গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় আলিফ গ্রুপের তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার গেটে এসে এ সংক্রান্ত নোটিশ দেখতে পান। এরপরই মূল ফটকের সামনেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
বন্ধ কারখানাগুলো হলো—স্বাধীন গার্মেন্টস লিমিটেড, স্বাধীন ডাইং লিমিটেড ও স্বাধীন প্রিন্টিং লিমিটেড। বেআইনিভাবে ধর্মঘট করে কাজ বন্ধ রাখার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে বলে জানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ।
শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, স্বাধীন গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বেশ কিছুদিন ধরেই ঈদ বোনাস, ছুটির টাকা ও চলতি মাসের অর্ধেক বেতন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। এ অবস্থায় বুধবার সকাল থেকে আট শতাধিক শ্রমিক কর্মবিরতি শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সকালে মালিকপক্ষ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে একটি নোটিশ দেয়।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে ‘এত দ্বারা স্বাধীন গার্মেন্টস,‘স্বাধীন ডাইং এবং স্বাধীন প্রিন্টিং (প্রা.) লিমিটেডে কর্মরত সব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকবৃন্দের উদ্দেশ্যে জানানো যাইতেছে যে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬–এর ১৩/১ ধারা অনুযায়ী, আগামী ২০ মার্চ বৃহস্পতিবার হতে কারখানার সকল কার্যক্রম (No Work No Pay)–এর অধীনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো।’
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ‘উল্লেখ্য যে ১৭ মার্চ হইতে অদ্য ১৯ মার্চ পর্যন্ত কারখানার সকল শ্রমিক সংঘবদ্ধ হয়ে বেআইনিভাবে ধর্মঘট করে কাজ বন্ধ রাখে। যার ফলশ্রুতিতে কারখানা অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। এমতাবস্থায় কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয় বিধায় স্বাধীন গার্মেন্টস, স্বাধীন ডাইং এবং স্বাধীন প্রিন্টিং (প্রা.) লিমিটেডের কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে সকল কার্যক্রম অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলো।’
শ্রমিকরা জানান, ঈদ আসলেই মালিক এবং কারখানার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কেন আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, জানি না। আশপাশের কারখানার শ্রমিকরা যখন তাদের সন্তান এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত তখন আমরা আন্দোলন করছি। সারা বছর কাজ করি কারখানার লাভের জন্য। আর ঈদ আসলেই মালিক পক্ষ আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন।
স্বাধীন গার্মেন্টস লিমিটেডের প্রিন্টিং সেকশনের ইনপুটম্যান রাকিবুল হাসান বলেন, ‘আমরা গত কয়েকদিন ধরে ঈদ বোনাস, ছুটির টাকা, চলতি মাসের অর্ধেক বেতনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবির কোনও গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। এটি অমানবিক।’
কারখানার স্যাম্পলম্যান শামসুদ্দিন বলেন, ‘স্টাফরা গত পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন পাবে। কিন্তু তারাতো শ্রমিকদের মতো বলতে পারছেন না। সামনে ঈদ তাদেরও পরিবার পরিজন আছে। সারা বছর কাজ করে ঈদের সময় যদি এমন হয়রানির শিকার হতে হয়, তাহলে এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কী হতে পারে।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে শ্রমিকরা ঈদ বোনাস, ছুটির টাকা ও চলতি মাসের অর্ধেক বেতনের দাবি জানিয়ে আসলেও কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত জানায়নি। কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধান না করে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলছেন ২৫ মার্চ ঈদ বোনাস দেবে এবং ২৭ মার্চ চলতি মাসের অর্ধেক বেতন দেবে। শ্রমিকরা কারখানা কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি প্রত্যাখ্যান করে কর্মবিরতি পালন করছেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ওই এলাকায়।’