X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের ফাঁড়িতে রায়হানকে হত্যা: আসামি নোমান প্যারিসে

তুহিনুল হক তুহিন, সিলেট
১১ অক্টোবর ২০২২, ০২:১১আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২২, ০২:১১

২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় আখালিয়ার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে। নির্যাতনে রায়হান যখন নিস্তেজ হয়ে পড়েন তখন নিয়ে যাওয়া হয় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর রায়হানের মৃত্যু গণপিটুনিতে হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় পুলিশ।

সোমবার (১০ অক্টোবর) রায়হান হত্যা মামলার দুই বছর পূর্ণ হলো। ইতোমধ্যে আলোচিত এ হত্যা মামলায় ৬৯ সাক্ষীর মধ্যে ৪৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক। এছাড়া আদালতে ১৬৪ ধরায় জবানবন্দি দেওয়া ১০ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে লাপাত্তা হয়ে যান কোম্পানীগঞ্জের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি রায়হান হত্যার ৬ নম্বর আসামি। নোমান ছাড়া ওই মামলার বাকি পাঁচ আসামি সিলেট মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। পাঁচ জনই বর্তমানে কারাগারে। রায়হান হত্যায় জড়িত না থাকলেও নোমানের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ এনেছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বর্তমানে নোমান ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

রায়হান হত্যা মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবুল ফজল চৌধুরী বলেন, রায়হানের স্ত্রী, মা, সুরতহাল প্রস্তুতকারী ও চাচাসহ ৪৪ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আলোচিত এ হত্যা মামলার সাক্ষী ৬৯ জন। হত্যা মামলায় ক্রমান্বয়ে আদালতে সাক্ষ্য দেবেন ওসমানী হাসপাতালের চিকিৎসক, তদন্ত কর্মকর্তাসহ বাকিরা। আমরা আশাবাদী, ন্যক্কারজনক এ ঘটনায় ন্যায়বিচার পাবো। ইতোমধ্যে আদালতে যতজন সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা ঘটনার যথাযথ বর্ণনা দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, রায়হান হত্যা মামলার আসামিরা কারাগারে থাকলেও এজাহারভুক্ত ৬ নম্বর আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমান ঘটনার পর থেকেই পলাতক। যতটুকু জেনেছি, তিনি প্যারিসে আছেন। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও তাকে খুঁজে পায়নি বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর তার মালামাল ক্রোকের আদেশ দিলেও ব্যক্তিগত মালামাল না থাকায় ক্রোক তামিল হয়নি।

আদালত সূত্র জানায়, রায়হানের দেহে ১১১ আঘাতের চিহ্ন উঠে আসে ফরেনসিক প্রতিবেদনে। এসব আঘাতের ৯৭টি লীলাফোল আঘাত ও ১৪টি ছিল জখমের। আঘাতগুলো লাঠির। অতিরিক্ত আঘাতের কারণে রক্তক্ষরণে রায়হানের মৃত্যু হয়। আঘাতে শরীরের মাংস থেঁতলে যায়। রগ ফেটে গিয়ে আন্তঃদেহে রক্তক্ষরণ হয়। আঘাতের সময় রায়হানের পেট খালি ছিল। পেটে কেবল এসিডিটি লিকুইড ছিল। ঘটনার চার দিন পর থেকেই পলাতক হন নোমান। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বুড়িডহর গ্রামের ইছরাইল আলীর ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়হান হত্যার পর নগরীর মজুমদারির ভাড়া বাসাতেই ছিলেন নোমান। হার্ডডিস্ক গায়েবের খবর গণমাধ্যমে আসার পর সটকে পড়েন। এরপর বেশ কিছুদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানের পর উত্তরবঙ্গ হয়ে ভারতে পাড়ি জমান। দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যেও কিছুদিন অবস্থান করেন। সেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচয় হওয়া এক বন্ধুর মাধ্যমে নাম-পরিচয় লুকিয়ে ভিন্ন নামে ভারতের আধার কার্ড, পাসপোর্টসহ জাল কাগজপত্র জোগাড় করেন। এরপর ভারত থেকে অন অ্যারাইভাল ভিসায় আরও একটি দেশে আশ্রয় নেন। পরে সেখান থেকে ইউরোপে পাড়ি জমান। বর্তমানে নোমান ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। প্যারিস শহর থেকে দূরে একটি গ্রামে পরিচিত এক অভিবাসীর বাসায় আশ্রয় নেন বলে জানা গেছে।

 

রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্য অভিযুক্তরা হলেন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুনর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), ফাঁড়ির টুইআইসি (সেকেন্ড-ইন-কমান্ড) পদে থাকা সাময়িক বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক হাসান উদ্দিন ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (পলাতক)।

পুলিশ জানায়, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেটের আখালিয়ার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরদিন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। রায়হানের মৃত্যুর পরদিন ১২ অক্টোবর তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার জনকে ওই বছরের ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত এবং তিন জনকে প্রত্যাহার করা হয়।

এরপর কনস্টেবল হারুনসহ তিন জনকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। তবে প্রধান অভিযুক্ত আকবর ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তের শেষ পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রধান আসামি আকবরকে পালাতে সহায়তা করা ও আলামত গোপন করার চেষ্টার অভিযোগে বন্দরবাজার ফাঁড়ির টুআইসি পদে থাকা সাময়িক বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক হাসান উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এরপর ২০২১ সালের ৫ মে পিবিআই আলোচিত এ মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেয়। নির্ধারিত তারিখে শুনানি শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর এক হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন আদালত। এরপর শুরু হয় বিচারকাজ।

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজ আদায়
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজ আদায়
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ
ফেসবুক স্টোরিতে লালনের গান, আটক ব্যক্তির জামিন
ফেসবুক স্টোরিতে লালনের গান, আটক ব্যক্তির জামিন
খালেদা জিয়ার দুই মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানি ২১ জুলাই
খালেদা জিয়ার দুই মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানি ২১ জুলাই
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ