X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শাওনের পরিবার দিন কাটাচ্ছে অর্থ কষ্টে

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
০১ জুলাই ২০১৭, ০৮:৪০আপডেট : ০১ জুলাই ২০১৭, ১৭:২০

গুলশান হামলায় নিহত শাওন

রাজধানী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জাকির হোসেন শাওনের পরিবারের দিন কাটছে নিদারুণ অর্থকষ্টে। খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। জঙ্গি হামলার ওই ঘটনা তছনছ করে দিয়েছে পুরো পরিবার। ছেলেকে হারিয়ে এখন পাগল প্রায় মা।

শাওনের মায়ের অভিযোগ, একবছর পেরিয়ে গেলেও রেস্তোরাঁর মালিক বা সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা তো দূরের কথা, কোনও খোঁজ পর্যন্তও নেওয়া হয়নি। শাওনের মায়ের একটাই চাওয়া ছেলে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার, আর শাওনের বাবার অভিযোগ, চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে তার সন্তান।

সিদ্ধিরগঞ্জের দক্ষিণ কদমতলীর জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী অখিল ভুঁইয়ার বাড়িতে এক রুমের একটি টিন সেড ঘরে ভাড়া থাকেন নিহত শাওনের পরিবার। অসুস্থ রিকশা চালক আব্দুস সাত্তার দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে এখানে বসবাস করেন। সংসার চালাতে মা মাকসুদা বেগম ভান্ডারী পুল ও নাভানা ভুইয়া সিটির গেইটে পিঠা বিক্রি করেন। বাড়ি দেখাশোনা করার কারণে বাড়িওয়ার শুধু গ্যাস ও কারেন্ট বিল নিয়ে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছেন।

শাওনের জন্য এখনও কাঁদেন তার মা

শুক্রবার বিকালে (২৩ জুন) সরেজমিনে দক্ষিণ কদমতলীর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের কারণে ডিএনডির অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সেই জলাবদ্ধতার পানি ঢুকেছে নিহত শাওনের ঘরেও। স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে কোনওরকমে দিনযাপন করছেন তারা। প্রায় ২০০ ফুট রাস্তা হাঁটু পানি ভেঙে যাতায়াত করতে হয় এ বাড়িতে। 

নিহত শাওনের মা মাকসুদা বেগম জানান, অর্থের অভাবে অল্প বয়েসে কাজে নেমেছিল শাওন। কিন্ত হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা সব কেড়ে নিয়েছে তার। ওই রেঁস্তোরায় মাত্র ১৪ মাস কাজ করেছিল শাওন, অভাবের সংসারে সুখের আলো ফিরতে শুরু করেছিলো। তখনই ওই ঘটনা সব তছনছ করে দিয়েছে।

মাকসুদা বেগম জানান, তার ছেলে ওই রেস্তোরাঁয় বাবুর্চির হেলপার হিসেবে কাজ করতো। হাড়ি-পাতিল ধোয়া, তরকারি কাটাকুটি, চেয়ার-টেবিল মোছাসহ বিভিন্ন কাজ করতো। রেঁস্তোরা মালিক সাত হাজার টাকা বেতন দিতো,  আর কাস্টমাররা খেয়ে খুশি হয়ে টিপস দিতো। এতে করে প্রতি মাসে প্রায় ১৪-১৫ হাজার টাকা বেতন পেতো সে।  আর মাস শেষে পুরো টাকাই তুলে দিতো মায়ের হাতে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘শাওন মারা যাওয়ার পর রেঁস্তোরার মালিক সাজ্জাদ সাহেব বলেছিলো শাওন মারা গেছে কিন্তু আমি আছি। আমি শাওনের মতো আপনার পরিবারকে দেখে রাখবো। কিন্তু কই রেঁস্তোরার মালিক বা সরকার কেউই তো আমাগো খবর নিল না। এখন তিন বেলা ভাত খাওয়াই আমাদের দায়।’

হলি আর্টিজানে শাওনের ব্যবহৃত অ্যাপ্রন হাতে তার মা ও ভাই

নিহত শাওনের বাবা আব্দুস সাত্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘চিকিৎসার অভাবেই মারা গেছে আমার শাওন। পুলিশ তাকে জঙ্গি সন্দেহ করে হাতে-পায়ে ডান্ডাবেড়ি লাগিয়ে চিকিৎসা জন্য বড় ইউনিটি (ইউনাইটেড)  হাসপাতালে ভর্তি করায়। তিন দিন চিকিসাধীন থাকবার পর শাওন মারা যায়। তার শরীরর বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত চিহ্ন ছিলো।’ তিনিও ছেলে হত্যার দৃষ্টান্তমুলক বিচার চান।

নিহত শাওনের মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কি পেলাম, সরকারের কাছ থেকে কিছুই পাই নাই। পাইছি লাঞ্ছনা আর অপমান। আমি সরকারে কাছে ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

শাওনের ছোট ভাই আরফাত হোসেন বলেন, ‘ভাইয়ার কথা বারবার মনে। বড় ভাই আমাকে  অনেক আদর করতেন, মজা কিনে দিতেন। ঘুরতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু এক বছর হলো কেউ আমাকে মজা কিনে দেয় না , ঘুরতে নিয়েও যায় না।’

/এমও/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পেঁয়াজ চুরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন
পেঁয়াজ চুরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন
কিংস অ্যারেনায় প্রথমবার গিয়ে যা বললেন পাপন
কিংস অ্যারেনায় প্রথমবার গিয়ে যা বললেন পাপন
মধুসূদন দত্তের বাড়িতে এসে দর্শনার্থীরা করেন প্রশ্ন, শিক্ষার্থীরা তোলে সেলফি
মধুসূদন দত্তের বাড়িতে এসে দর্শনার্থীরা করেন প্রশ্ন, শিক্ষার্থীরা তোলে সেলফি
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি