X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

বাসার ছাদে খামার, গরুর জন্য নিজেরাই বানালেন লিফট

তৌহিদ জামান, যশোর
০৯ মে ২০২৩, ০৮:০০আপডেট : ১০ মে ২০২৩, ১৭:২৫

বাসার ছাদে গরুর খামার করে দারুণ সফলতা পেয়েছেন নজরুল ইসলাম। ছাদে গরু ওঠানামার জন্য নিজেরাই তৈরি করেছেন লিফট। ইতোমধ্যে ১২টি গরু বিক্রি করে চার লাখ টাকা আয় করেছেন। আসছে কোরবানির ঈদে ১২ লাখ টাকার গরু বিক্রির আশা করছেন এই খামারি।

নজরুল যশোরের কেশবপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোগতী মাঠপাড়ার বাসিন্দা ও ঠিকাদার। মাঠপাড়ার পাঁচ শতক জমিতে বাসা। দোতলা পর্যন্ত আবাসন, তিনতলায় খামার। বাড়ির সামনের অংশে বসিয়েছেন নিজেদের তৈরি লিফট।

কেন বাসার ছাদে খামার

নজরুল ইসলামের ভাষ্যমতে, প্রায় ৩০ বছর ধরে ঠিকাদারি ব্যবসা করছি। পাঁচটি ট্রাক আর একটি ভেকু মেশিন আছে। মাটি কাটা ও বিক্রি আমার ব্যবসা। তবে দীর্ঘদিনের শখ ছিল গরুর খামার করার। কিন্তু পৌর শহরের জমির অনেক দাম। এ জন্য জমি লিজ নিয়ে খামার করতে চেয়েছি। ১০ শতক জমিও পেয়েছি। কিন্তু জমির মালিক বছরে লিজ বাবদ ৮০ হাজার টাকা চাইলেন। বাসায় ফিরে ছেলের সঙ্গে আলোচনা করি। ছেলে জানালো, এতো টাকায় জমি নেওয়ার দরকার নেই।

বাড়ির সামনের অংশে বসিয়েছেন নিজেদের তৈরি লিফট

ছেলের পরামর্শে বাসার ছাদে খামার উল্লেখ করে নজরুল বলেন, ‘খামার নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মধ্যে এক খামারির পাঁচটি, আরেক প্রতিবেশীর চারটি গরু চুরি হয়। এসব শুনে ছেলে বললো, ছাদে করতে। আমি বললাম, তা না হয় করলাম, কিন্তু গরু ছাদে উঠাবো কীভাবে? ছেলে বললো, তুমি খামার করো, গরু ছাদে ওঠানামা করানোর দায়িত্ব আমার।’

যেভাবে খামার তৈরি 

বছরখানেক আগে বাসার তিনতলায় খামার করেন নজরুল। ছাদের পাশে রেলিং দিয়েছেন। অর্ধেক ওয়াল করে চার পাশ নেট দিয়ে ঘেরাও করেছেন। ছাদে টিন দিয়েছেন। দুই পাশে গরুর খাবারের পাত্র বসিয়েছেন, ওপরে ফ্যান স্থাপন করেছেন। বাসার সামনের অংশের এক পাশে বসিয়েছেন লিফট।

পাঁচ মাসে চার লাখ আয়

১২টি গরু দিয়ে শুরু হয় খামার। পাঁচ মাস পর সেগুলো বিক্রি করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে চার লাখ টাকা আয় হয়। এরপর আরও ১২টি গরু খামারে তোলেন। এর মধ্যে একটি শাহীওয়াল জাতের বাকি ১১টি দেশি। আসছে কোরবানির ঈদে ১২টি গরু ১২ লাখ টাকায় বিক্রির আশা করছেন।

দুই পাশে গরুর খাবারের পাত্র বসিয়েছেন, ওপরে ফ্যান স্থাপন করেছেন

যেভাবে লিফট তৈরি

নজরুল ইসলামের ছেলে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যখন ছাদে খামার করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি তখন থেকেই লিফট বানানোর কাজে হাত দিই। একটা কপিকল সংগ্রহ করে স্থানীয় এক মিস্ত্রিকে সঙ্গে নিয়ে লিফট তৈরি করেছি। যেহেতু আমাদের গাড়ির ব্যবসা আছে, সেহেতু লিফট তৈরির বিষয়টি আমার মাথায় আগেই ছিল। লিফটের লোড নেওয়ার সক্ষমতা তিন টন। তৈরিতে দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। লিফটে গরু উঠিয়ে কপিকলের মাধ্যমে ওঠানামা করাই। কয়েকদিনের মধ্যে এটিকে বিদ্যুতচালিত করবো। তখন সহজে ওঠানামা করানো যাবে।’

যেসব খাবার খায় গরুগুলো

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারের কোনও ফিড খাওয়ানো হয় না। মিলে গিয়ে গম, ভুট্টা, ধান, সরিষা, সয়াবিনের খৈল ও কালোজিরা ভাঙিয়ে আনি। এসবের সঙ্গে বিচালি আর কাঁচা নেপিয়ার ঘাস খাওয়ানো হয়। ঘাস ও বিচালি খামারে তোলার জন্য রয়েছে কপিকল। এটি দিয়ে নিচ থেকে সহজে ওপরে তোলা যায়। বিচালি ও ঘাস কাটার জন্য বিদ্যুতচালিত যন্ত্র আছে। খাবারের পেছনে প্রতিদিন প্রায় ২৫০০ টাকা খরচ হয়। গরু দেখভাল ও নানা বিষয়ে পরামর্শ দেন স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।’

নজরুলের স্বপ্ন

ছাদে গরুর খামার পাইলট প্রজেক্ট উল্লেখ করে এই খামারি বলেন, ‘বাড়ির সব সদস্য খামারের কাজ করে। তবে বেতন দিয়ে এক কর্মী রাখা হয়েছে। ইচ্ছে আছে খামারটি বড় করার। খামার বড় করে আরও কর্মী রাখার স্বপ্ন দেখছি।’

বিচালি ও ঘাস কাটার জন্য বিদ্যুতচালিত যন্ত্র আছে

অনেকের আগ্রহ এমন খামার করার

কেশবপুর পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ওয়াজেদ খান ডাবলু বলেন, ‘বাসার তিনতলায় যে গরুর খামার করা যায়, এখানে না এলে তা বোঝানো যাবে না। অল্প জায়গায় সুন্দর একটি খামার। তা দেখে অনেকের আগ্রহ জন্মেছে খামার করার। অনেকে উৎসাহ পাচ্ছেন। কারণ গরু লালনপালন লাভজনক।’

ছাদে খামার করায় চুরির শঙ্কা থাকছে না উল্লেখ করে আঠারোমাইল কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বিভিন্ন সময় খামার থেকে গরু চুরি হয়। ছাদে খামার করায় সেই শঙ্কা আর থাকছে না। এই খামারের বিষয়টি সহকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের বলবো। যাতে সরেজমিনে দেখে তারাও উদ্বুদ্ধ হয়।’

এই জাতীয় খামার সময়োপযোগী

কেশবপুরে ৫৮০টি ছোটবড় গরুর খামার আছে জানালেন উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কার্ত্তিক চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘এসব খামারে প্রায় ৯৪ হাজার গরু লালনপালন হয়। কিন্তু বাসার ছাদে খামার শুধু একটি। এখানে স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়ায় গরু লালনপালন হয়। এই জাতীয় খামার সময়োপযোগী। কারণ শহরে জায়গার অভাবে অনেকে খামার করতে চান না। তাদের জন্য এটি অনুকরণীয়। যদি কেউ এই ধরনের খামার করতে চান, আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো।’

/এএম/
সম্পর্কিত
‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন
আনারসের পাতা থেকে তৈরি হবে সিল্ক জামদানি শাড়ি
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
সর্বশেষ খবর
থেমে থাকা ট্রাকে পিকআপের ধাক্কা, ২ জন নিহত
থেমে থাকা ট্রাকে পিকআপের ধাক্কা, ২ জন নিহত
প্রতিদিন মা হারাচ্ছে ৩৭ ফিলিস্তিনি শিশু
প্রতিদিন মা হারাচ্ছে ৩৭ ফিলিস্তিনি শিশু
সেন্ট জোসেফ স্কুলে তিন দিনব্যাপী লিট ফেস্টিভ্যাল শুরু
সেন্ট জোসেফ স্কুলে তিন দিনব্যাপী লিট ফেস্টিভ্যাল শুরু
জাকিরের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে প্রাইম ব্যাংকের বড় জয়
জাকিরের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে প্রাইম ব্যাংকের বড় জয়
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ