ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) একদল শিক্ষার্থী ৫ দফা দাবিতে কয়েকজন শিক্ষার্থীর আমরণ অনশনে নেমেছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এক প্রতিনিধির হস্তক্ষেপে তাদের কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ সমাপ্তি ঘটেছে।
ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি আঁকার কারণে দুই শিক্ষার্থীকে ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের সতর্কবার্তা’ দেওয়ায় আন্দোলনকারীরা ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমানের তাৎক্ষণিক পদত্যাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছিল। আন্দোলনকারীদের এই কঠোর অবস্থান ইউল্যাবের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের দিক থেকে ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়ে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসের ভেতরে বিনা নোটিশে জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু গ্রাফিতি আঁকার কারণে ২৯ ডিসেম্বর দুই শিক্ষার্থীকে শাস্তিমূলক সতর্কতা দেওয়া হলে ঘটনাটির সূত্রপাত হয়। তবে পরবর্তী সময়ে শিক্ষকদের একাংশের আবেদন এবং শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে ইউল্যাব অবিলম্বে সেই সতর্কবার্তা প্রত্যাহার করে। একইসঙ্গে এও নিশ্চিত করা হয় যে, শিক্ষার্থীদের আঁকা এই গ্রাফিতিগুলো বহাল থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এমন ঘোষণা দেওয়ার পরও গত ৩১ ডিসেম্বর প্রায় পাঁচ জন বহিরাগত ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আক্রমণমূলক আপত্তিকর গ্রাফিতি অঙ্কন করে। পরের দিন ১ জানুয়ারি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের একটি ছোট দল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট অবরোধ করে এবং গভীর রাত পর্যন্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের ক্যাম্পাস ত্যাগে বাধা দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানায়। জিম্মি অবস্থা তৈরি হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেওয়া হয়নি। তা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধৈর্যের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ১ জানুয়ারি ইউল্যাবের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে একটি সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করেন। তারা আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি তীব্র বিরোধিতা জানান।
আন্দোলনকারীদের দাবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি জরিপ চালায় শিক্ষার্থীরা। সেই জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অধ্যাপক ইমরান রহমানকে উপাচার্য হিসেবে অব্যাহত রাখতে চান।
এদিকে অনশন কর্মসূচি ঘোষণার পর সেদিন বিকালেই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম মধ্যস্থতার জন্য তার একজন প্রতিনিধিকে পাঠান। উপদেষ্টার প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সংগঠক আবদুল হান্নান মাসুদ ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে একটি চুক্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। সেই চুক্তি অনুযায়ী, ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ইউজিসি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি বিষয়ক তদন্তের স্বার্থে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে এবং কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্য ইমরান রহমান তার দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত থাকবেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইউল্যাব সবসময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে এবং সেইসঙ্গে কারও শিক্ষাজীবনে অপ্রয়োজনীয় বিঘ্ন ঘটুক তা কখনই ইউল্যাবের কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি মতামতের বৈচিত্র্য উৎসাহিত করে, যা পারস্পরিক সম্মানের সঙ্গে প্রকাশ ও বিনিময় হয়। বিশ্ববিদ্যালয় তার নীতিমালা এবং মূল্যবোধ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সমর্থন অব্যাহত রাখবে।