রাজশাহীতে থেমে থাকা ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুনে পুড়ে গেছে ট্রাকের সামনের অংশ। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে রাজশাহী নগরীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জেলা স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে।
ট্রাকটির মালিক রাজশাহী নগরীর কাজিহাটা এলাকার শফিকুজ্জামান শোভন জানান, সোমবার (২০ নভেম্বর) অন্য একটি স্থান থেকে পণ্য নিয়ে এসে ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট-১৬-২৫৭৯) ফাঁকা করে সেখানে রেখে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার ভোরে জানতে পারি, ট্রাকটিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। ছুটে এসে দেখি, ট্রাকের কেবিনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদরদফতরের কর্মীরা ট্রাকটির আগুন নেভান। সামনের অংশ পুড়ে গেছে।
রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানার ওসি মাহবুব আলম জানান, মঙ্গলবার ভোরে ট্রাকে আগুনের খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যান। আগুনে চালকের আসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কে বা কারা আগুন দিয়েছে, তা ওই ট্রাকের কেউ ও আশপাশে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা দেখেননি। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
রাজশাহীতে গত ২৯ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত পাঁচটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২৯ অক্টোবর বাঘা উপজেলার আটঘরিয়ায় এক ট্রাফিক সার্জেন্টের ব্যক্তিগত গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় দুটি ট্রাকে, গোদাগাড়ী উপজেলায় যাত্রীবাহী বাসে ও পুঠিয়া উপজেলায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া পুঠিয়া উপজেলায় দিনের বেলায় ট্রাক ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। চারঘাটে রেললাইনে দুই দফা নাশকতার চেষ্টা হয়েছে।
এদিকে, রবিবার (১৯ নভেম্বর) গোদাগাড়ী উপজেলায় রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে পেট্রোল বোমায় পোড়া ‘শিমু নূর তাজ’ নামের যাত্রীবাহী বাস মালিকের ভাই সোহেল রানা জানান, বাস পোড়ার খবরে তার বড় ভাই মালিক জুয়েল রানা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, বাসটি কেনার বয়স ছয় মাস। এরপর ধারদেনা করে বাসের নতুন বডি করি। নতুন বডি করার বয়স তিন মাস হবে। বাস নতুনই আছে। এর মধ্যে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো। এটা শুধু আমার ক্ষতি হলো না। এ কারণে রাষ্ট্রের ক্ষতি হলো। কারণ এই বাসটা ঠিক করে সড়কে নামাতে তার ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ হবে। বাসটি সাড়ে ১২ লাখ টাকায় কেনা হয়। তারপর বাসের বডিসহ খরচ পড়ে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা। বাসটি সড়কে নামাতে নতুন করে ধারদেনায় পড়তে হবে।
তিনি আরও জানান, মালিক সমিতি থেকে বাসের কাগজপত্র চেয়েছে। সেই কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। তারা কেন্দ্রে যোগাযোগ করেছে। রাজশাহীর নেতারা আশ্বাস দিয়েছে ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা পাওয়া যাবে। তবে সময় লাগবে। ততদিনে কিস্তি কীভাবে দেবো এই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আমরা সড়কে গাড়ি চালালে আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। গাড়ি ও যাত্রীর যেন কোনও ক্ষতি না হয়।
রাজশাহী জেলা বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নুরুজ্জামান মোহন বলেন, বাসটি আগুনে পুড়ে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বাসের কাগজপত্র ফেডারেশনে পাঠাবো। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হবে।
গোদাগাড়ী থানার ওসি আবদুল মতিন বলেন, বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বাসের চালক তহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এই মামলায় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।