X
রবিবার, ১২ মে ২০২৪
২৯ বৈশাখ ১৪৩১
বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

১৮ মাসের কাজ ১৭ বছরেও শেষ করেনি কাদের সিদ্দিকীর প্রতিষ্ঠান

এনায়েত করিম বিজয়, টাঙ্গাইল
০৬ জুলাই ২০২৩, ০৮:০১আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৩, ১৯:৫৪

১৭ বছরেও শেষ হয়নি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। ১৮ মাসে শেষ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ সময়েও আলোর মুখ দেখেনি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাবাসী। ইতোপূর্বে কাজ শেষ করার দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছে সচেতন মহল। কিন্তু এতেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। এ নিয়ে সবার মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৫ সালে বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ওই বছরের ১০ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরনো একতলা ভবন সংস্কারের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোনার বাংলা প্রকৌশল সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশের শর্ত অনুযায়ী, ১৮ মাসে অর্থাৎ ২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিলের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু প্রায় ১৭ বছরেও প্রকল্পের কাজটি শেষ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

দরপত্র অনুযায়ী, চার কোটি ৯৬ লাখ ১০ হাজার ৪৪৯ টাকায় দুটি চারতলা, একটি দোতলা ও একটি একতলা ভবন নির্মাণ এবং পুরনো ভবন সংস্কারের কথা ছিল। কাজ চলমান দেখিয়ে ২০০৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঠিকাদার তিন কোটি ৩৯ লাখ ৭৭ হাজার ৮২ টাকা তুলে নেন। এ পর্যন্ত ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

ইতোপূর্বে কাজ শেষ করার দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছে সচেতন মহল

এদিকে, পরিত্যক্ত ভবনগুলো মাদকসেবীদের দখলে রয়েছে। দিনরাত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও যুবকদের আনাগোনা থাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে। এ ছাড়া নতুন ভবনের জন্য বরাদ্দকৃত যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হচ্ছে স্টোর রুমে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক চিকিৎসক জানান, পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে মাদকসেবীরা দলবেঁধে মাদক সেবন করে। তাদের কিছু বলাও যাচ্ছে না। এখানে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে রোগী ও চিকিৎসকরা আতঙ্কে থাকেন।

উপজেলাবাসীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কাজ দ্রুত শেষ করা জরুরি বলে জানালেন উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা সুলতানা রুবি। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেছি। নির্মাণকাজ শেষ হলে বাসাইল ছাড়াও আশপাশের উপজেলার মানুষজন উপকৃত হবেন।’

কাজ শেষ করার বিষয়ে জেলা প্রশাসক এবং এমপির সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানালেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শার্লী হামিদ। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কাজ শেষ করতে নতুন করে বাজেট এসেছে। যেহেতু এখনও সোনার বাংলা কনস্ট্রাকশনের কাছে কাজ রয়ে গেছে। সে জন্য নতুন বাজেট পেলেও কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এটিকে আধুনিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হিসেবে তৈরির কথা। কিন্তু এনওসি (অনাপত্তিপত্র) না পেলে বাজেট ফেরত যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়মে এখানে চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসক থাকলেও বসার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। ভালো রুমের অভাবে উন্নত যন্ত্রপাতি বসানো যাচ্ছে না। এটির নির্মাণকাজ শেষ হলে অনেক উপকৃত হতেন উপজেলার মানুষজন।’  

এত বছরেও কাজ শেষ না হওয়া দুঃখজনক উল্লেখ করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে একাধিকবার গিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পরিদর্শন করেছেন। শুনেছি, পুনরায় টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু কাজ শুরু হয়নি।’  

এ পর্যন্ত ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মিনহাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটির দায়িত্ব পেয়েছিল। কাজ শেষ না করায় উচ্চপর্যায়ে কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে বসা হয়েছিল। তিনি সেখানে বলেছিলেন, কাজটি করতে গিয়ে তার ক্ষতি হয়েছে; এ জন্য ক্ষতিপূরণ চান। ক্ষতিপূরণ দিলে তিনি কাজ শেষ করবেন। ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় শেষ করছেন না। আবার সম্মতি না দেওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী, অন্য ঠিকাদারকে কাজটি দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে, তা বলতে পারছি না।’

এ ব্যাপারে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সোনার বাংলা প্রকৌশল সংস্থার প্রকৌশলী ফরিদ হোসেনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

স্থানীয় সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমিও তাগাদা দিচ্ছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলতেছে, কাজ শেষ করবে। গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না।’

/এএম/
সম্পর্কিত
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
শিবনারায়ণের চোখে আলো দেখছেন মশিউর ও কালাম
আমান উল্লাহ আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আপিল বিভাগ
সর্বশেষ খবর
ইন্দোনেশিয়ায় আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে নিহত ২৮
ইন্দোনেশিয়ায় আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে নিহত ২৮
রাজশাহীর আম বাজারে আসার তারিখ নির্ধারণ
রাজশাহীর আম বাজারে আসার তারিখ নির্ধারণ
তারকাদের মা ভাবনা
মা দিবসতারকাদের মা ভাবনা
হেযবুত তওহীদের নারীকর্মীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি
হেযবুত তওহীদের নারীকর্মীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি
সর্বাধিক পঠিত
ইএফডিতে নজর দিয়ে হিরো হতে পারেন এনবিআরের চেয়ারম্যান
ইএফডিতে নজর দিয়ে হিরো হতে পারেন এনবিআরের চেয়ারম্যান
এসএসসি পরীক্ষার ফল জানা যাবে যেভাবে
এসএসসি পরীক্ষার ফল জানা যাবে যেভাবে
টাকা দিয়ে কেনা সনদের তালিকা পেয়েছি: ডিবি হারুন
টাকা দিয়ে কেনা সনদের তালিকা পেয়েছি: ডিবি হারুন
সোনার দাম আরও বাড়লো
সোনার দাম আরও বাড়লো
আজ বিশ্ব মা দিবস
আজ বিশ্ব মা দিবস