আগামী ২৪ নভেম্বর যশোরের শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এই জনসভার রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্য ও গুরুত্ব রয়েছে। কারণ ভেন্যুটি ঐতিহাসিক। বিশেষ করে চার কারণে প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য জনসভায় স্মরণকালের জনসমাগম ঘটাতে চায় দলটি। সেইসঙ্গে পুরো শহর সমাবেশস্থলে পরিণত করতে চাচ্ছেন দলীয় নেতারা।
কারণগুলো হলো—(১) ৫০ বছর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যশোরের যে স্থানে জনসমুদ্রে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানেই জনসভায় ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। (২) করোনা মহামারির কারণে গত তিন বছর কোনও সমাবেশে অংশ নেননি শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে যশোরে প্রথম জনসভা করছেন। এই জনসভায় তিনি আগামী নির্বাচনের বার্তা দেবেন। (৩) বিগত দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি জনসভা শুরু হয়েছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে। এবার যশোর থেকে শুরু হচ্ছে। (৪) বিগত কয়েক বছরে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন এবং পদ্মা সেতু নির্মাণ। এই কারণগুলো রাজনৈতিকভাবে অনেক গুরুত্ব বহন করছে।
আরও পড়ুন: যশোরে উৎসবের আমেজ, স্মরণকালের জনসমাগমের আশা
দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ৫০ বছর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম যে জনসভা করেন, সেটি ছিল যশোর স্টেডিয়ামে। সেদিনের ঐতিহাসিক জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। ওই দিন স্টেডিয়ামের পাশে পৌর পার্কে শহীদ মসিউর রহমানের স্মরণে স্মৃতি ফলক উন্মোচন করেন বঙ্গবন্ধু।
যশোর আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রথম জনসভা করেন যশোরে। ৫০ বছর পর একই মাঠে জনসভায় ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এদিক থেকে এই জনসভা হবে ঐতিহাসিক। পাশাপাশি আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যশোরের জনসভায় পাঁচ লাখের বেশি জনসমাগম হবে। এই জনসভার পর নির্বাচনের আগে যশোরে তার জনসভা নাও হতে পারে। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের কারণে এই জনসভা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তৎকালীন ছাত্রলীগের কর্মী যশোর শহরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ ওসমান মঞ্জুর জানু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সেদিনের জনসভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। ৫০ বছর পর একই মাঠে জনসভায় ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ফলে এটি অবশ্যই ঐতিহাসিক জনসভা হচ্ছে। এর বিশেষ গুরুত্ব আছে।’
আরও পড়ুন: ৫০ বছর পর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই মাঠে ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, ‘কয়েকটি কারণে যশোর স্টেডিয়ামের জনসভা ঐতিহাসিক। প্রথমত ৫০ বছর আগে বঙ্গবন্ধু এই স্থানে জনসমুদ্রে ভাষণ দেন। দ্বিতীয়ত তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ৫০ বছর পর একই স্থানে ভাষণ দেবেন। তৃতীয়ত করোনা মহামারির কারণে গত তিন বছর জননেত্রী কোনও পাবলিক মিটিংয়ে যাননি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে যশোরে তিনি প্রথম জনসভা করছেন। এই জনসভায় তিনি আগামী নির্বাচনের বার্তা দেবেন। এছাড়া নির্বাচনের আগে আবারও যশোরে জনসভার বিষয়টি খুবই ক্ষীণ। জনসভায় জননেত্রী দলের নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন তুলে ধরবেন। সেইসঙ্গে আগামী দিনে মানুষের চাওয়া-পাওয়া পূরণের আশ্বাস দেবেন বলে প্রত্যাশা করছি।’
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুজহারুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এখানে রয়েছে আগামী দিনের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার নতুন ভাবনা ও পরিকল্পনা। সেগুলো জনসভায় তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী।’
যশোর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জনসভার ৫০ বছর পর একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন। তার বক্তব্য শুনতে সেদিন জনসভাস্থল জনসমুদ্রে রূপ নেবে। জনসভাকে কেন্দ্র করে যশোরসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ‘যশোরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেবে’
জনসভার প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘এই জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। স্টেডিয়ামের মাঠ বড় করার পাশাপাশি সমাবেশে আগত জনসাধারণের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বড় পর্দায় সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ দেখার ব্যবস্থা করা হবে। আশা করছি, পাঁচ লাখের বেশি মানুষের সমাগম হবে।’
আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াত আবারও দেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে চায়: এমপি নাবিল
জানতে চাইলে ১৯৬৯-৭১ সালে বৃহত্তর যশোরের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সেসময়ের জনসভা বিশাল হয়েছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধু শহীদ মসিউর রহমানের স্মৃতিফলকের উন্মোচন করেছিলেন যশোর পৌর পার্কে। নিশ্চয়ই এই স্টেডিয়াম, পৌর পার্ক ও স্টেডিয়াম সংলগ্ন কলেজ মাঠ ঐতিহাসিক স্থান। এজন্য শেখ হাসিনার জনসভাও হবে ঐতিহাসিক।’