X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে ২৫ টাকায় কিনে ঢাকায় ১০০ বিক্রি

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
০৪ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩০আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩০

রমজানের শুরুতেই ঢাকার কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন বড় বাজারের আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা রংপুরের সবজি বাজারে ভিড় জমিয়েছেন। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার থেকে ২৫ টাকা কেজিতে বেগুন, ৪০ টাকায় শসা ও ২০ টাকায় খিরা কিনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন তারা।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এসব বেগুন, শসা ও খিরা ঢাকায় ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন তারা। আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, রংপুরে সবজির দাম অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় বেশি করে কিনছেন। কারণ রমজানে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে বেগুন, শসা ও লেবুর। দাম কম পাওয়ায় ভিড় করেছেন তারা।

রংপুরের প্রধান পাইকারি সবজি বাজার সিটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার আড়তদাররা বেগুন, শসা ও খিরা কিনছেন। বস্তায় ভরে ট্রাকে লোড করছেন শ্রমিকরা। 

রংপুর কাঁচা বাজারের আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, ‘ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা মিঠাপুকুর, বলদিপুকুর, পালিচাড়া ও শঠিবাড়ি এলাকা থেকে সবজি কিনেছেন। ওসব বাজারে সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। কৃষকরা ক্ষেত থেকে সবজি তুলে সরাসরি হাটে নিয়ে আসেন। রংপুরের আড়তদারসহ ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় বড় ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কেনেন। কিন্তু এবার রমাজানের শুরুতেই ঢাকার বিভিন্ন বাজারের সবজি ব্যবসায়ীরা রংপুরের আড়তগুলো থেকে টনে টনে বেগুন, শসা ও খিরা কিনছেন। এতে দামও বেড়ে গেছে।’

রংপুরের প্রধান পাইকারি সবজি বাজারে শসার কেজি ৪০ টাকা

রংপুরের আড়তদার ব্যবসায়ী নেতা গোলাম রসুল বলেন, ‘দুদিন আগেও রংপুরে পাইকারিতে বেগুনের পাল্লা (পাঁচ কেজি) ৯০-১০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। একই দামে শসা ও খিরা বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু রমজান ঘিরে ঢাকার আড়তদারদের বেশি কেনাকাটার কারণে হঠাৎ এসব কাঁচা পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বলা যায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা।’

রংপুরের আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রমজানে ঢাকার ব্যবসায়ীরা রংপুরের আড়ত থেকে বেশি পরিমাণ বেগুন, শসা, খিরা ও অন্যান্য সবজি কিনছেন। এর আগে এত বেশি ঢাকার ব্যবসায়ীরা এখানে আসেননি।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘রমজান মাসে ঢাকায় শসা, খিরা এবং বেগুনের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ইফতারে শসা কিংবা খিরার আইটেম সবাই রাখেন। পাশাপাশি বেগুনি তো সবারই পছন্দের। দুদিন আগেও এসব শসা, খিরা এবং বেগুনের দাম ১৫-২০ টাকা ছিল। এখন হঠাৎ বেড়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এটা সত্য আমরা পাইকারিতে ২৫ টাকা কেজিতে বেগুন কিনছি। শসা ৪০ আর খিরা ২০ টাকা কিনছি। তবে ঢাকায় নিতে আমাদের অনেক খরচ পড়ে। এজন্য ৫০-৬০ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না। আমরা সীমিত লাভেই বিক্রি করি। কিন্তু খুচরা ও অন্যান্য ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করায় ভোক্তাদের ওপর চাপ বেশি পড়ে। এজন্য বাজার মনিটরিং করা জরুরি।’

২৫ টাকা কেজিতে কেনা বেগুন ঢাকায় ১০০-১২০ টাকা কেন জানতে চাইলে মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘কয়েক হাত ঘুরে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আমরা পণ্য কেনার পর লোড-আনলোড, ট্রাক ভাড়া, শ্রমিক খরচ, পথে পথে চাঁদাবাজি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাঁদাবাজি ও শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য আরও কিছু খরচ আছে। এজন্য সব খরচ হিসাব করে আমাদের সীমিত লাভে এসব কাঁচা পণ্য বিক্রি করতে হয়। আমাদের কাছ থেকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে আরেক দফা কিংবা দ্বিগুণ দামে পণ্য বিক্রি করেন। এখানে তো আমাদের হাত নেই।’ 

বেশি দামে সবজি কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা

একই কথা বললেন রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের সবজির আড়তদার সাহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার শসা, বেগুন আর খিরার চাহিদা বেশি। আমরা বিভাগীয় বিভিন্ন শহর থেকে এসব কাঁচা পণ্য কিনছি লাভের আশায়। কিন্তু পথে পথে চাঁদাবাজি, ট্রাক ভাড়া বেশিসহ অনেক খরচ। এজন্য ঢাকায় বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’

এদিকে, ২০-২৫ টাকা কেজিতে বেগুন, শসা ও খিরা বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। বলদিপুকুরের সবজি চাষি সাহেব আলী বলেন, ‘আমরা সবজি চাষ করে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। অথচ আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা কম দামে সবজি কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। 

একই কথা বললেন পালিচড়ার সবজি চাষি আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা বেগুনের কেজি ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারি। অথচ খুচরা বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনও বেগুন নেই। আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা লাভ গুনছেন, আমরা লোকসান দিচ্ছি।’

রংপুরের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, লেবুর ডজন ৭০ থেকে বেড়ে ১০০ টাকা, মোটা বেগুন ২০ থেকে ৪০-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আলুর কেজিতে ১০, পটল কেজিতে ২০, মিষ্টি কুড়া প্রতি পিস ২০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতির জন্য বাজার মনিটরিং না করাকে দায়ী করছেন সাধারণ ক্রেতারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রংপুর সিটি করপোরেশনের বাজার পরিদর্শক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বাজার মনিটরিং শুরু করবো। ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’ 

/এএম/
সম্পর্কিত
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানতীব্র গরমে ঝরছে আমের গুটি, উৎপাদন নিয়ে চাষিদের শঙ্কা
কৃষকের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দিলো ছাত্রলীগ
সর্বশেষ খবর
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা