X
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
১১ আষাঢ় ১৪৩২

শিরক অজুহাতে কেটে ফেলা হয়েছে শতবর্ষী বট গাছ 

মাদারীপুর প্রতিনিধি
০৬ মে ২০২৫, ১৯:০৭আপডেট : ০৬ মে ২০২৫, ১৯:০৭

শিরক ও বিদআতের অজুহাতে কেটে ফেলা হয়েছে শত বছরের বটগাছ। এই বট গাছের গোড়ায় মোমবাতি জ্বালিয়ে ও লাল কাপড় বেঁধে অনেকেই মানত করতেন- এটি ইসলামের দৃষ্টিতে শিরক বা বিদআত উল্লেখ করে স্থানীয় আলেম-ওলামা ও মুসল্লিরা গাছটি কেটে ফেলেছেন। পুরনো এই গাছ কাটার দৃশ্য দেখতে ভিড় জমিয়েছেন আশপাশের অনেকেই।

মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের ‘আলম মীরার কান্দি’ এলাকায় কেটে ফেলা হয় শত বছরের এই বট গাছ। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি নন স্থানীয় আলেমরা।

স্থানীয়রা জানান, বট গাছটি ‘অলৌকিক ক্ষমতার’ অধিকারী বলে বিশ্বাস করতেন অনেকে। এ কারণে প্রাচীন এই বটগাছের গোড়ায় অনেকে মোমবাতি জ্বালিয়ে মানত করতেন বলে জানান স্থানীয়রা। মনের বাসনা পূর্ণ করতে শতবর্ষী বট গাছের গোড়ায় মোমবাতি, আগরবাতি, নতুন গামছা, কাপড় ও মিষ্টি দিতেন এলাকার মানুষ। তাদের বিশ্বাস, এখানে মানত করলে পূর্ণ হয় মনের আকাঙ্ক্ষা।

বট গাছটি ওই এলাকার কুমার নদের পাশে থাকায় মানুষের প্রশান্তির একটি স্থান ছিল। অনেকেই কৃষিকাজ করে এই গাছে ছায়ায় বিশ্রাম নিতেন। নদী পার হতে এলে গাছের নিচে অপেক্ষা করতেন।

সোমবার (৫ মে) দুপুরে কুমার নদের পাশে থাকা শত বছরের বট গাছটি করাত দিয়ে কেটে ফেলা হয়। এরই একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। চরঘুনসি এলাকার বাসিন্দা আব্দুর সাত্তার হাওলাদারের মালিকানাধীন গাছটি ১৫০০ টাকায় আলেমরা কিনে এটি কেটে ফেলেন বলে জানান স্থানীয়রা। 

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক স্থানীয় বাসিন্দা বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ। ঘটনার তদন্তে নেমেছেন তারা।

শিরক অজুহাতে কেটে ফেলা হয়েছে শতবর্ষী বট গাছ 

মাহবুব নামে একজন বলেন, বট গাছটি কারও কোনও বাধা হওয়ার কারণ নাই। কেন কী কারণে গাছটি কাটা হলো তাও জানি না। হঠাৎ শুনি গাছটি কেটে ফেলেছে। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়।

শিরখাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্থানীয় আলেমরা বট গাছটি কেটে ফেলেছেন। তবে গাছটি কার নেতৃত্বে কাটা হয়েছে সে তথ্য আমি এখনও পাইনি।

তিনি আরও বলেন, অনেক স্থানীয় বাসিন্দাই মনে করছেন, গাছটি কাটা ঠিক হয়নি। তবে তারা ভয়ে কথা বলছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল সিকদার নামে একজন বলেন, প্রচণ্ড রোদে অনেকে এই গাছের নিচে ছায়ায় বসে থাকতেন। তাছাড়া সৌন্দর্যের দিক থেকেও বৃক্ষটি ছিল চোখে পড়ার মতো। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি শত শত পাখির অভয়ারণ্য ছিল এ গাছ। এভাবে বৃক্ষটি একেবারে কেটে ফেলা ঠিক হয়নি।

শিরক অজুহাতে কেটে ফেলা হয়েছে শতবর্ষী বট গাছ 

বট গাছ কাটায় আলেম-ওলামাদের সঙ্গে অংশ নেওয়া আব্দুল কুদ্দুস নামে এক স্থানীয় মুসল্লি বলেন, এই বট গাছে মিষ্টি, শিরনি দেয়, লাল কাপড় দিয়ে প্যাঁচায়, এটাকে মনে করে সৃষ্টিকর্তা, দেবতা, আল্লাহ মনে করে, যার কারণে এটা শিরক, এটা একটা গোনাহের কাজ। এই গোনাহের কাজ যাতে না হয় এই কারণে স্থানীয় আলেম ও স্থানীয় ভাইব্রাদারা মিলে কাজটি কেটেছি। তবে আমরা জানি, একটা গাছ প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন দেয়। আমরা সবাইকে আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা এখানে তিনটি গাছ রোপণ করবো। আমরা জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, যেহেতু গাছটির জন্য গোনাহের কাজ হচ্ছে, তাই গাছটি কেটে ফেলেন ও আমাদের মসজিদে ১৫০০ টাকা দিয়েন। তবে তিনি স্বীকার করেন, গাছ কাটার সময় সঙ্গে ছিলাম।

মাদারীপুর বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গেছি ও আশপাশের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে আগে যে ঘটনা নিয়ে গাছটি কাটার পরিকল্পনা ও বেশিরভাগ গাছের ডালপালা ও বেশিরভাগ অংশ কেটে ফেলেছে। সেটা এখন জমির মালিক সাত্তার বলেছেন, আমার জমির ওপর গাছ আমি ১৫০০ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। আমার ধারণা, ঘটনা আগেরটাই। তবে এখন জমির মালিককে ম্যানেজ করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারকে জানিয়েছি এবং তদন্ত করা হচ্ছে।’

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘বিষয়টি গতকাল রাতে জানতে পেরেছি। এ ঘটনার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদেরকে ডাকা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে পরে বিষয়টি আপনাদেরকে জানাতে পারবো।’

/এফআর/
সম্পর্কিত
সেই ওসির সাসপেন্ড ও ঘটনার তদন্ত চান শিক্ষক মাহমুদুল হক
নূরুল হুদাকে আটকের সময় মব, আইনশৃঙ্খলার কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা: উপদেষ্টা
স্ত্রীর লাথিতে স্বামী নিহত, শিশুসন্তানসহ কারাগারে নারী
সর্বশেষ খবর
জাতীয় সনদ তৈরিতে সবার পক্ষ থেকে ছাড় দিতে হবে: ড. আলী রীয়াজ
জাতীয় সনদ তৈরিতে সবার পক্ষ থেকে ছাড় দিতে হবে: ড. আলী রীয়াজ
রাইস কুকারে রান্না করতে গিয়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
রাইস কুকারে রান্না করতে গিয়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
টিটুকে সরিয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত নতুন আইনজীবী নিয়োগ ট্রাইব্যুনালের
টিটুকে সরিয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত নতুন আইনজীবী নিয়োগ ট্রাইব্যুনালের
পাঁচ দিনে কত আয় করলো ‘সিতারে জামিন পার’
পাঁচ দিনে কত আয় করলো ‘সিতারে জামিন পার’
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ সুবিধার সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি
সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ সুবিধার সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি
ক্রুদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা জারি বিমানের
ক্রুদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা জারি বিমানের
নির্বাচনি সমঝোতার পথে পাঁচ ধর্মভিত্তিক দল
নির্বাচনি সমঝোতার পথে পাঁচ ধর্মভিত্তিক দল
সিনেমা: হাদ আছে হু আছে, দুধ-বাটি নাই!
সিনেমা: হাদ আছে হু আছে, দুধ-বাটি নাই!
বদলির আদেশ ছিঁড়ে এনবিআরে প্রতিবাদ
বদলির আদেশ ছিঁড়ে এনবিআরে প্রতিবাদ