X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১
বেগম রোকেয়া দিবস

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে মহীয়সীর বসতভিটা, ৫ বছর ধরে বন্ধ স্মৃতিকেন্দ্র

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০০আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০০

শনিবার (৯ ডিসেম্বর) নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া দিবস। প্রতিবছর এক মাস আগে থেকেই দিনটি পালন করা নিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্তাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান রংপুরের পায়রাবন্দে স্মৃতিকেন্দ্রসহ ধ্বংসপ্রাপ্ত বসতভিটায় চলে ধোয়ামোছা, রং করা আর পরিষ্কার করার কাজ। অথচ গত ৫ বছর ধরে রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ। কোনও উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।

এবারও ৭ দিনব্যাপী গ্রহণ করা হয়েছে নানান কর্মসূচি। কিন্তু রোকেয়ার স্মৃতিকে জাগরূক করে রাখা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হওয়া বসতভিটা এবং স্মৃতিকেন্দ্র সংস্কারের দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

সরেজমিন নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে ঘুরে এলাকাবাসী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো— রোকেয়ার স্মৃতিকে ধরে রাখা,  সুবিধাবঞ্চিত নারীদের পুনর্বাসন এবং রোকেয়ার জীবন আর তার রচিত গ্রন্থ নিয়ে গবেষণা করার জন্য ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে পায়রাবন্দে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর স্মৃতিকেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।

বেগম রোকেয়ার ভাস্কর্য

২০০৮ সালে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন ক্ষমতায় আসলে স্মৃতিকেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর স্মৃতিকেন্দ্রটি কার অধীনে থাকবে এ নিয়ে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় আর বাংলা একাডেমির মধ্যে দড়ি-টানাটানি (টাগ অব ওয়ার) শুরু হয়। এ ব্যাপারে স্মৃতিকেন্দ্রের তিন কর্মকর্তা-কর্মচারী হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট স্মৃতিকেন্দ্রটির দায়িত্ব বাংলা একাডেমির কাছে ন্যস্ত করা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতনসহ তাদের রাজস্ব খাতে গ্রহণ করার নির্দেশ দান করেন।

এ ব্যাপারে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও রোকেয়া গবেষক রফিকুল ইসলাম দুলাল জানান, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর ২০১৮ সালে আবারও বাংলা একাডেমি বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র, বাস্তুভিটাসহ পুরো কমপ্লেক্সের দায়িত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু ৩ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও বাংলা একাডেমি স্মৃতিকেন্দ্রটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

শুধু তাই নয়, স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিচালক আব্দুল্লা আল ফারুখকে স্মৃতিকেন্দ্র থেকে তলব করে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে অন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়। অতি সম্প্রতি ওই কর্মকর্তা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে অবসরে গেছেন বলে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।

পড়ে থাকতে থাকতে বিকল সেলাই মেশিনগুলো

এদিকে দীর্ঘ ৫ বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে ২০১৮ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আবারও চালু করা হয় স্মৃতিকেন্দ্রটি। কিন্তু একজন কর্মকর্তা একজন সহকারী লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়নি এ সময়টাতে। লাইব্রেরি আছে একটা বইও নেই। বেগম রোকেয়াকে নিয়ে গবেষণা করার কোন উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নেই। সহায়-সম্বলহীন নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণের জন্য যে মেশিনগুলো ছিল সবগুলোই বিকল হয়ে পড়েছে। গত ৫ বছর ধরে দুই কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একজন গার্ড কোনও কাজকর্ম ছাড়াই অলস দিন কাটাচ্ছেন।

এদিকে ১৫ বছর আগে নির্মিত স্মৃতিকেন্দ্রটি সংস্কারের অভাবে ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দৃষ্টিনন্দন অডিটোরিয়ামটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান জিনিসপত্র। নেই সংস্কারের কোনও উদ্যোগ।  ফলে কার্যত ৫ বছর ধরে স্মৃতিকেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

লাইব্রেরি আছে তাকে নেই বই

একই অবস্থা বেগম রোকেয়ার বাস্তুভিটা। আজ অবধি সেখানে কোনও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়নি। অযত্নে অবহেলায় বাস্তুভিটা এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বেগম রোকেয়ার পাঠক-অনুরাগীরা এসব দেখে তীব্র ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেন। আগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসলেও দুবছর ধরে তাদের আনাগোনাও একেবারে নেই বললেই চলে।

এ ব্যাপারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ ও রোকেয়া গবেষক ড. শাশ্বত ভট্টাচার্য বলেন, ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী বেগম রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেছিলেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে। ক্ষণজন্মা রোকেয়া নারী জাতির জন্য যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন তার কারণেই নারীরা এখন শিক্ষাদীক্ষা, রাজনীতি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে। পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগিতা করে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করছে।’

দুজনেই বেগম রোকেয়ার স্মৃতিকে জাগরূক করার কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শুধু ৯ ডিসেম্বর আসলেই মাতামাতি করলে চলবে না। তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য চাই বাস্তব উদ্যোগ।’ এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপই পারে সকল সমস্যার সমাধান দিতে। এমনটাই মনে করেন এলাকাবাসীসহ বিশিষ্টজনরা।

/কেএইচটি/
সম্পর্কিত
দেশ ও জাতির মুক্তির একমাত্র উপায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন: ড. কামাল হোসেন
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী?
সর্বশেষ খবর
‘দাবদাহের মধ্যে কষ্ট হলেও মানুষ ভোট দিতে আসবে’
‘দাবদাহের মধ্যে কষ্ট হলেও মানুষ ভোট দিতে আসবে’
ইরফান খান: জীবনের মোড় ঘুরেছিল ২০০ রুপির অভাবে!
প্রয়াণ দিনে স্মরণইরফান খান: জীবনের মোড় ঘুরেছিল ২০০ রুপির অভাবে!
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
ভুটানে আবার কোচ হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ
ভুটানে আবার কোচ হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড