X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরায় ব্যাপক ক্ষতি, বাঁধ ভাঙার শঙ্কা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
৩০ জুলাই ২০২১, ১৩:১১আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২১, ১৩:১১

নিম্ন চাপের প্রভাবে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে রয়েছে উপকূলের বাসিন্দারা। রোপা আমনের বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে শতাধিক মাছের ঘের, পুকুর ও ঘরবাড়ি।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) বিকাল থেকে বুধবার (২৮ জুলাই) পর্যন্ত ৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস। 

টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণে সাতক্ষীরার সাত উপজেলার অধিকাংশ অঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। এর মধ্যে আশাশুনি ও শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকার বাঁধ ভাঙার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে আতংকে রয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। এছাড়া তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে ভাসছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার নিম্নাঞ্চলও পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ভেসে গেছে জমির ফসল, মাছের ঘের ও পুকুর।

বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে উপকূলের বাসিন্দারা

সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী ও ঝাউডাঙা ইউনিয়নের বিলগুলোতে সদ্য রোপা আমন ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। 

সাতক্ষীরা পৌরসভা রাজার বাগান এলাকার আব্দুল জলিল বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ধানের বীজতলা, পুকুর, খাল-বিল তলিয়ে গেছে। আমার বড় একটি আম গাছ উপড়ে পড়েছে।’

প্রতাপনগরের সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জীবনে শান্তি নেই। কয়দিন আগে ঘূর্ণিঝড়ের ইয়াসের পানি নেমে গেলো।  টানা বৃষ্টিতে পুরো এলাকা আবারও পানিতে একাকার হয়ে গেছে।’
 
প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, গত দুই দিনের ভারী বর্ষণে পুরো ইউনিয়নের মানুষ আবারও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আম্পানের নয় মাস পানিবন্দি ছিল পুরো ইউনিয়নের মানুষ। ইয়াসের পর এখনও কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। এই বৃষ্টিতে আবারও ক্ষতি হয়ে গেলো। এই এলাকায় মৎস্য ঘের পুকুর ঘর তলিয়ে সব একাকার হয়ে গেছে।’

গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, বর্ষার পানি পুরো এলাকায় থই থই করছে। মাছের ঘের, পুকুর সব একাকার হয়ে গেছে। আমার ইউনিয়নের চারদিকে নদীতে ভাঙন আতংকে আছি। তিন নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় বাঁধ ঝুকিপূর্ণ। যেকোনও সময় বাঁধ ভেঙে খোলপেটুয়া নদীর পানি প্রবেশ করতে পারে।’

তালা উপজেলার আব্দুল জব্বার বলেন, ‘কপোতাক্ষের বাঁধসহ বিভিন্ন গ্রাম ও বিল পানিতে ডুবে হয়েছে। কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে। এসব এলাকার বিলগুলোতে সদ্য রোপা আপন ও বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পানের বরজেরও ক্ষতি হয়েছে।’

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নূর খান বাবুল বলেন, পৌরসভার পানি নিষ্কাশন সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতায় নাকাল হচ্ছে বছরের পর বছর। বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা শহরের পৌরসভার রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমল্লারডাঙ্গী, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, কামাননগর, কামাননগর, পুরাতন রাজারবাগান, বদ্দিপাড়া কলোনি, ঘুড্ডির ডাঙি, পুরাতন সাতক্ষীরা, কাটিয়া মাঠপাড়া, মাছখোলা, ডায়েরবিল ও রথখোলাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। প্লাবিত এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালি ও রমজান নগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা, মথুরেশপুর ও ভাড়াশিমলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে ডুবে গেছে।

ডুবে গেছে শতাধিক মাছের ঘের, পুকুর ও ঘরবাড়ি

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দিন এভাবে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে বলে জানান তিনি। 

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, ভারী বর্ষণে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে এক হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে আউশ বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির সদ্য রোপা আমন ও সাড়ে ৩০০ হেক্টর সবজি। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হোসেন খান বলেন, টানা বৃষ্টিতে আশাশুনি সদর, প্রতাপনগর খাজরা ও আনুলিয়া বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার মাছের ঘের। এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনম আবু জর গিফারী বলেন, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ২০ টন চাল দেওয়া হয়েছে। মৎস্য ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ সম্ভব হয়নি।

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর মোটরসাইকেল বহরে বোমা হামলা
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী