X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধ শুরুর আগে ‘জয় বাংলা’ লেখা পতাকা ওড়ে শেরপুরে

শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর
১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:০৩আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:০৭

`জয় বাংলা` লেখা এই পতাকাই ওড়ানো হয় `৭১ এর ২৩ মার্চ ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ শেরপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা ওড়ানো হয়। শেরপুরের শহীদ দারোগ আলী পৌরপার্ক মাঠে শত শত প্রতিবাদী ছাত্র জনতার মুহুর্মুহু স্লোগানের মধ্য দিয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত ‘জয় বাংলা’ লেখা সাদা রঙের পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর ৯ মাসের যুদ্ধ-সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় শেরপুর। মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সর্বাধিনায়ক প্রয়াত জগজিৎ সিং অরোরা শেরপুর শহীদ দারোগ আলী পৌর পার্ক মাঠে উপস্থিত থেকে শেরপুরকে মুক্ত বলে ঘোষণা দেন।

শেরপুর সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান ও মুক্তিযোদ্ধা তালাফতুপ হোসেন মঞ্জু’র সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে শেরপুর জেলার ৫টি উপজেলায় ৩০ থেকে ৪০টি যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এসব যুদ্ধে ৫৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় অসংখ্য সাধারণ বাঙালি নাগরিককে হত্যা করে হানাদার বাহিনী।

স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা স্মরণ করতে গিয়ে তারা জানান, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ রেডিওতে শুনেই শেরপুরবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। প্রতিটি উপজেলায় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে গড়ে তোলা হয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। সেসময় তৎকালীন শেরপুরের আবাসিক ম্যাজিস্ট্রেটের বাসভবনটিকে সংগ্রাম পরিষদের অফিস করা হয় (বর্তমান জেলা প্রশাসকের  বাসভবনের উত্তরে জমিদার আমলের পুরাতন টিন শেড ঘরটি)। স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত অস্ত্র দিয়ে চলে প্রশিক্ষণ। এ অঞ্চলে সংগ্রাম পরিষদের  নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য মরহুম মো. আনিছুর রহমান, জাতীয় পরিষদ সদস্য মরহুম আব্দুল হাকিম, প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য মরহুম নিজাম উদ্দিন আহমদ, প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য আব্দুল হালিম,মরহুম মহসিন আলী,মরহুম খন্দকার মজিবর রহমান,ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা প্রয়াত রবি নিয়োগী,মরহুম ইমদাদুল হক হীরা মিয়া,মরহুম আব্দুর রশিদ প্রমুখ। শেরপুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ

১ এপ্রিল ভারত সীমানার কাছে ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া পাতার ক্যাম্পে স্থাপন করা হয় অস্থায়ী প্রশিক্ষণ শিবির। এ প্রশিক্ষণ শিবিরে শেরপুরের যে ১২ জন যুবক এক সপ্তাহের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তারা হলেন-  ফরিদুর রহমান ফরিদ,মোকছেদুর রহমান হিমু,মো. মাসুদ,আব্দুল ওয়াদুদ অদু,তালাফতুপ হোসেন মঞ্জু,এমদাদুল হক নিলু (মরহুম),হাবিবুর রহমান ফনু (মরহুম),কর্ণেল আরিফ,ইয়াকুব আলী,হযরত আলী হজু ,আশরাফ আলী ও মমিনুল হক।

এর মধ্যে সুবেদার আব্দুল হাকিমের (মরহুম) নেতৃত্বে ইপিয়ার, আনসার, মুজাহিদদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। সংগ্রাম পরিষদের তৎপরতায় স্থানীয় ও ময়মনসিংহের অস্ত্রাগার থেকে সংগৃহীত হয় বেশ কিছু অস্ত্র। এসব অস্ত্র দিয়ে শুরু হয় এদের প্রশিক্ষণ। পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণ ঠেকাতে এ বাহিনী ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে কয়েকটি প্রতিরোধমূলক ঘাঁটি, শেরি ব্রিজের ঢালে আত্মরক্ষার জন্য কয়েকটি বাংকার স্থাপন করে এবং এগিয়ে যান মধুপুর পর্যন্ত। কিন্তু সংগ্রাম পরিষদের এসব প্রস্তুতির কথা হানাদারদের কাছে পৌঁছে গেলে ২০ এপ্রিল ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হেলিকপ্টার থেকে আক্রমণ করে বাঙালি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ওপর। এতে ১৩ জন বেসামরিক ব্যক্তি হতাহত হন।

১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল আক্রমণ করতে করতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শেরপুর শহরে প্রবেশ করেন। প্রবেশ মুখে তারা শনিবাড়ি মন্দিরে পূজারত সূর্য মোহন দেবকে, পাকুরিয়া চকপাড়ার আহাম্মদ ফকিরকে গুলি করে হত্যা করে। পরে শেরপুরের বিভিন্ন স্থানে তাদের গড়ে তোলা ঘাঁটিতে চলতে থাকে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের ঘটনা। পাশাপাশি চলতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ।

মূলত নভেম্বর মাস থেকেই শেরপুরে হানাদার বাহিনীর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন  ১১ নং সেক্টরের  মুক্তিযোদ্ধারা বেশ কয়েকবার শেরপুরের কামালপুরে পাকিস্তানিদের মূল ঘাঁটিতে আক্রমণ চালান। ৪ ডিসেম্বর এ ঘাঁটির চূড়ান্ত পতন হয়। মোট ২২০ জন পাকিস্তানি সেনা এবং বিপুল সংখ্যক রেঞ্জার, মিলিশিয়া ও রাজাকার সদস্য বিপুল অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে।

কামালপুর ঘাঁটি দখল হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর সব ক্যাম্প ধ্বংস হয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। অবশেষে পাকিস্তানি সেনারা ৬ ডিসেম্বর রাতে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে জামালপুরের দিকে পালিয়ে যায়। এরপর ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় শেরপুর। মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সর্বাধিনায়ক প্রয়াত জগজিৎ সিং অরোরা শেরপুরকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন এবং স্বাধীন শেরপুরে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য এ জেলায় একজন বীর বিক্রম ও  দুইজন বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন। এরা হলেন শহীদ মুতাসিম বিল্লাহ খুররম (বীর বিক্রম), কমান্ডার জহুরুল হক মুন্সী (বীর প্রতীক ) ও ডা. আব্দুল্লাহ  আল মাহমুদ (বীর প্রতীক)।

 

/এসএসএ/এফএস/
সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী
কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?