আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি দিলেও চামড়ার দাম নিয়ে এবার মাথাব্যথা নেই নাটোরের কোরবানি দাতাদের। চামড়ার দাম নিয়ে বিগত দুই-তিন বছরের ভোগান্তি আর বিরক্তি কাটাতে অধিকাংশ কোরবানি দাতা নিজেদের পশুর চামড়া দান করেছেন কওমি মাদ্রাসায়। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি চামড়া পেয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এতে অনেক বেশি আয়ের সম্ভাবনা থাকলেও চামড়ার দাম কম হওয়ায় হতাশ হয়েছেন তারা।
জেলার বিভিন্ন কোরবানি দাতা, কওমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ, আড়তদার, মৌসুমি ব্যাবসায়ী ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র উঠে এসেছে।
সদর উপজেলার উলিপুর আমহাটি গ্রামের রহিম মৃধা ১৬ হাজার টাকায় খাসি কিনে কোরবানি দেন। প্রতিবেশী রেন্টু মৃধা তিনটি খাসি কোরবানি দিয়েছেন। উভয় কোরবানি দাতাই চামড়া দান করেছেন পাশের বেজপাড়া আমহাটি মাদ্রাসায়।
জানতে চাইলে ওই দুই জন জানান, সারাদিন চামড়া কিনতে কোনও ব্যাবসায়ী আসেননি। খোঁজ নিয়ে শহরে চামড়ার দাম কম জানার পর বিগত কয়েক বছরের ভোগান্তির কথা মনে পড়ে যায়। পরে মাদ্রাসায় চামড়া দান করেছেন তারা।
দিঘাপতিয়া এলাকার রুস্তম আলী জানান, সাত জন মিলে ৭৬ হাজার টাকায় গরু কিনে কোরবানি দিয়েছেন। গোশত তৈরি হয়ে গেলেও চামড়ার ক্রেতা মেলেনি। পরে পাশের ফলজুল উলুম বহুমুখি কওমি মাদ্রাসায় চামড়া দান করেন তারা।
ফলজুল উলুম বহুমুখী কওমি মাদ্রাসার মোহতামিম সিদ্দিকুর রহমান জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি চামড়া পেয়েছেন। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর দাম কম হওয়ায় প্রত্যাশিত আয় হয়নি। এ বছর ১০৩টি গরুর চামড়া, ৩০০টি খাসি ও বকরির চামড়া পেয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ষাঁড়ের চামড়া ৬২০ টাকা, গাভী ১০০ টাকা, খাসি ৩০ ও বকরি ১০ টাকা পিস হিসেবে চামড়াগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
শহরের তেবাড়িয়া এলাকার মাহমুদিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম ও জেলা ঈমান আকিদাহ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ জানান, তার মাদ্রাসা এ বছর ১৬টি ষাঁড় এবং প্রায় ৩২টি ছাগলের চামড়া পেয়েছে। ষাঁড়ের বড় চামড়া ৬০০, ছোট ২০০, গাভী ২০০, খাসি আকার ভেদে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করলেও বকরির চামড়া কিনতে চায়নি কোনও আড়তদার বা মৌসুমি ব্যাবসায়ী। পরে টাকা ছাড়াই ওই বকরির চামড়াগুলো রেখে এসেছেন তিনি।
কান্দিভিটুয়া আল জামিয়াতুন নুরিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম ও জেলা তানজিন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন জানান, তার মাদ্রাসায় এ বছর ২৭৪টি ষাঁড়, ২৪টি গাভী, ৪২২টি খাসি ও বকরি-ভেড়া মিলে ৯টি চামড়া সংগ্রহ হয়। পরে প্রতিটি ষাঁড়ের চামড়া ৬৩০, গাভী ১৫০, খাসি ২০ এবং বকরি ভেড়ার চামড়া মাত্র ৫ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করেছেন তারা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এক জোড়া চামড়ার স্যান্ডেল কিনতে ১২শ’ থেকে তিন হাজার টাকা লাগে। অন্যান্য প্রতিটা জিনিসের দামই বেড়েছে। অথচ দিনের পর দিন কমছে চামড়ার দাম। এতে ধ্বংসের মুখে পড়ছে চামড়া শিল্প। এজন্য ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট ছাড়াও চামড়া রফতানির ক্ষেত্রে কাজ করা ট্যানারি শিল্প মালিক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায় এড়াতে পারেন না দাবি করে অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ দাবি করেন, সরকারি নির্দেশনা ও নির্ধারিত দামেই চামড়া কিনেছেন তারা। তবে চামড়া বিক্রেতাদের দাম কম পাওয়ার অভিযোগ বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আশরাফুল ইসলাম জানান, চামড়ার দাম কম দেওয়ার অভিযোগ তারা জেনেছেন। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন খোঁজ নিচ্ছে বলে জানান তিনি।