X
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রাজশাহীর নারী শ্রমিকেরা মজুরি বৈষম্যের শিকার

দুলাল আব্দুল্লাহ, রাজশাহী
০২ মে ২০১৮, ০২:২০আপডেট : ০২ মে ২০১৮, ০২:২৩

নারী শ্রমিক মাটি টানছেন রাজশাহীর নারী শ্রমিকেরা মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। রয়েছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও। এতে করে তারা বিভিন্নভাবে পিছিয়ে যাচ্ছেন। নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুরুষদের সঙ্গে তানোর উপজেলায় বিনোদপুর সড়ক মেরামতের কাজ করছিলেন যোগীশো গ্রামের অনিমা রাণী, বিনোদপুর গ্রামের কাজলী হেমব্রম ও পারভীন বেগম। শনিবার (২৮ এপ্রিল) সেখানে তাদের সঙ্গে আলাপকালে মজুরি বৈষম্য ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।

অনিমা রানী বলেন, ‘সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাতে ঘরে ফিরি। তখন পুরো শরীরটা যেন ভেঙে পড়ে। শরীরে ব্যথাসহ মাথাও ঝিমঝিম করে। তাই কোনোমতে ঘরে ফিরে রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি। সন্তানদের তেমন যত্নও নিতে পারি না। রাত যে কিভাবে অতিবাহিত হয়, তাও বুঝতে পারি না।’

কাজলী হেমব্রম বলেন, ‘ধানের ক্ষেতে কাজ করার সময় শারীরিকভাবে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। দুপুর বেলা প্রখর রোদে কাজ করার সময় জরায়ুতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। আবার প্রস্রাব লাল হয়। নিয়মিত মাসিকও হয় না। সারা শরীরে ঘামের কারণে ঠিকমতো বাচ্চাকে দুধও খাওয়াতে পারি না।’

পারভীন বেগম বলেন, ‘সারাদিন কাজ করে ১২০ টাকা পাই। অথচ একই কাজ করে একজন পুরুষ পান ৩৫০ টাকা। একদিন কাজে না গেলে স্বামী নির্যাতন চালায়, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। অসুস্থ হলেও সংসার চালানোর জন্য কাজ করতে হয়।’

রাজশাহী নগরীর পাঠানপাড়া এলাকায় রাস্তার কাজ করছিলেন আমেনা বেগম (৪৬)। তিনি বলেন, ‘পুরুষের সমান আমরাও কাজ করি। কিন্তু, দিন শেষে তারা ৪৫০ টাকা পেলেও আমরা ৩৫০ টাকা পাই। এরমধ্যে থেকে হেড মিস্ত্রিকে আবার ৫০ টাকা কমিশন দিতে হয়। কারণ হেড মিস্ত্রির মাধ্যমে কাজ নিতে হয়।’

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বুরইল ইউনিয়নের আকতারা বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুরুষরা চলে যায়। এতে করে নারী শ্রমিকদের চাহিদা থাকে। তবে মৌসুম ভেদে কাজ করানো হয়। এজন্য আমাদেরকে মালিকরা একটু কম মুজরি দেয়। কিন্তু, আমরাও তাদের সমান কাজ করি।’

পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের রহিমা বেগম বলেন, ‘নারী শ্রমিকরা ক্ষেতে বীজতলা লাগানো, ক্ষেত পরিচর্যা, ফসল ঘরে তোলাসহ সব ধরনের কাজ করছে। কিন্তু, মজুরির বেলায় পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে অনেক কম পাচ্ছে।’

শ্রমিক যোগাদার মতিউর রহমান বলেন, ‘আমি কাজের ব্যবস্থা করে দেই। আবার কাজ করার জন্য যেসব জিনিসপত্র লাগে, তাও দেই। তাই নারী-পুরুষ সব শ্রমিকের কাছ থেকে কমিশন নেই।’

নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে মজুরি নিয়ে বৈষম্য কেন? এমন বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউর রহমান বলেন, ‘নারী শ্রমিকদের সহজেই পাওয়া যায়। আর পুরুষ শ্রমিকদের কদর বেশি থাকে। আবার নারীদের চেয়ে পুরুষরা ভারি কাজ করতে পারে।’

রাজশাহীর বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার নির্বাহী পরিচালক ফয়েজুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সমাজে নারীদের উন্নয়ন ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় না। যার কারণে অর্থনীতিতে নারীর অবদান অদৃশ্য থেকে যায়। প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিক দুই খাতেই এখন নারীরা শ্রম দিচ্ছে। এমনকি বিদেশে কর্মরত থেকে দেশের রেমিটেন্সে সম্পৃক্ত থাকছে। কিন্তু, আমাদের সনাতনি দৃষ্টি ভঙ্গির কারণে নারীর অথনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘরে ও বাইরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বীকৃতি পায়নি। তাই সমাজ তথা রাষ্ট্রে নারীর ক্ষমতায়নে নারীর কাজের সামাজিক ও আর্থিক স্বীকৃতি আবশ্যক। রাষ্ট্রীয় সামাজিক বা পারিবারিকভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত নারীর কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। সেই সঙ্গে এ খাতে নারীর মজুরি বৈষম্যসহ সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারীবন্ধব কর্ম পরিবেশ তৈরি হয়নি। এতে করে নারীরা বিভিন্নভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ ও শ্রম দেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে হবে। তাই আমাদের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে এখনি গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে।’ 

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারসহ ১১ জনের কারাদণ্ড
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারসহ ১১ জনের কারাদণ্ড
জাল ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্ক, দুই যুবক আটক
জাল ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্ক, দুই যুবক আটক
এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে আগেই জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে আগেই জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
সর্বাধিক পঠিত
ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, জানালেন ওবায়দুল কাদেরঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
১০০ লিচু ১০০০ টাকা, তবু দুশ্চিন্তায় এই গ্রামের চাষিরা
১০০ লিচু ১০০০ টাকা, তবু দুশ্চিন্তায় এই গ্রামের চাষিরা
পাউবোর দুই প্রকৌশলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
পাউবোর দুই প্রকৌশলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বাংলাদেশ দলে খেলতে না পারলে আমি মরে যাবো না’
‘বাংলাদেশ দলে খেলতে না পারলে আমি মরে যাবো না’