X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভিক্ষা করে দিন চলে মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়ার

আসাদুজ্জামান রিপন, নরসিংদী
০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:১৭আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:২৪

ভিক্ষা করছেন মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়া
৭১’র রণাঙ্গনে সম্মুখ যুদ্ধে জয়ী হলেও জীবন যুদ্ধে আজও পরাজিত মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়া (৭৫)। প্যারালাইসিসে আক্রান্ত এই মুক্তিযোদ্ধার দিন চলে ভিক্ষা করে।  গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায় হলেও মুক্তিযুদ্ধের পর জীবিকার টানে চলে আসেন নরসিংদীর শিল্পাঞ্চল খ্যাত পলাশ উপজেলায়। বর্তমানে এই এলাকায় অসুস্থ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। তার সনদ নম্বর ম.১৪০৪৪০, তারিখ ২২.১০.২০০৯, আইডি নম্বর ০৭০৩১০০৩৪৯, গেজেট ৩৬০৭, তারিখ ২৪.১১.২০০৫।

দীর্ঘ আলাপচারিতায় জানালেন তার জীবন ও মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার গল্প। ১৪-১৫ বছর বয়স থেকেই তিনি বাবার সঙ্গে অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। ১৯ বছর বয়সে চাচার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্বরপুর থানার চাঁন্দারগাঁও গ্রামে বেড়াতে যান তিনি। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন এলাকায় যুবকদের আনসার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ/নিয়ম অনুযায়ী জন্মস্থানের ঠিকানা দিয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া যাবে না। তাই চাচার বাড়ির ঠিকানা দিয়ে প্রশিক্ষণ নেন লাল মিয়া। প্রশিক্ষণ শেষে জীবিকার টানে চাচার বাড়িতে থেকেই কৃষি শ্রমিক হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে পাকিস্তানিরা এদেশে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। একপর্যায়ে দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা আসে। ২০ বছর বয়সী লাল মিয়া বাবা-মাকে না জানিয়েই সুনামগঞ্জে চাচার বাড়ি থেকেই যুদ্ধে চলে যান। ৫ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর সালাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে চীনাকান্দি বিডিআর ক্যাম্পে ফজলুর রহমান, কাসেম আলী, মন্নান, তারা চাঁন, মনসুর আলী, সিরাজ, আলী হোসেন, আ. আলীম, রশিদ, সাত্তার, ওমর আলী, বাবু, দুলু, বিসম্বর, খালেক, গফুর, বারেক ও সিরাজসহ অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ক্যাম্পে অবস্থান শুরু করেন আনসার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লাল মিয়া। এখান থেকে ভাতেরটেক, সুরমা নদীর পাড়ে লালপুর, উড়াকান্দা, বেরিগাওঁ, মঙ্গলকাটা, টুকেরঘাট ও শালবন এলাকায় পাক সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

যুদ্ধকালীন সময়ে লালপুর গ্রামের সুরমা নদীর পাড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ সময়ব্যাপী সংঘটিত সম্মুখ যুদ্ধের স্মৃতি ভুলতে পারেন না তিনি। সেদিন নদীর একপাড়ে লাল মিয়াসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান অপর পাড়ে পাকবাহিনী। পাকিস্তানি বাহিনীকে ধ্বংস করতে প্রাণপণ লড়াই চলছিল মুক্তিযোদ্ধাদের। পাকবাহিনী নদীর ওই পাড় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের হঠাতে বোমা বর্ষণ শুরু করে। বোমাবর্ষণে সেই স্থানে সৃষ্ট বিশাল গর্তে চাপা পড়ে শহীদ হয়েছিলেন দুই সহযোদ্ধা। কমান্ডারের নির্দেশে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে প্রাণে বাঁচেন লাল মিয়াসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা।

দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে জেনারেল আতাউল গনি ওসমানি স্বাক্ষরিত সনদ হাতে নিয়ে জন্মভূমি কিশোরগঞ্জে ফেরেন লাল মিয়া। বাড়ি ফিরে পরলোকে চলে যাওয়ায় বাবাকে দেখতে পাননি তিনি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়া। বিয়ের পর হাতে ছিল না তেমন কোনও কাজ, অন্যের বাড়িতেও কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। দুঃখ, দুর্দশার সংসার জীবনে চার সন্তানের জনক হন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়া পরে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে বাম হাত ও বাম পায়ের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এরপর তার জীবন সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে জীবিকার টানে চলে আসেন নরসিংদীর শিল্পাঞ্চল পলাশ উপজেলায়। এখানে এসেও শারীরিক অক্ষমতার কারণে কোনও কাজ জোটেনি তার ভাগ্যে। পাশে নেই কষ্টে লালনপালন করা সন্তানরাও। চার সন্তানের তিনজনই বিয়ে করে সংসার করছে কিন্তু নিজেদের অভাব অনটনের কারণে বাবার খোঁজ নিতে পারেন না। এলাকার সচেতন মহলের কাছে হাত বাড়িয়েও কোনও ফল পাননি লাল মিয়া। বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হয় তাকে। ঘোড়াশাল ইউরিয়া সারকারখানার গেটে বসে এখনও চলছে তার ভিক্ষাবৃত্তি। বর্তমানে পলাশ উপজেলার গাবতলী গ্রামে বশির উদ্দিনের বাড়িতে মাসিক এক হাজার টাকা ভাড়ায় একটি মাটির ঘরে বসবাস মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়ার। শত কষ্টেও ছোট সন্তান রাইজুল ইসলামকে পলাশ থানা সেন্ট্রাল কলেজে লেখাপড়া করাচ্ছেন।

এরইমধ্যে সরকার থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা দেওয়া শুরু হলে ওই তালিকায় নাম উঠে আসে লাল মিয়ার। কিন্তু ভাতা গ্রহণ করতে হয় সুনামগঞ্জ জেলা থেকে। পলাশ থেকে যাতায়াত খরচ হিসেবে চলে যায় এক হাজারেরও বেশি টাকা। অন্যান্য খরচ মিটিয়ে শেষ পর্যন্ত তার হাতে ভাতা বাবদ যে টাকা থাকে তা দিয়ে সংসার চলে না এই মুক্তিযোদ্ধার। কলেজ পড়ুয়া ছেলেটির লেখাপড়া শেষ করাতে পারলে ছোটখাট একটি চাকরি জুটবে সেই প্রত্যাশায় দিন কাটে এই মুক্তিযোদ্ধার।

মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়া বলেন, দেরিতে হলেও এই দেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, এতে আমি খুবই আনন্দিত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

আরও পড়ুন:
‘বাংলাদেশের নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রহসন হয়েছে’

/বিটি/

 

সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
ভিসা না পাওয়ায় পাকিস্তান দলের সঙ্গে যেতে পারেননি আমির
ভিসা না পাওয়ায় পাকিস্তান দলের সঙ্গে যেতে পারেননি আমির
রাফাহতে হামলার আশঙ্কা, ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান স্থগিত যুক্তরাষ্ট্রের
রাফাহতে হামলার আশঙ্কা, ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান স্থগিত যুক্তরাষ্ট্রের
সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে চাকরি, আবেদন ফি ৫০০ টাকা
সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে চাকরি, আবেদন ফি ৫০০ টাকা
সড়কভেদে আসছে গাড়ির নতুন গতিসীমা নীতি
সড়কভেদে আসছে গাড়ির নতুন গতিসীমা নীতি
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
ছুড়ে দেওয়া সব তির সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তির সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ