X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২

৩ দিনেও বন্যাদুর্গতদের সংখ্যা জানতে পারেনি জেলা প্রশাসন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
১৮ জুন ২০২২, ২২:২১আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ২৩:১১

উজানের পানিতে কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় প্লাবিত এলাকার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদী অববাহিকার হাজারো পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। গত তিন দিন ধরে বন্যার পানির সঙ্গে বসবাস করলেও জেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে পারেনি জেলা প্রশাসন।

তবে শনিবার (১৮ জুন) প্লাবিত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দুর্গতদের বাড়ি থেকে সরে গিয়ে আবাসন কিংবা অন্য কোনও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। দুর্গতদের সহায়তায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। শুরু হয়েছে খাদ্য বিতরণ।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে এদিন কমেছে তিস্তার পানি। উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত জেলায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানায় পাউবো।

কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার জানান, ধরলা নদীর পানিতে প্লাবিত তার ইউনিয়নের সিংহভাগ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলা প্রশাসনকে নিয়মিত তথ্য দেওয়া হলেও শনিবার পর্যন্ত (তিন দিন) দুর্গতদের জন্য কোনও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি।

তিন দিন ধরে বন্যার পানির সঙ্গে বসবাস করলেও মানুষের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে পারেনি প্রশাসন

চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্গত মানুষজন আমাদের কাছে এসে খাদ্য সহায়তা চাইছে। কিন্তু এখনও তাদের হাতে কিছু দিতে পারিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।’

এদিকে, ব্রহ্মপুত্রের ঢলে গত তিন দিনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অধিকাংশ দ্বীপচরগুলো প্লাবিত হয়ে বাসিন্দাদের ঘরবাড়িতে কোথাও কোমর আবার কোথাও বুকসমান উচ্চতায় পানি বিরাজ করছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। নদের দুর্গম চরাঞ্চলের অনেক পরিবার নৌকা ও বাঁশের মাচায় আশ্রয় নিয়ে দিন পার করছেন। কোনও কোনও পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। নারী-শিশু আর গবাদি পশু নিয়ে এসব পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব এলাকায় নলকূপ আর চারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর পার্বতীপুরের জব্বার আলী জানান, পানি প্রবেশ করায় তিনি পরিবার নিয়ে ঘরের ভেতর থাকতে পারছেন না। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করছেন। গত তিন-চার দিন ধরে দুর্ভোগে থাকলেও তার এলাকায় কোনও সহায়তা পৌঁছায়নি।

জব্বার বলেন, ‘খাওনের কষ্ট, পানির কষ্ট। আমাগো জন্যে কোনও সাহায্য আহে নাই। বউ-পোলাপান নিয়া বেকায়দায় আছি।’

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ১২০০ পরিবারের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। সব ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোড়ারচর, চরভগবতীপুর, ঝুনকারচর ও কালির আলগা গ্রাম।

এ অবস্থায় শনিবার বিকালে দুর্গতদের মাঝে বিতরণের জন্য সরকারি খাদ্য সহায়তা নিয়ে যাত্রাপুরে গেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ‘সরকারিভাবে ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারাসহ এসব খাবার চরভগবতীপুর ও পোড়ারচরের পরিবারগুলোর মাঝে বিতরণ করছি।’

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার জানান, তার উপজেলার বজরা, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নসহ থেতরাই ইউনিয়নের কিছু অংশ প্লাবিত হতে শুরু করেছে। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে শনিবার বিকাল পর্যন্ত উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাওয়া যায়নি।

আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত জেলায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানায় পাউবো

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, বন্যাদুর্গতদের জন্য এ পর্যন্ত ২৯৫ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে ১০ লাখ টাকা ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং গো খাদ্যের জন্য ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন এসব বরাদ্দ দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করবে।

অপরদিকে, প্লাবিত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে এবং নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, ‘শনিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে জেলায় প্রায় ১২ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। দুর্গত এলাকার লোকজনকে অনুরোধ করবো, তারা যেন বাড়িঘর ছেড়ে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন। কারণ, রাত্রীকালীন আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পেলে যেকোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আমরা এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ গণমাধ্যমকেও এই তথ্য প্রচারের অনুরোধ জানান তিনি।

‘দুর্গত এলাকায় সরকারি সহায়তা বিতরণ শুরু করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে সংকটে থাকা সবাইকে সহায়তা দেওয়া হবে’- যোগ করেন জেলা প্রশাসক।

/এএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ধোবাউড়ায় নিতাই পাড়ের মানুষের কষ্ট২৫ বছরেও হয়নি স্থায়ী বেড়িবাঁধ, বর্ষা এলেই আতঙ্কে থাকেন তারা
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চার জেলায় ৩০০ ঘর হস্তান্তর
বন্যায় ভেসে গেছে সব, ঈদের আনন্দ নেই তাদের ঘরে
সর্বশেষ খবর
সাবেক মেয়র আইভী কাশিমপুর কারাগারে
সাবেক মেয়র আইভী কাশিমপুর কারাগারে
মাদ্রাসা সহকারী শিক্ষকদের ৮ম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবি
মাদ্রাসা সহকারী শিক্ষকদের ৮ম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবি
তৃতীয় দিনের মতো সংঘর্ষে জড়ালো ভারত-পাকিস্তান, সীমান্তজুড়ে যুদ্ধাবস্থা
তৃতীয় দিনের মতো সংঘর্ষে জড়ালো ভারত-পাকিস্তান, সীমান্তজুড়ে যুদ্ধাবস্থা
হাজারীবাগে যুবকের মরদেহ উদ্ধার
হাজারীবাগে যুবকের মরদেহ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগ, তুলেছেন দুর্নীতির অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগ, তুলেছেন দুর্নীতির অভিযোগ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার আইভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার আইভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান