নড়াইলে শুভ্রা মুখার্জী মেমোরিয়াল হাসপাতালের নির্মাণ কাজ গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। কেন হাসপাতালের জন্য নির্ধারিত জায়গায় মাটি ভরাটের কাজসহ অন্যান্য কাজ বন্ধ রয়েছে, সে বিষয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। এতে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের খবরে এলাকাবাসী উন্নত চিকিৎসার আশায় বুধ বাঁধলেও তারা এখন অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছেন।
নড়াইল-যশোর সড়কের উত্তর পার্শে জেলা শহর সংলগ্ন বাঁশভিটা-সীতারামপুর মৌজায় ২০ বিঘা জমির ওপর শুরু হয় ৫০ শয্যার শুভ্রা মুখার্জী মেমোরিয়াল হাসপাতালের নির্মাণ কাজ। মাটি ভরাটের কাজ শুরু হওয়ার পর নির্ধারিত স্থানে নির্মাণ শ্রমিকসহ দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই ছিল। কিন্তু কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর স্থানটি মানবশূন্য হয়ে পড়েছে। দুয়েকজন প্রহরী ছাড়া তেমন কাউকে আর দেখা যায় না ওই এলাকায়।
হাসপাতালের নির্মাণস্থলের পাশের বাঁশভিটা গ্রামের বাসিন্দা তুষার রাজবংশী ও কার্তিক বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতাল তৈরির কথা শুনে আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এর কাজ তো বন্ধ। আমাদেরও আর এই হাসপাতাল নিয়ে তেমন উৎসাহ নেই।’
স্থানীয় মুলিয়া ইউপি সদস্য পলাশ মালাকার বলেন, ‘অনুন্নত এ জেলায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তেমন কোনও সুবিধা নেই। এই হাসপাতালটি সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারত। কেবল আমাদের জেলাই নয়, আশপাশের জেলার মানুষও উপকৃত হতো।’
শুভ্রা মুখার্জীর ভাই কানাই লাল ঘোষ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দিদির জন্মস্থানে তার নামে একটি হাসপাতাল হচ্ছে, এটা তো গর্বের বিষয়।’ তার মামাতো ভাই সদর উপজেলার তুলারামপুরের বাসিন্দা কার্তিক ঘোষ বলেন, ‘একটি মহল ষড়যন্ত্র করে হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ বন্ধের চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা যেকোনও মূল্যে এই কাজ অব্যাহত রাখতে চাই।’ হাসপাতালের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকলেও অচিরেই এর নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ জানান।
নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য সাইফ হাফিজুর রহমান খোকনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও বলছেন, এই হাসপাতালের নির্মাণ নিয়ে কোনও ধরনের মতানৈক্য থাকা উচিত নয়। কেন হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়েছে, সে সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে খোলাখুলি সব কথা বলার আহ্বান জানান তারা।
হাসপাতালের জমি অধিগ্রহণ ও বালি ভরাটের দায়িত্বে নিয়োজিত চিত্রা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ তোফায়েল বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতালের জমি কেনা ও মাটি ভরাটের কাজ করছে ঢাকার বেঙ্গল গ্রুপের পক্ষে স্থানীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চিত্রা এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু নড়াইলের এক শ্রেণির ঠিকাদার ও স্বার্থান্বেষী একটি মহল এ কাজের অংশ না হতে পেরে শুরু থেকেই বাধা দিতে থাকে। এরই মধ্যে হাসপাতালের জন্য ২১টি দলিলের মাধ্যমে প্রায় ৫ একর জমির রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। জমিগুলো কেনাও হয়েছে বাজারদরের চেয়ে বেশি দরে। এই প্রক্রিয়া তদারকি করেছেন শুভ্রা মুখার্জী ফাউন্ডেশনের সভাপতি,জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস।’
তোফায়েল বিশ্বাস জানান, গত ২৪ মে হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে আসেন বেঙ্গল গ্রুপের অডিটর মোহাম্মদ নুরুজ্জামানসহ আরও দুই কর্মকর্তা। ওইদিন একটি সন্ত্রাসী চক্র নির্মাণাধীন হাসপাতাল এলাকায় গিয়ে বেঙ্গল গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এসময় মাটি ভরাট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মশিয়ার বিশ্বাসের কাছে চাঁদা অথবা কাজের ভাগ দাবি করে ওই সন্ত্রাসী চক্র। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ওই দলের টিটো নামে এক সদস্য অস্ত্র বের করলে কর্মরত শ্রমিকরা তাকে পুলিশে সোপর্দ করে। এরপর থেকেই ওই সন্ত্রাসী চক্রটি হাসপাতালের কাজ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেন তোফায়েল বিশ্বাস।
এর মধ্যে গত ২০ জুন সন্ধ্যায় হাসপাতালের নির্ধারিত স্থানে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চিত্রা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক তোফায়েল বিশ্বাস। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ইমদাদুল ইসলাম, সাবেক পিপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিদ্দিক আহম্মেদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সহধর্মিণী নড়াইলের মেয়ে প্রয়াত শুভ্রা মুখার্জীর নামে জেলা শহরের রুপগঞ্জ সংলগ্ন বাঁশভিটা এলাকায় এ বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বেঙ্গল গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ ও লাবিব গ্রুপের কর্মকর্তারা নড়াইলে এসে শুভ্রা মুখার্জী ট্রাস্টি বোর্ডের নামে ‘শুভ্রা মুখার্জী মেমোরিয়াল হাসপাতাল’-এর নির্মাণ কাজ শুরুর ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন-
রাজশাহীতে আরও ১৯ গোখরা সাপ নিধন
সীতাকুণ্ডে ৯ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল
/টিআর/