২৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণ, ৬৫ শতাংশ বেসিক ও ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের দাবিতে গাজীপুরের চৌরাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন পোশাকশ্রমিকরা। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির গাজীপুর শাখার উদ্যোগে এ সমাবেশ করা হয়েছে।
গাজীপুরের সংগঠক হযরত বিল্লালের সভাপতিত্বে এবং মোহাম্মদ আরশাদুলের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, হযরত বিল্লাল, বিল্লাল শেখ, রূপালী আক্তার, মো. হাবীব, লিজা আক্তার ও অন্যান্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
সভায় তাসলিমা আখতার বলেন, “মজুরি বোর্ডের মেয়াদ শেষ হতে বাকি মাত্র ১৬ দিন (৯ অক্টোবর পর্যন্ত)। ইতোমধ্যে ১১ সংগঠনের জোট ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন’ ২৫ হাজারের দাবি এবং অন্যান্য সকল জোট তাদের প্রস্তাবনা বোর্ডে জানিয়েছে। কিন্তু পাঁচ মাস পার হলেও এখনও বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনও নতুন মজুরির প্রস্তাব আসেনি। এই দীর্ঘসূত্রিতা শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়ে তুলছে।”
তিনি বলেন, ‘পোশাকশ্রমিকসহ শ্রমজীবি মানুষ বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খাচ্ছে। শ্রমিকের তরকারি হিসেবে একমাত্র ভরসা যে আলু, তার দাম বর্তমানে ৫০ টাকা কেজি। দাম সরকার ধরে দিলেও বাজারে এখনও ডিম ১৫০-১৬০ টাকায় এবং পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়। শ্রমজীবির আমিষ হিসেবে পরিচিত সস্তা গুঁড়া মাছ, পাঙাস মাছ, ফার্মের মুরগি কিংবা ডিম আগের মতো পরিমাণে কিনতে পারছেন না পোশাকশ্রমিকরা। এমন পরিবারও আছে যারা এক পোয়া গুঁড়া মাছ ভাগ করে দুই দিন খাচ্ছে। কখনও সেটুকু আমিষও জুটছে না। এ অবস্থায় খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে শ্রমিকরা। ফলে অপুষ্টিতে ভুগছে তারা। এই কঠিন সময়ে পোশাকশ্রমিকদের বেতন ২৫ হাজারের নিচে হলে বাঁচা দায় হবে।’
আগামী ১ অক্টোবর মজুরি বোর্ডের ৩য় সভায় মালিক ও সরকার পক্ষ থেকে মজুরি প্রস্তাবের কথা আছে। ২০১৮ এর মতো শ্রমিককে এবারও মজুরি কম দেবার অপচেষ্টার আশঙ্কা প্রকাশ করেন বক্তারা। তারা বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে মালিকদের আয় যতটা বেড়েছে সেই হারে শ্রমিকের মজুরি বাড়ার বদলে প্রকৃত আয় কমেছে। বরং গত পাঁচ বছরে দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমিকরা দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতির দিকে নিমজ্জিত হচ্ছেন। খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত সাড়ে ১১ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ হয়েছে। সরকারি তথ্যানুযায়ী কেবল খাদ্যে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ১২.৫৪% আর সার্বিক মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০%। মূল্যস্ফীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে শ্রমিক ও শ্রমজীবির ওপর। ফলে ২০১৮ সালে মালিকপক্ষ যেভাবে মজুরি নির্ধারণ করেছিল এবারও সেই হারে প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সবকিছু বিবেচনায় কেবল খেয়ে-পরে কোনোমতে বাঁচতেই ২৫ হাজার টাকা মজুরি প্রয়োজন।’
তাদের কথায়, ‘কেবল মজুরি বাড়ালেই হবে না। মজুরি কাঠামোতেও পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ, একজন শ্রমিকের মোট মজুরির মধ্যে মূল মজুরি বা বেসিকই আসল। মূল মজুরির হারের ওপর নির্ভর করে ওভারটাইম, গ্র্যাচুইটি, বাৎসরিক ছুটি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, ইনক্রিমেন্টসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। মূল মজুরি কমলে শ্রমিকরা সব কিছুতেই বঞ্চিত হন। এবার এই কৌশল শ্রমিকদের ওপর চাপানো চলবে না।’
গত মজুরি বোর্ডে ২০১৮ সালে নির্ধারিত মোট বেতন ৮০০০ টাকার মধ্যে মূল মজুরির হার ছিল ৫১% । কিন্তু ১৯৯৪ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বেসিকের পরিমাণ ছিল ৬৫% থেকে ৬৭%। ২০১০ এর পর থেকে বেসিকের হার কমিয়ে শ্রমিকদের বঞ্চিত করার নতুন কৌশল নিয়েছে মালিকপক্ষ। এবার যাতে শ্রমিকদের কোনোভাবেই আর বঞ্চিত করা না হয় তার জন্য মোট মজুরির কমপক্ষে ৬৫% মূল বা বেসিক করার আহবান জানিয়েছেন বক্তারা।
২০১৩ সালে মূল মজুরি ৬৭% থেকে একধাক্কায় ৫৭% করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে বেসিকের পরিমাণ আরও কমিয়ে ৫১% এ নামানো হয়।