X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগ কর্মী বাবলু হত্যা: সাত মাস ধরে থানায় পড়ে আছে গ্রেফতারি পরোয়ানা

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
২৩ মার্চ ২০২৩, ১৮:৩১আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩, ১৮:৩১

ছাত্রলীগ কর্মী বাবলু হত্যা মামলায় কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিটন মিয়াসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা সাত মাস ধরে থানায় পড়ে আছে। গত বছরের ১০ আগস্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলেও আসামিদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশের দাবি ‘পলাতক’।

গত ২৮ জুন বেলগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিটন মিয়ার নেতৃত্বে নীলকণ্ঠ গ্রামে ছাত্রলীগ কর্মী শামীম আশরাফ বাবলুর (২৩) বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলায় গুরুতর আহত হন বাবলু। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় বাবলুর বড় ভাই বাদী হয়ে চেয়ারম্যান লিটন মিয়াসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও হামলায় নেতৃত্বদানকারী চেয়ারম্যান লিটন মিয়াসহ মূল আসামিদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

পুলিশের দাবি, আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে দফায় দফায় অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তাদের জামিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

আদালতের নথির তথ্য অনুযায়ী, উচ্চ আদালত থেকে দুই দফা অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিলেও মেয়াদ শেষে আসামিরা একবারও আত্মসমর্পণ করেননি। সর্বশেষ গত অক্টোবরে তাদের জামিনের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকলেও গত পাঁচ মাসে তাদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

আদালত সূত্র জানায়, বাবলু হত্যার পর চেয়ারম্যান লিটন মিয়াসহ ছয় আসামি উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের জামিন নেন। মেয়াদ শেষে তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হলেও আত্মসমর্পণ করেননি। ফলে গত আগস্ট মাসে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গত ১১ আগস্ট গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশের কপি সদর থানায় পৌঁছালেও আসামিদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। পরোয়ানা থাকাকালীন একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর আগের জামিনের তথ্য গোপন করে আবারও উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্ববর্তীকালীন জামিন নেন লিটন মিয়া। সেই জামিনেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে গত অক্টোবরে। এসব তথ্য নথিভুক্ত করে গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল রাখেন নিম্ন আদালত। কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও পরোয়ানা তামিল করেনি থানা পুলিশ। অথচ পুলিশের চোখে ‘পলাতক’ এসব আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদর থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আসামি লিটন এই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে তিন দফা জামিন নিয়েছেন। সর্বশেষ জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও আত্মসমর্পণ করেননি। অথচ প্রতিটি আদেশে মেয়াদ শেষে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া ছিল।

এদিকে, আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বাবলুর বাবা শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ছেলে হারিয়েছি। বিচার পাওয়া তো দূরের কথা আসামিদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। মামলা ফয়সালা করতে চাপ দেয়। আমি কার কাছে বিচার দেবো।’

ছাত্রলীগ কর্মী হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জেলা ছাত্রলীগ। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সরকারদলীয় এই ছাত্রসংগঠনের নেতারা।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘চেয়ারম্যান লিটন মিয়াসহ বাবলু হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতারের বিষয়ে আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু আসামিদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ। আমার মনে হয় থানা পুলিশ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ হয়ে গেছে। তা না হলে আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ গ্রেফতার করবে না কেন?’

আইনজীবীরা বলছেন, একই মামলায় উচ্চ আদালতের একাধিক বেঞ্চ থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন নেওয়ার সুযোগ নেই। আসামিরা তথ্য গোপন করে একাধিকবার জামিন নিয়েছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উচ্চ আদালতের সঙ্গে এমন প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য আসামিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘উচ্চ আদালত থেকে একাধিকবার জামিন নেওয়ার সুযোগ নেই। তথ্য গোপন রেখে জামিন নেওয়া আর এক ধরনের অপরাধ। আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়ে থাকলে পুলিশের উচিত দ্রুত গ্রেফতার করা।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তারা এখনও পলাতক। তবে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে যুবলীগ নেতার ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ
পোশাকশ্রমিককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
সর্বশেষ খবর
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর ’আত্মহত্যা’
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর ’আত্মহত্যা’
‘ভারত কিংবা অন্য কোনও দেশে এমনটি দেখিনি’
‘ভারত কিংবা অন্য কোনও দেশে এমনটি দেখিনি’
পশ্চিম তীরে ১০ যোদ্ধাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
পশ্চিম তীরে ১০ যোদ্ধাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
গরম থেকে বাঁচতে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে ভিড়
গরম থেকে বাঁচতে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে ভিড়
সর্বাধিক পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও