনে আগুন লাগলে তা নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া সদর স্টেশনের কার্যক্রম চলছে জরাজীর্ণ ভবনে। এটি সংস্কার করা প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সদরের পুরান বাজারে আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এখানের সড়কগুলো প্রশস্ত না হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকানো যায় না। বিষয়টি পৌর মেয়রকে জানিয়েছি। পাশাপাশি জেলার সব স্টেশনে জনবল ও সরঞ্জাম বাড়ানোর জন্য ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’

/এএম/
সম্পর্কিত
আগুনে পুড়লো তেলসহ ট্যাংকলরি, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ
আগুনে পুড়ে মারা গেলো কৃষকের ৪ মহিষ
চট্টগ্রামে ফিরিঙ্গিবাজার বস্তিতে আগুন
সর্বশেষ খবর
দোকান সাজাতে গিয়ে গানচিত্র নির্মাণ!
দোকান সাজাতে গিয়ে গানচিত্র নির্মাণ!
বিতর্কিত দ্বীপ নিয়ে জাপানের কূটনীতিককে তলব দ. কোরিয়ার
বিতর্কিত দ্বীপ নিয়ে জাপানের কূটনীতিককে তলব দ. কোরিয়ার
সন্তানদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে চা বিক্রেতা মনিরুজ্জামানের
সন্তানদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে চা বিক্রেতা মনিরুজ্জামানের
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
সর্বাধিক পঠিত
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ১৮ এপ্রিল
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ১৮ এপ্রিল
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি