কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে তথ্য সংগ্রহে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম হামলার শিকার হন। ঘটনার ১৯ দিন পর মামলা নিবন্ধন করেছে পুলিশ। রাজিবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সাত ইউপি সদস্য ও এক নারী ইউপি সদস্যের স্বামীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এর আগে গত ২৭ আগস্ট রাজিবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদে সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিক রফিকুলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ঘটনার দিনই থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও তা মামলা হিসেবে নিবন্ধন করেনি পুলিশ। রাজিবপুর থানার ওসি মোজাহারুল ইসলাম মামলা নিবন্ধনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ আগস্ট দুপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের অনলাইন ডাটাবেজ তৈরির কাজ শুরু হয়। ডাটাবেজ তৈরিতে কোনও টাকা নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও রাজীবপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিরন মোহাম্মদ ইলিয়াস ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা মিলে হতদরিদ্রদের থেকে জনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা আদায় করছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। টাকা দিতে না চাইলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরন মোহাম্মদ ইলিয়াসসহ অন্য সদস্যদের সঙ্গে সুবিধাভোগীদের হট্টগোল বাধে। খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম, সহিজল ইসলাম, মুরাদুল ইসলাম মুরাদ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করছিলেন সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম। এ সময় চেয়ারম্যান মিরন মোহাম্মদ ইলিয়াসের নেতৃত্বে অতর্কিতভাবে তার ওপর হামলা চালায় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা। হামলায় গুরুতর আহন হন তিনি। এ সময় ছিনিয়ে নেওয়া হয় তার মোবাইল ফোন, ক্যামেরা এবং পকেটে থাকা আট হাজার ৩০০ টাকা। পরে সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ওই দিন সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজীবপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তা মামলা হিসেবে নিবন্ধন করতে সময়ক্ষেপণ শুরু করে পুলিশ। পরে বিষয়টি পুলিশ সুপারের নজরে আনা হলে মামলা নিবন্ধন হয়।
রাজিবপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সহিজল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও মামলা না নিয়ে মীমাংসার কথা বলে কালক্ষেপণ করেন রাজীবপুর থানা পুলিশ। তবে ঘটনার ১৯ দিন পর বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলা রুজু করেন রাজীবপুর থানার ওসি।
সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান হামলার শিকার ওই সাংবাদিকসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।
হামলার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মিরন মোহাম্মদ ইলিয়াসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
রাজিবপুর থানার ওসি মোজাহারুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা রুজু করা হয়েছে। আমি কর্মস্থলে না থাকায় সেকেন্ড অফিসার মামলা রেকর্ড করেছেন। তবে মামলা নিতে বিলম্বের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
তার দাবি, ‘ভুক্তভোগীরা যেদিন এজাহার দিয়েছেন সেদিনই মামলা নেওয়া হয়েছে। তবে আমি ওইদিন থানায় ছিলাম না।’
আসামিদের গ্রেফতার করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘আমি থানায় নাই। তাই গ্রেফতার হয়েছে কিনা জানি না।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও রাজিবপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক আমিনুল হক বলেন, ‘মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর হয়েছে। তারা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’