X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংঘর্ষে জড়ালেন শিক্ষার্থীরা, উপাচার্য কেন অবরুদ্ধ?

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ মার্চ ২০২৩, ২১:২১আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩, ২১:২১

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। একইসঙ্গে উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। যদিও আড়াই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বাসভবনে প্রবেশ করেন উপাচার্য। 

তবে উপাচার্যকে দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ করে রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক শিক্ষার্থী। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এখানে উপাচার্যের দোষ কোথায়? কেন তাকে এত সময় অবরুদ্ধ রাখা হলো। বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।  

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ বলছে, সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, সেটি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এজন্য উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ বলছে, কিছু শিক্ষার্থী অতি উৎসাহী হয়ে উপাচার্যকে নিয়ে বিনোদপুর যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উপাচার্য যেতে রাজি না হওয়ায় তারা অবরুদ্ধ করে রাখেন। তবে এটি আশা করেনি শিক্ষার্থীদের এই অংশ।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এলে তোপের মুখে পড়েন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী বলেছেন, আড়াই ঘণ্টা ধরে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই থামানো যায়নি। এজন্য হতাহত বেশি হয়েছে। রাতেই ঘটনাস্থলে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম ও হুমায়ুন কবির। তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেইসঙ্গে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েনের ব্যবস্থা করেছেন।

উপাচার্যকে অবরুদ্ধ রাখার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলাকালে উপাচার্যের ঘটনাস্থলে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু সেখানে তিনি থাকেননি। শিক্ষার্থীদের পক্ষে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারিনি। এজন্য আমরা তার প্রতিক্রিয়া শুনতে অবরুদ্ধ করেছিলাম।’ 

উপাচার্য চাইলে গতকাল রাতেই এই ঝামেলা সমাধান করতে পারতেন দাবি করে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সায়েম বলেন, ‘যেহেতু তিনি ঝামেলা সমাধান করেননি এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ নেননি, এজন্য রবিবার তাকে অবরুদ্ধ করেছি আমরা। মূলত পদক্ষেপের বিষয়গুলো জানতে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তবে এত সময় অবরুদ্ধ করা ঠিক হয়নি।’

উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করার বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে একমত ছিলাম না বলে জানালেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান খান।

প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হামলার প্রতিবাদে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করেছি। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি এবং ছয় দফা দাবি পেশ করেছি। যেখানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি জোরালোভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এসবের মধ্যে কয়েকজন অতি উৎসাহী শিক্ষার্থী উপাচার্যকে নিয়ে ঘটনাস্থল বিনোদপুরে যেতে চান। কিন্তু আমরা সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ, বিশেষ করে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের দাবির সঙ্গে একমত ছিলাম না। এমনকি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করার চিন্তাও করিনি।’

তবে সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল বলে জানালেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনাটি  অনাকাঙ্ক্ষিত। সংঘর্ষে আমাদের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ দীর্ঘ সময়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি তারা। বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা এবং হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা রয়েছে বলে মনে করি। তবে দীর্ঘ সময় উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়টিও অনাকাঙ্ক্ষিত। খবর পেয়ে আমরাই উপাচার্যকে বাসভবনে পৌঁছে দিয়েছি।’ 

ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি সফিকুন্নবী সামাদী।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক ছিল। উপাচার্য দাবিগুলো মেনেও নিয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি করে বসলো, উপাচার্যকে বিনোদপুর বাজারে যেতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেখানে যেতে রাজি হননি উপাচার্য। কারণ সেখানে যাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন তারা। আমার মনে হয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কিছু বহিরাগত ঢুকেছিল। তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল। এজন্য তারাই উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার ইন্ধন দিয়েছেন।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের যে ধরনের ভূমিকা রাখার কথা ছিল, সেটি রাখতে পারেনি। ফলে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। তারা জরুরি ভিত্তিতে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো আমরা। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।’

এর আগে শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পুলিশের হামলার বিচার দাবিতে রবিবার সকাল থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এলে তোপের মুখে পড়েন উপাচার্য। পরে উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের অবরুদ্ধ করা হয়। আড়াই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বাসভবনে যান উপাচার্য।

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলামিন। বাসের আসনে বসাকে কেন্দ্র করে তার সঙ্গে চালক শরিফুল ও চালকের সহকারী রিপনের কথা কাটাকাটি হয়। বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছালে রিপনের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর আবার বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় স্থানীয় এক দোকানদার এসে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হন। তখন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা হামলা চালান। একপর্যায়ে স্থানীয় দোকানদাররা বিনোদপুর বাজারে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকের ভেতরে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। থেমে থেমে চলা দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে দুই শতাধিক আহত হন। শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর এলাকায় দোকানে ও পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন। তিন ঘণ্টা পর টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

/এএম/
সম্পর্কিত
গাছে ধাক্কা লেগে উড়ে গেলো বাসের ছাদ, একজন নিহত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বেনাপোলে দুদকের অভিযান
বেতনের দাবিতে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক অবরোধ, শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ
সর্বশেষ খবর
‘অ্যাকটিভ অর্গানাইজেশন অ্যাওয়ার্ড’ পেলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
‘অ্যাকটিভ অর্গানাইজেশন অ্যাওয়ার্ড’ পেলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
সনদ বাণিজ্য: কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে
সনদ বাণিজ্য: কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে
পদ্মায় গোসল করতে নেমে ৩ মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু
পদ্মায় গোসল করতে নেমে ৩ মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা