X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভিকারুননিসায় কোচিং বন্ধে ‘বুমেরাং’ শঙ্কায় অভিভাবকরা

উদিসা ইসলাম
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:০০আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:০০

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের প্রাইভেট কোচিং বন্ধের নির্দেশনা নিতান্তই আইওয়াশ কিনা, এই সিদ্ধান্ত ‘বুমেরাং’ হয়ে তাদের (শিক্ষার্থীদের) জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে যাবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন অভিভাবকরা। একই সঙ্গে কোচিং বন্ধের সিদ্ধান্তের পর অনেক অভিভাবক ‘আন্দোলনকে অভিযুক্ত’ করছেন।

এ পরিস্থিতিতে ভিকটিমের পক্ষে ন্যায়বিচারের দাবিতে যারা আন্দোলন করছেন, তারা মনে করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ এ মুহূর্তে এসে কোচিং বন্ধ করার মাধ্যমে একটা অদৃশ্য খেলা খেলেছে। ফলে অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা শুরু হলে তারা মূল ইস্যু থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। কোচিং বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষাবিদ, অধিকারকর্মীসহ বিশ্লেষকরা খুশি হলেও যৌন হয়রানির প্রতিবাদে যারা রাস্তায় নেমেছিল, তারা এটাকে ‘বুমেরাং সিদ্ধান্ত’ হিসেবে দেখছেন।

প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একদল বলছেন, এটা আরও আগে বন্ধ করতে হতো। আরেক দল মনে করছেন, এই মুহূর্তে অভিভাবকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে আবারও সব ‘নরমাল’ হয়ে যাবে। যদিও ভিকটিম এখনও ট্রমার মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে তার মা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি কিংবা আমার মেয়ে ‘নরমাল’ হওয়া কি এত সহজ।’’

সোমবার সন্ধ্যায় এক ছাত্রীর মা রাজধানীর একটি থানায় তার মেয়ের ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়, বাদীর মেয়েকে পিলখানা রোডের একটি বাসায় শিক্ষক মুরাদ হোসেন পরিচালিত ব্যক্তিগত কোচিং সেন্টারে ভর্তি করা হয়। কোচিংয়ে পড়ানোর সময় মুরাদ হোসেন ছাত্রীদের নানাভাবে যৌন হয়রানি করেছেন। সেই বিবরণ মামলার অভিযোগে আছে। মামলার ভিত্তিতে শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে গ্রেফতার করে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এরপরই মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী জানান, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কোনও শিক্ষক প্রাইভেট কোচিং করাতে পারবেন না। এ জন্য অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের কোচিং ব্যবসা নিষিদ্ধ করে ২০১২ সালে ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা’ জারি করে সরকার। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, ‘কোনও শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুসারে, কোনও শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত হতে পারেন না। নিজে কোচিং সেন্টারের মালিক হতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে পড়তে উৎসাহিত, উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করতেও পারেন না।’

বিষয়টি সবাই জানলেও এই নিয়ম ভেঙেই ভিকারুননিসার শিক্ষকদের কোচিং অব্যাহত ছিল। দিবা শাখার এক অভিভাবক বলেন, দরকার না হলেও এখানে শিক্ষকদের কোচিংয়ে দিতে হয়। কেননা, কোচিং না করালে শিক্ষকের রোষানলে পড়তে হয় বলে শিক্ষার্থীরা অনুভব করেন। এখন যে কোচিং বন্ধ হলো, সেটা কতদিন অব্যাহত থাকে আমাদের সন্দেহ আছে। কয়েক দিন গেলে বেশিরভাগ অভিভাবকই কোচিং বন্ধ হতে দেবে না। শিক্ষকরাই অভিভাবকদের একটি গোষ্ঠীকে দিয়ে কোচিং খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ালেও অবাক হবো না।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সুজন মনে করেন, কর্তৃপক্ষ এখন যা করছে তার পুরোটা আইওয়াশ। তিনি বলেন, ‘কোচিং দিয়ে জিম্মি করে রাখা হয় শিক্ষার্থীদের। এটা কি জানতো না কর্তৃপক্ষ? এখন যে তারা তড়িঘড়ি করে বন্ধ করলো, সেটা যদি ধরে রাখতে পারে, তবে সাধুবাদ জানানো উচিত। কিন্তু ধরে রাখতে পারবে না। যে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে, নানাভাবে এটা আবার চালুর চেষ্টা হবে। যেহেতু সব ঘটনা কোচিংয়ে হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে, ফলে তারা কোচিং বন্ধ করে দেওয়াটাই এ মুহূর্তে সমাধান বলে মনে করছে। আমাদের অভিভাবকদের বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) মানববন্ধন আছে। আমরা বসে আমাদের করণীয় ঠিক করবো।’

যদিও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী দাবি করছেন, যেহেতু সব যৌন হয়রানির অভিযোগ কোচিংকেন্দ্রিক—সেজন্য এটা বন্ধ করা প্রথম কাজ হিসেবে দেখছেন তারা। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এটা বন্ধ না করতাম, তাহলে কোনও সমাধান করা যেতো না। আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের বিচার চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভিকারুননিসার আজিমপুর দিবা শাখায় সিনিয়র শিক্ষক মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক। ওই অভিযোগের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের সত্যতা পায়।

তবে তদন্ত কমিটি ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করার সুপারিশ না করে তাকে মূল শাখায় অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান তার কার্যালয়ে মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারকে সংযুক্ত করেন। এদিকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এ পর্যায়ে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। তার আগে সোমবার রাতে কলাবাগান থানা পুলিশ মুরাদকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে।

আরও পড়ুন:

ভিকারুননিসার শিক্ষক মুরাদ রিমান্ডে

ভিকারুননিসার শিক্ষক মুরাদ গ্রেফতার

গ্রেফতারের পর সাময়িক বরখাস্ত ভিকারুননিসার সেই শিক্ষক

ভিকারুননিসায় যৌন হয়রানি: অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
এপি'র সাংবাদিককে গ্রেফতার করলো রাশিয়া
গুলশানে চোর সন্দেহে পেটানোর পর যুবকের মৃত্যু, একজন গ্রেফতার
যাত্রাবাড়ীতে চাঁদা আদায়ের সময় গ্রেফতার ১৫
সর্বশেষ খবর
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ