শনিবার (২২ জুন) শ্বাসকষ্ট নিয়ে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে যান আবদুল মোতালেব। রোগীর অবস্থা গুরুতর দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য রবিবার (২৩ জুন) তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন সেখানকার চিকিৎসক। আবদুল মোতালেবকে অ্যাম্বুলেন্সে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার সময় চালককে পাশের সিটে বসিয়ে তার আসনে বসেন আলীকদম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. শহিদুর রহমান। অভিযোগ রয়েছে, এ সময় ড্রাইভিং শিখতে রেফার করা গুরুতর রোগী নিয়ে চট্টগ্রামে রওনা হন তিনি।
মোতালেব ও তার স্বজনরা জানান, চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে তারা নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। ডা. শহিদুর রহমান গাড়ি চালানোয় কয়েকবার দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন তারা। পথে কয়েকবার গাড়ির স্টার্টও বন্ধ হয়ে যায়। তখন চালককে গাড়ি চালাতে দেওয়ার জন্য ডা. শহিদুর রহমানকে অনুরোধ করা হয়। এরপরও তিনি তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে গাড়ি চালাতে থাকেন। একপর্যায়ে ভয় পেয়ে পটিয়ার শান্তিরহাটে গিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন তারা। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে না গিয়ে তারা সেখানেই এক ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
অ্যাম্বুলেন্সে মোতালেবের সঙ্গে থাকা তার আত্মীয় পারভেজ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, রোগীকে (মোতালেব) চট্টগ্রাম মেডিক্যালে নেওয়ার সময় চালক থাকার পরও ডা. শহিদুর রহমান নিজেই গাড়ি চালানো শুরু করেন। তিনি গাড়ি চালানোর সময় বারবার গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকবার মারাত্মক দুর্ঘটনার হাত থেকে আমরা ভাগ্যের জোরে রেহাই পেয়েছি। তিনি বলেন, ‘এ সময় রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। আমরা ভয় পেয়ে যাই। বাধ্য হয়ে পটিয়ার শান্তিরহাটে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি এবং সেখানকার একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে রোগীর চিকিৎসা করাই।’
এ বিষয়ে কথা হয় আবদুল মোতালেবের রোগী) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ডা. শহিদুর রহমান অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছিলেন। বারবার গাড়ি বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কয়েকবার দুর্ঘটনার কবলে পড়তে গিয়েও বেঁচে গিয়েছি আমরা। চালককে চালাতে দেওয়ার জন্য ডা. শহিদুর রহমানকে অনুরোধ করায় তিনি গালিগালাজ করেন। এ অবস্থায় আমার শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যায়। তখন আমরা অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে যেতে বাধ্য হই।’
আলীকদমের বাসিন্দা মো. জিয়া বলেন,‘রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়ার সময় ডাক্তার ড্রাইভিং শিখছিলেন, এমন ঘটনা আগে কখনও শুনিনি। বিষয়টি প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিত।’
আবদুল মোতালেবের বড় মেয়ে রেহানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আমার বাবা শনিবার শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এজন্য তিনি আলীকদম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখাতে যান। অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় রবিবার (২৩ জুন) বাবাকে চট্টগ্রামে রেফার করা হয়। ওইদিন দুপুর দুইটায় বাবার সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে আলীকদম থেকে চট্টগ্রামে রওনা হই আমরা। এ সময় চালককে পাশে বসিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসেন আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. শহিদুর রহমান। তিনি অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছিলেন। কিন্তু, ভালোভাবে চালাতে পারছিলেন না। মাত্র শিখছেন। পথে একাধিকবার গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। বারবার গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ার অবস্থা হচ্ছিল। বড় বড় গর্তের ওপর দিয়ে গাড়ি চালানোয় বাবার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তখন আমরা ভয় পেয়ে যাই। সন্ধ্যায় পটিয়ার শান্তিরহাট এলাকায় আমরা নেমে পড়ি এবং সেখানেই বাবাকে পরিচিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।’
এ বিষয়ে ডা. শহিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি গাড়ি চালাতে পারেন। সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন,‘গাড়ি চালানোর সময় কারও সমস্যা হয়নি। অযথা রোগীর স্বজনরা আমার সঙ্গে ঝগড়া করেছেন।’
অ্যাম্বুলেন্স চালক থাকতে কেন আপনি চালিয়েছেন, এ প্রশ্নে ডা. শহিদুর রহমান বলেন,‘গাড়ি যে কেউই চালাতে পারেন। এতে কারও কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়।’
এ বিষয়ে জানতে আলীকদম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মিজানুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার কল দিয়েও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অংশৈ প্রু মারমা বলেন, ‘আলী কদমের মেডিক্যাল অফিসার রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়েছেন শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’