প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির অভিযোগে গ্রেফতার রাজশাহী বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের ওপর মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে জুতা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (১৬ জুলাই) দুপুরে তাকে মাগুরা জেলা কারাগার থেকে পুলিশের একটি প্রিজনভ্যানে আদালত নেওয়া হলে সেখানে উপস্থিত কিছু মানুষ তার ওপর জুতা ছুড়ে মারেন।
এই ঘটনায় উত্তেজিত জনতাকে সরিয়ে দিতে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে পুলিশ সদস্য মফিজুর রহমান আহত হয়েছেন। তার নাক-মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে। তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মামলার বাদী জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ফজলুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করা ওই বিএনপি নেতাকে ঘৃণা প্রদর্শন করা হয়। একটা পর্যায়ে তাকে জুতাও ছুড়ে মারা হয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে পৌর যুবলীগের এক নেতা আহত হয়েছেন। তার মাথায় আঘাত লেগেছে। চিকিৎসক সিটি স্ক্যান করতে দিয়েছেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী জেলা যুবদলের সভাপতি ওয়াসিকুর রহমান কল্লোল বলেন, ‘আবু সাঈদ চাঁদের জামিনের আবেদন করেছিলাম। জামিনের আবেদন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবিরে নথিভুক্ত রেখেছেন। আগামীকাল শুনানি হবে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তাকে যখন মাগুরা আদালতে আনা হয় তখন আসামির সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও হামলা করে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের ধস্তাধস্তিও হয়েছে। পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী শাখারুল ইসলাম শাকিল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকিদাতা চাঁদের বিরুদ্ধে মাগুরায় করা মামলায় তাকে এই জেলায় আনা হয়েছে। আজকে তার মামলার শুনানি ছিল। আদালত তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামির সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী তার জামিন চেয়েছেন। আদালত আগামীকাল শুনানির দিন ধার্য করেছেন।’
হামলার বিষয়ে এই আইনজীবী দাবি করেন, ‘আজ আদালত চত্বরে তার ওপর সাধারণ জনতা হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনও সম্পর্ক নেই।’
মাগুরা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপস) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির অভিযোগে করা মামলায় রাজশাহী বিএনপি নেতা আবু সাইদ চাঁদকে মাগুরা আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে ঢোকার সময় উত্তেজিত জনতা রাজাকার স্লোগান দিয়ে তার ওপর জুতা নিক্ষেপ করে। এ সময় হাবিলদার মফিজ আহত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করা হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আদালত প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতেয়ন করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ১৯ মে বিকালে পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে চাঁদ বলেন, ‘আর ২৭ দফা ১০ দফার মধ্যে আমরা নেই। এক দফা– শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করবো।’ তার এই বক্তব্যের ভিডিও দুই দিন পর ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। রাজশাহী জেলা ও মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বেশ কিছু মামলা হয়। আত্মগোপনে থাকা চাঁদকে ২৫ মে রাজশাহী থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মাগুরায় বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ফজলুর রহমান।