X
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে মিল থাকায় গুলি করে হত্যা, ৫১ বছরেও মেলেনি স্বীকৃতি

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:৪৪আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:৪৪

স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সঙ্গে মিল থাকায় জনসম্মুখে মাথায় গুলি করে কুড়িগ্রামের মুজিবর রহমানকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। দেশ স্বাধীনের ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বীকৃতি পাননি স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী এই যোদ্ধা।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ময়ছার আলী ও মিজানুর রহমান। তাদের ভাষ্যমতে, ১৯৭১ সালের ২২ জুন রাতের আঁধারে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারীতে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পের টেলিফোন সংযোগ কেটে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় ওই অঞ্চলে থাকা হানাদার বাহিনীর কমান্ডাররা। ২৩ জুন দুপুরে নাগেশ্বরীর সন্তোষপুর ইউনিয়নের ব্যাপারীহাট বাজারে গ্রামের যুবকদের জড়ো করে টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজতে থাকে তারা। গ্রামের ২০-২৫ যুবককে বাজারে ধরে আনা হয়। বন্দুকের নল তাক করে নাম-পরিচয় ও কর্মসহ বিস্তারিত জিজ্ঞসাবাদ করা হয়। সেদিন বাজারে তেল কিনতে গিয়েছিলেন পাশের নিলুর খামার গ্রামের যুবক মুজিবর রহমান। তাকেও অভিযুক্তদের সারিতে দাঁড় করায় হানাদার বাহিনী। বন্দুকের নল তাক করে তার নাম-পরিচয় ও কর্ম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনায় সম্পৃক্ততা না থাকায় একে একে ছেড়ে দেওয়া হয় আটক যুবকদের। কিন্তু মুজিবরকে ছাড়েনি। টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনায় সম্পৃক্ততা কিংবা অন্য কোনও অপরাধ ছিল না তার। শুধু অপরাধ ছিল তার নাম মুজিবর রহমান। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সঙ্গে মিল থাকায় জনসম্মুখে মাথায় গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় মুজিবরকে। বাজারের পাশে ড্রেনে পড়ে থাকে তার রক্তাক্ত মরদেহ। উপস্থিত যুবকদের দিয়ে মরদেহ তুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাড়িতে। স্থানীয়রা পাশের সূর্যকুটি গ্রামে মুজিবরকে সমাহিত করেন।

ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও সেদিনের নৃশংসতা আজও ভোলেননি আটক যুবকদের মধ্যে জীবিত থাকা ময়ছার আলী ও মিজানুর রহমান। সম্প্রতি নাগেশ্বরীর সন্তোষপুর গ্রামে কথা হয় তাদের সঙ্গে। তাদের বর্ণনায় উঠে আসে মুজিবর হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক কাহিনি।

মুজিবরকে হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ময়ছার আলী ও মিজানুর রহমান

মুজিবর রহমান সন্তোষপুর ইউনিয়নের নিলুর খামার গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তার বাবার নাম নছর উদ্দিন ব্যাপারী। মৃত্যুকালে মুজিবর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তার স্ত্রী মারা যান। বর্তমানে তার ছেলেমেয়েরা বেঁচে আছেন। 

ময়ছার আলী ও মিজানুর রহমান এখন অনেকটাই বৃদ্ধ। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তারা বলেন, ‘সেদিন সন্তোষপুরের ২০-২৫ জন যুবককে হানাদার বাহিনী বন্দুকের নল তাক করে বাজারে জড়ো করে। টেলিফোনের লাইন কে কেটেছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মুজিবরসহ আমরা কেউই টেলিফোনের তার কাটায় জড়িত ছিলাম না। সবাইকে ছেড়ে দিলেও বাজারের ড্রেনের কাছে দাঁড় করিয়ে সবার সামনে মুজিবরের মাথায় গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। অপরাধ ছিল তার নামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নামের মিল। আমাদের চোখে সেই দৃশ্য এখনও ভাসে।’

মুজিবরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে ময়ছার আলী ও মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায়। মুজিবরকে শহীদের স্বীকৃতি দিলে তার আত্মা শান্তি পাইতো। তার ছেলেমেয়েরা বাকি জীবন গর্বের সঙ্গে বাঁচতে পারতো।’

মুজিবর রহমানের শেষ গোসল করিয়েছিলেন সূর্যকুটি গ্রামের বাটুল। বাটুল বেঁচে না থাকলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাটুলের পুত্রবধূ জমিলা বেগম বেঁচে আছেন।

জমিলা বেগম বলেন, ‘সেদিন রক্তে মুজিবর চাচার শরীর দেখা যাচ্ছিল না। আমার শ্বশুর তার গোসল করান। এরপর এখানে (কবর দেখিয়ে) তাকে কবর দেওয়া হয়।’

মুজিবর রহমানের একমাত্র ছেলে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে মিল থাকায় আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। দেশ স্বাধীনের ৫১ বছর পার হয়ে গেলেও বাবার আত্মত্যাগ রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পায়নি। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমার বাবাকে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাহলে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে, আমরাও বাকি জীবন গর্বের সঙ্গে বাঁচতে পারবো।’

কুড়িগ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনকারী বীর প্রতীক আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘সেদিন ব্যাপারীরহাট বাজারে আটক যুবকদের ছেড়ে দিলেও শুধু বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে মিল থাকার কারণে মুজিবর রহমানকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। মুজিবরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বীকৃতি দিলে তার আত্মা শান্তি পাবে, আমরাও শান্তি পাবো।’

/এএম/
সম্পর্কিত
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
শেওড়াপাড়ায় দুই বোন খুন: সিসিটিভিতে ধরা পড়া ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ
চোর সন্দেহে পিটুনিতে যুবককে হত্যার অভিযোগ
সর্বশেষ খবর
তীব্র তাপপ্রবাহ: পথচারীদের জন্য মসজিদ-ওজুখানা খোলা রাখার নির্দেশনা
তীব্র তাপপ্রবাহ: পথচারীদের জন্য মসজিদ-ওজুখানা খোলা রাখার নির্দেশনা
বিশেষ অভিযানে সারা দেশে গ্রেফতার ১৮২১
বিশেষ অভিযানে সারা দেশে গ্রেফতার ১৮২১
পাকিস্তানে শতাধিক জঙ্গি হত্যার দাবি ভারতের, রাফালে নিয়ে নীরব
অপারেশন সিঁদুরপাকিস্তানে শতাধিক জঙ্গি হত্যার দাবি ভারতের, রাফালে নিয়ে নীরব
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ১৮ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি, প্রকল্পে ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ১৮ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি, প্রকল্পে ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা
সর্বাধিক পঠিত
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো