X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরির পেছনে না ছুটে মাছ চাষ, মাসে আয় ৭ লাখ

হালিম আল রাজী, হিলি
২৬ জুলাই ২০২২, ১৮:১৫আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২২, ১৮:৩০

পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে রেণু থেকে পোনা উৎপাদন করে চমক দেখিয়েছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার আবু সালেহ মো. তারেক। মাত্র সাড়ে সাত বছরে হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। বর্তমানে তার মাসে আয় সাত লাখ টাকা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ৬৮ বিঘা জমির ওপর ১৪টি পুকুরে মাছ চাষ করছেন তারেক। পোনা উৎপাদনের পাশাপাশি দেশি প্রজাতির রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প, ব্রিগেড, পুঁটি, বাঁটা, সরপুঁটি ও গ্রাসকার্প মাছ চাষ করছেন। এ জন্য খামার দিয়েছেন। বর্তমানে খামারে কাজ করছেন ১২ শ্রমিক।

আবু সালেহ মো. তারেক বিরামপুর পৌর শহরের পুরাতন বাজার এলাকার এ কে এম শাহাজাহানের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। ২০১৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন। বাবা অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক। বড় ভাই শিক্ষক, মেজো ভাই একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন।

নিজের খামারে মাছকে খাবার দিচ্ছেন আবু সালেহ তারেক

উদ্যোক্তা হওয়ার প্রয়াসে ২০১৪ সালে বিরামপুর উপজেলার বিনাইল গ্রামে বাবার তিন বিঘা একটি পুকুরে রেণু থেকে পোনা উৎপাদন শুরু করেন তারেক। ওই বছরই পোনা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন। এরপর আরও দুটি পুকুরে পোনা উৎপাদন করেন। বাড়তে থাকে পোনা উৎপাদনের পরিসর। এরপর আরও কয়েকটি পুকুরে পোনা উৎপাদনের পাশাপাশি অন্যান্য দেশি মাছ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে নিজস্ব জমিতে ছোট-বড় ৯টি পুকুরে পোনা উৎপাদন করেন। অন্যান্য মাছ চাষের জন্য আরও পাঁচটি পুকুর ইজারা নিয়েছেন। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠা করেন ‘তাজ অ্যাগ্রো ফার্ম’। এটি তার মায়ের নামে নামকরণ করেছেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পোনা উৎপাদন ও গুড একোয়া কালচার পদ্ধতি অনুসরণ করে বিপণন করেন। 

গত সাড়ে সাত বছর ধরে পোনা বিক্রির পাশাপাশি মাছ উৎপাদন ও সম্প্রসারণে খামারিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে তাজ অ্যাগ্রো ফার্ম। পার্বতীপুর মৎস্যবীজ হ্যাচারির তথ্যমতে, গত কয়েক বছর থেকে দিনাজপুর জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ দেশি মাছের রেণু সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তাজ অ্যাগ্রো ফার্ম। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খামারিরা এসে এখান থেকে পোনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান।

খামার থেকে মাছ তুলছেন তারেক

গুণগত মানের পোনা উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মাছ চাষ সম্প্রসারণে অবদান রাখায় দেশের শ্রেষ্ঠ মাছচাষি হিসেবে পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তাজ অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক আবু সালেহ মো. তারেক। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রবিবার (২৪ জুলাই) জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক স্বর্ণপদক ও ৫০ হাজার টাকা তারেকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

আবু সালেহ মো. তারেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বছর ৯টি পুকুরে রুই, শিং, পাবদা ও গুলশা মাছের ৪৬ লাখ পোনা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। এজন্য খামারে বিনিয়োগ করতে হয়েছিল ৫৫ লাখ টাকা। বছর শেষে সব খরচ বাদ দিয়ে আয় হয়েছে ৮৩ লাখ টাকার বেশি। বর্তমানে খামারে দুই নারীসহ ১২ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ১৪টি পুকুরে মাছ চাষ করছি। এরমধ্যে পাঁচটি পুকুর ইজারা নেওয়া। ৯টি পুকুরে দেশি প্রজাতির রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প, ব্রিগেড, পুঁটি, বাঁটা, সরপুঁটি, গ্রাসকার্প, শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা ও টেংরা মাছের পোনা উৎপাদন ও বিপণন করছি। বাকি পাঁচটি পুকুরে বিভিন্ন দেশি মাছ চাষ করছি। এজন্য অল্প সময়ে সফল হতে পেরেছি।’ 

তারেক আরও বলেন, ‘মাছ চাষের পাশাপাশি বিলুপ্ত-প্রায় চিতল মাছকে কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে দিনাজপুরে চাষ উপযোগী করে তোলার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছি। এজন্য শ্রেষ্ঠ মাছচাষি হিসেবে স্বর্ণপদক পেয়েছি। এর মধ্য দিয়ে আমার কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।’

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে দেশের শ্রেষ্ঠ মাছ চাষি হিসেবে স্বর্ণপদক গ্রহণ করছেন আবু সালেহ তারেক

খামারের শ্রমিক আব্দুল করিম ও মেহেদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারেক ভাই খামার দেওয়ায় আমাদের মতো ১২ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। পুকুর দেখাশোনা, মাছকে খাবার দেওয়া, মাছ ধরাসহ বিভিন্ন কাজ করি আমরা। এতে মাস শেষে বেতন পাই। তা দিয়ে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে সংসার চলছে।’

বিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কাউসার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে দুই হাজার ২০০ পুকুর রয়েছে। মাছ চাষি রয়েছেন এক হাজার ৬০০ জন। এরমধ্যে তাজ অ্যাগ্রো ফার্মে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রেণু থেকে পোনা উৎপাদন করা হয়। পোনার গুণগত মান উন্নত হওয়ায় খামারিদের কাছে খুবই পরিচিত। রোগমুক্ত এবং উন্নত হওয়ায় এই ফার্মের পোনা ব্যবহার করে খামারিরা লাভবান হচ্ছেন। ফার্মে উৎপাদিত পোনা দিয়ে উপজেলার মোট চাহিদার তিনভাগ পূরণ করা সম্ভব। পোনা উৎপাদনের পাশাপাশি মাছ চাষ ও বিলুপ্ত-প্রায় মাছ চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন আবু সালেহ তারেক। এজন্য প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক স্বর্ণপদক পেয়েছেন।’

/এএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ
মহিপুরে আগুনে পুড়ে ছাই ২৩ মাছের আড়ত
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আধুনিকায়নে কাজ করবে জাইকা ও বিএফডিসি
সর্বশেষ খবর
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন