X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রহিমা ‘নিখোঁজ’ মামলায় গ্রেফতাররা মুক্তি পাবেন কবে?

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:৩১আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:০৭

খুলনার আলোচিত নিখোঁজ রহিমা বেগম উদ্ধারের ছয় দিন অতিবাহিত হলেও ওই মামলায় গ্রেফতারদের জামিন হয়নি। গ্রেফতার হওয়াদের স্বজনরা এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর থেকে জীবিত উদ্ধার হন রহিমা বেগম। পরে গ্রেফতারকৃতদের স্বজনরা ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু বিচারকের স্বামীর হৃদরোগ হওয়ার কারণে ওইদিন শুনানি হয়নি। আগামী ৪ অক্টোবর গ্রেফতার পাঁচ জনের পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। তবে, স্বজনরা শুধু জামিন নয়, তারা এ মামলায় গ্রেফতারদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। 

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী আয়েশা বলেন, রহিমার মুক্তির আগে নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন মঞ্জুর হয়নি। পরে রহিমা বেগম জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হলে ২৭ সেপ্টেম্বর চার জনের পক্ষে মহানগর দায়রা জজ মাহমুদা খানমের আদালতে জামিন আবেদন করা হয়। কিন্তু বিচারকের স্বামীর হৃদরোগের সমস্যা দেখা দেয়। তাই তিনি ওইদিন আদালতে আসেননি। তাই ওইদিন শুনানি হয়নি। শুনানির পরবর্তী তারিখ ৪ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়। 

আরও পড়ুন: বান্দরবা‌নে ভিক্ষা করেছেন র‌হিমা, ঠিকানা দিয়েছেন ভুয়া

গ্রেফতার হেলাল শরীফের স্ত্রী মনিরা আক্তার বলেন, আমি প্রতিদিনই আদালতে যাচ্ছি। উকিলের সঙ্গে কথাও হচ্ছে। রহিমা বেগমকে পাওয়া গেলেও পিবিআই রিপোর্ট না দেওয়া পর্যন্ত হেলাল শরীফের জামিন আবেদন করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। 

গ্রেফতার রফিকুল ইসলাম পলাশের বাবা আনসার উদ্দিন আহমেদ বলেন, রহিমা মুক্তির আগে সিএমএম আদালতে জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়েছিল। এরপর মামলাটি দায়রা জজ আদালতে নেওয়া হয়। কিন্তু রহিমাকে পাওয়ার পরর আদালতে জামিন আবেদন করা হয়নি। বিচারক তার স্বামীর হৃদরোগ সমস্যার কারণে আদালতে না আসায় জামিনের আবেদন করা যায়নি।

গ্রেফতারকৃতদের আইনজীবী খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, সবার জন্যই জামিন আবেদন করা হলেও বিচারকের অনুপস্থিতির কারণে শুনানি হয়নি। শুনানির জন্য ৪ অক্টোবর তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। 

খুলনার পিবিআই পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, রহিমা উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত দেশবাসী আলোচিত এ ঘটনায় আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমরা সে আস্থার সুফল দিয়েছি। রহিমা বেগম অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন। এখনও আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে আদালতে আমরা প্রতিবেদন দাখিল করবো। দেশবাসী যেন এ ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনে আমাদের পাশে থাকেন। 

আরও পড়ুন: ‘ছেলেমেয়ের ভয়ে কুদ্দুসের বাড়ি যান রহিমা’

তিনি বলেন, আমরা তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেবো। তবে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি পাওয়া না পাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন আদালত। আমাদের কাজ তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করা।

এদিকে রহিমা বেগম ও মরিয়ম মান্নানের গ্রেফতার দাবি করেছেন রফিকুল ইসলাম পলাশের স্ত্রী মরিয়ম হাসনাত মৌ। তিনি বলেন, রহিমা বেগম উদ্ধারের পর এখন পর্যন্ত আমরা জামিনের আবেদন করিনি। আগামী তারিখে জামিনের আবেদন করার চিন্তা রয়েছে। তবে, আমরা এখন শুধুই জামিন নয়, গ্রেফতারকৃত ৫ জনের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। একইসঙ্গে বিনা দোষে আমার স্বামীসহ অন্যরা এক মাস জেল খাটলেন। আর মরিয়মরা তার মাকে পেয়ে এখন নতুন নাটক সাজাতে তৎপর। আমি চাই বিনা দোষে পাঁচ জন জেল খাটার বদলা হিসেবে মরিয়ম মান্নান ও তার মা রহিমা বেগমকে যেন কারাগারে পাঠানো হয়। তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হোক।  

গ্রেফতার মো. মহিউদ্দিনের মেয়ে মালিহা মহিউদ্দিন মাহি বলেন, রহিমা বেগম উদ্ধারের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশবাসী বুঝতে পেরেছে মরিয়ম মান্নান ও তার পরিবারের তথাকথিত অপহরণ নাটক কীভাবে মঞ্চস্থ হয়েছে। অপরাধ না করেও নিরপরাধ ব্যক্তিরা এখনও হয়রানি ও মিথ্যা অপবাদে জেলে রয়েছেন। নির্দোষ ব্যক্তিদের এখন পর্যন্ত নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। 

তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি রহিমা বেগম নিজের এনআইডি পরিবর্তন করে ময়মনসিংহের ফুলপুরের অজ্ঞাত মহিলার যে লাশ পাওয়া যায়, তার পরিচয় ধারণ করতে চেয়েছিলেন।  এ জন্যই তিনি জন্মনিবন্ধন সনদ আনতে গিয়েছিলেন ফরিদপুরের জনপ্রতিনিধির কাছে। বিষয়টির তদন্ত দাবি করেন তিনি।

গ্রেফতার হেলাল শরীফের মেয়ে অন্তরা ফাহমিদা বলেন, কারাগারে আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি এবং নিখোঁজের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মরিয়ম মান্নান, আদুরি আক্তার, মিরাজ হোসেন সাদীসহ ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

এদিকে মরিয়ম মান্নানের সৎভাই মিজানুর রহমান বলেন, রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ স্বজনরা পরিকল্পিত ঘটনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর এর দায় চাপিয়ে হুংকার দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাকে মরিয়ম মান্নান ও তার স্বজনরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। এখন সবকিছু পরিষ্কার হয়েছে। প্রশাসনের উচিত তদন্তে নামে কালবিলম্ব না করে দ্রুত প্রকৃত রহস্য দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা।

কেসিসি ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, অবিলম্বে গ্রেফতার হওয়া নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া হোক। আর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত রহস্য উন্মোচন হোক। একইসঙ্গে আলোচিত এ ঘটনার পরিকল্পনাকারীদের দৃৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক।

রহিমার পরিবারের দাবি, গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন তিনি। একঘণ্টা পার হলেও তিনি বাসায় ফিরে আসেননি। পরে সন্তানরা সেখানে গিয়ে মায়ের ব্যবহৃত স্যান্ডেল, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে সন্ধান নেওয়ার পর মাকে পান না তারা। এরপর সন্তানরা সাধারণ ডায়েরির পাশাপাশি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্তকালে পুলিশ ও র‌্যাব ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় জনকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল ও হেলাল শরীফ।

আরও পড়ুন: রহিমার স্বামীকে সন্দেহ করছে পিবিআই

এ অবস্থায় বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নথিপত্র ১৭ সেপ্টেম্বর বুঝে নেয় পিবিআই। এখন এই মামলা তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান। ২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, তার মায়ের লাশ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। একইসঙ্গে সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক মহিলার লাশকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন। পরে ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্য সম্মত হন। পরে টানা ২৯ দিন নিখোঁজের পর ফরিদপুর থেকে জীবিত উদ্ধার হন রহিমা বেগম। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে রহিমা বেগমকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন মরিয়ম মান্নান। 

 

আরও পড়ুন:

/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
উপজেলা নির্বাচনে পলকের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
দাফনের ১৫ দিন পর তোলা হলো ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা