কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ও নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছেন তারা। বিশেষ করে শিশু ও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভোগা মানুষেরা বেশি কষ্টে আছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় পড়াশোনার সমস্যা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সবমিলে দুর্বিষহ অবস্থা তাদের।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় সাবমেরিন ক্যাবলে ক্রুটি হওয়ায় গত ২০ জুলাই থেকে নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর এবং সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এসব এলাকার প্রায় সাড়ে আট হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন।
নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব নারায়ণপুর প্রামাণিকপাড়ার বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘বিদ্যুৎ পেয়ে আমরা সোলার বিক্রি করে দিছি। এক মাসের বেশি ধরে এলাকায় বিদ্যুৎ নাই। ল্যাম্পো (কেরোসিন দিলে জ্বালানো গ্রামীণ বাতি) জ্বালায় থাকি। আমাদের বিড়ম্বনার শেষ নাই।’
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকার মানুষের ভোগান্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে ইব্রাহিম আরও বলেন, ‘সেচ পাম্প খুলে রেখে শ্যালো মেশিন দিয়ে আমনের জমিতে সেচ দিচ্ছি। বাড়িতে ফ্যান চালানো বন্ধ। গরমে শিশুদের অবস্থা খারাপ। সন্ধ্যার পর বাজারে গিয়ে জেনারেটরে মোবাইল চার্জ দিয়ে আনি। বাটন ফোনের চার্জ খরচ ২০ টাকা, স্মার্টফোন হলে ৩০ টাকা নিচ্ছেন দোকানিরা। সব জায়গায় অরাজকতা।’
নারায়ণপুরের উত্তর ঢাকদহর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমরা খুব সমস্যায় আছি। রাতে বাড়িঘর অন্ধকার থাকছে। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে পারছে না। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছি আমন আবাদ নিয়ে। ভরা মৌসুমে বৃষ্টি নেই। সেচ পাম্প বন্ধ থাকায় জমিতে পানি দিতে পারছি না। অনেকে বাধ্য হয়ে অনেক টাকা খরচ করে শ্যালো কিনেছেন। কিন্তু সবার সাধ্য নেই। কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
একই অবস্থা যাত্রাপুর ইউনিয়নের দ্বীপচর রলাকাটার চর, চর ভগবতীপুর, বড়ুয়ার চর, চিড়া খাওয়ার চর ও ঝুনকারচরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন দেওয়া এসব এলাকায় এক মাসের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। এসব এলাকার লোকজন পাম্প মোটর, ফ্রিজ ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে না পারায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এ ছাড়া বিদ্যুতের অভাবে রাতের বেলা স্কুল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
যাত্রাপুরের রলাকাটার চরের বাসিন্দা মুনির হোসেন বলেন, ‘এক মাসের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ নেই। আমাদের নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথাও নেই। বিদ্যুতের অভাবে এলাকার মানুষ চরম কষ্টে আছে। সেচ বন্ধ। গরমে ফ্যান চালাতে না পেরে দিনেরাতে কষ্টে আছে সবাই। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে পারছে না। বিড়ম্বনার শেষ নেই। আমাদের বিদ্যুৎ দিলো-ই বা কেন আবার এমন হয়রানি করছে কেন?।’ একই ভোগান্তির কথা জানালেন ঝুনকার চরের ফারুক ও ভগবতীপুরের বাসিন্দা বাবু।
এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কুড়িগ্রামের জেনারেল ম্যানেজার মো. মহিতুল ইসলাম বলেন, ‘নদীতে পানি বেশি থাকায় এতদিন লাইন মেরামতের কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে গত সোমবার থেকে আমরা ত্রুটি চিহ্নিত করার কাজ করছি। ক্রটি ধরা পড়লে দ্রুত মেরামত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ লাইনে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এখনও ত্রুটি চিহ্নিত করা যায়নি। বিদ্যুৎ ছাড়া মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, সমস্যায় আছে, বুঝতে পারছি। কাজ চলছে। শিগগির মেরামত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় জেলার চরাঞ্চলের ২১টি পয়েন্টে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ৫৫টি চরের ৫৭ গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। নদীর তলদেশ দিয়ে চালু করা এসব সরবরাহ লাইন প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে বন্ধ রাখা হয়। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। ফলে বিদ্যুৎ বিড়ম্বনায় পড়েন গ্রাহকরা।