সুনামগঞ্জের শাল্লায় পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় বাড়ির আঙ্গিনায় কাজ করার সময় তাকে মানিক লাল দাস (৩০) নামে একজন ধর্ষণের চেষ্টার করলে তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত। ঘটনাটি সালিশের মাধ্যমে প্রভাবশালী মাতবররা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, গ্রামের তিন পাড়ার মাতবররা জড়ো হয়ে ভবিষ্যতে এসব না করার জন্য অভিযুক্ত যুবককে বলে দেন। মাতবরদের সামাজিক সালিশের রায় ভুক্তভোগী পরিবারের ও প্রতিবাদী মানুষ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
গ্রাম্য সালিশের কথা স্বীকার করে রণজিৎ সরকার বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য দ্বিজেন্দ্রসহ অনেকেই সালিশে উপস্থিত ছিলেন। তবে সেখানে বিষয়টি সমাধান হয়নি।
স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনন্ত লাল দাস জানান, ঘটনাটি সালিশের মাধ্যমে সামাজিকভাবে শেষ, এটা তিনি শুনেছেন। তবে এ ধরনের ঘটনা সামাজিক সালিশে শেষ হলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
বিকাশ দাস জানান, বিষয়টি নিয়ে গ্রামে সালিশ বৈঠক হয়েছে। অভিযুক্ত মানিক লাল দাসকে সালিশি শাসন করে এ ধরনের ঘটনা না করার কথা বলেন উপস্থিত সালিশি ব্যক্তিরা। যদিও এরকম ঘটনা সালিশে শেষ করার কোনও অধিকার নেই গ্রামের মাতবরদের। তারপরও তারা সালিশ করে আইন অমান্য করেছেন। আগে এরকম অনেক ঘটনা সামাজিক সালিশে শেষ করার নজির আছে। এ জন্য অপরাধীদের সাহস দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্কুল ছাত্রীর মা জানান, এ সময় তিনি রান্নাবান্নার জন্য লাকড়ির বস্তা নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে দেখেন, বাড়ির আঙ্গিনায় কর্মরত অবস্থায় গ্রামের অভিযুক্ত প্রভাবশালী ধনাঢ্য পরিবারের যুবক মালিক লাল দাস তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করছে। এ সময় তার হাত থেকে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করে। ঘটনাস্থলে মায়ের উপস্থিতি টের পেয়ে মানিক পালিয়ে যায়। এ ঘটনা গ্রামে জানাজানি হলে সমাজপতিরা বিষয়টি গোপন রাখতে নির্দেশ দেন ও সামাজিক সালিশে বিচারের কথা বলেন। প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য সমাজপতিদের ভয়ে তিনি তাদের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য হন। কিন্তু সমাজপতিরা সালিশে বিচারের নামে তাকে মৃদু শাসন করে সমাধান করে দেন। যা তিনি ও গ্রামের প্রতিবাদী মানুষ মানতে পারেননি। সমাজপতিদের বিচার না মানায় তিনি প্রভাবশালী সালিশকারী পঞ্চায়েতের চাপ ও ভীতিকর অবস্থায় রয়েছেন।
এ বিষয়ে শাল্লা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের ঘটনা নিয়ে কোনও সালিশ হতে পারে না। এ ধরনের ঘটনায় সামাজিক সালিশ আইন বিরোধী কাজ। পুলিশ অভিযুক্ত মানিক ও সালিশকারীদের ধরতে শুক্রবার রাত থেকে অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ বলেন, অভিযুক্ত মানিক ও সালিশকারীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। এ ধরনের ঘটনার সামাজিক সালিশে বিচার করা আইনের ব্যত্যয়।
গ্রামের নিরীহ লোকজন জানান, অভিযুক্ত যুবক মানিক লাল দাস একই রকম আরও তিনটি ঘটনা করেছে। কিন্তু প্রভাবশালী ধনী পরিবারের সন্তান ও গ্রামে প্রভাব প্রতিপত্তির জোরে মাতবরা সামাজিক সালিশ ও ভুক্তভোগীর পরিবারকে টাকা-পয়সা দিয়ে সমাধান করে দেয়। তাই ইজ্জত রক্ষায় পেশিশক্তি ও অর্থশক্তির প্রভাবে মামলা করেনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। গ্রামের সাধারণ মানুষ মানিক ও সালিশকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।